কনস্টেবল নিয়োগে স্বচ্ছতায় তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তায় প্রধানমন্ত্রী, টিমওয়ার্কে সফল আইজিপি

প্রকাশিতঃ 9:13 am | July 12, 2019

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :  

পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ নিয়ে এতোদিন কথা উঠলেই শ্লেষ ও বিদ্রুপাত্মক উপমার কোন শেষ ছিল না। প্রতিবারই দায়িত্বশীলদের স্বপ্রণোদিত অন্ধত্ব ও উদাসীনতায় এ কনস্টেবল নিয়োগে দুর্নীতির কলঙ্ক কালিমা লেপে যাওয়ায় বঞ্চিত হতে হয়েছে যোগ্য ও মেধাবীদের। ফলে এ পরিস্থিতি উত্তরণের পাশাপাশি নীতিহীনতার মূলোৎপাটনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আরও পড়ুন: কনস্টেবল পদে মেধাবীদের জয়জয়কার, প্রধানমন্ত্রীকে স্বচ্ছ নিয়োগ উপহার আইজিপির

বঙ্গবন্ধু কন্যার কঠোর নির্দেশে গতবারের মতো এবারো পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগকে ঘিরে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা দুর্নীতির লাগাম শক্ত হাতে টেনে ধরেন বাহিনীর প্রধান ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার)। স্বয়ং পুলিশের আইজির কঠোর তৎপরতায় সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত প্রক্রিয়ায় গত ২২ জুন থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) হিসেবে মনোনীত হয়েছেন ৯ হাজার ৬৮০ জন কনস্টেবল।

এবারের নজিরবিহীন পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের খবর এখন দেশের মানুষের মুখে মুখে। অর্থ বা তদবির নয়, মেধা ও যোগ্যতার মাপকাঠিতে কে কতটুকু স্বচ্ছ ও নির্ভেজাল নিয়োগ উপহার দিতে পারেন এ নিয়ে তুমুল প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারদের (এসপি) মধ্যে।

আরও পড়ুন: আইজিপির অ্যাকশনে ভেস্তে যাচ্ছে তদবিরবাজদের মিশন

জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে দুর্নীতি বিরোধী মূল্যবোধ জেগে উঠায় বন্ধ হয়ে যায় কয়েকশ’ কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য। আর দুর্নীতি দমনে সময়োপযোগী এমন পদক্ষেপে তুঙ্গস্পর্শী, বিরল ও অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। উজ্জ্বল হয়েছে সরকারের ভাবমূর্তিও।

মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ও শ্বাশত চেতনায় জ্ঞানালোকিত এ প্রজন্মের দারিদ্র্য জর্জর জীবনে নতুন স্বপ্নযাত্রায় দু:খের গভীর-গহন থেকে আবিষ্কার হয়েছে অনাবিল উচ্ছ্বাস! মূলত টিমওয়ার্কের মাধ্যমেই কনস্টেবল নিয়োগে পুলিশের চিরায়ত ভাবমূর্তি সংকটই কাটিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করতে সক্ষম হয়েছেন পুলিশ প্রধান ড.জাবেদ পাটোয়ারী।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, পুলিশ প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর নিজের সময়ে দ্বিতীয়বারের মতো পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখতে শুরু থেকেই কঠোর ছিলেন ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। গত ১২ জুন পুলিশ সদর দপ্তরের ত্রৈমাসিক অপরাধ সভায় এ বিষয়ে ডিআইজি ও এসপিদের কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেন।  

আরও পড়ুন: পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে কঠোর আইজিপি, থাকছে নিজস্ব গোয়েন্দা টিম

নিয়োগ শুরুর দুই দিন আগে আবারো ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রত্যেক জেলার এসপিদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। নির্দেশনার মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে স্রোতের প্রতিকূলের এ যুদ্ধ জয়ের জন্য নানা কৌশল ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেন সৎ ও ঝানু পুলিশের এ সর্বোচ্চ কর্মকর্তা।

নিয়োগের শুরুতেই পুলিশ সদর দফতর থেকে ৬৪ জেলায় একটি করে উচ্চপর্যায়ের টিম পাঠানো হয়। ছিল পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট ও রেঞ্জ ডিআইজির নজরদারি কমিটি।

পুলিশ সদরদপ্তর থেকে একজন পুলিশ সুপার (এসপি) ও একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সমন্বয়ে বিশেষ টিম ও সদর দফতরের মিডিয়া শাখার মনিটরিং এবং সংশ্লিষ্ট জেলায় গঠন করা কমিটিও স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া উপহারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। সার্বক্ষণিক মনিটরিং করেন অতিরিক্ত আইজিপি (এইচআরএম), ডিআইজি (এইচআরএম) ও এআইজি (আরএন্ডসিপি-২)।

আরও পড়ুন: স্বচ্ছ ও মেধানির্ভর নিয়োগ চান আইজিপি, আঁটঘাট বেঁধে নেমেছেন এসপিরাও

জানা যায়, সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে সব সময়ই পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি বছর পুলিশ সপ্তাহে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন পুলিশ প্রধানকে। কনস্টেবল নিয়োগ শুরুর আগেও পুলিশ প্রধানকে ডেকে স্বচ্ছতা বজায় রাখার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

মাদকের বিরুদ্ধে ঘোষণা দিয়ে আগেই অ্যাকশন শুরু করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারী। জঙ্গি নির্মূলের মতো মাদক ব্যবসায়ীদেরও সমূলে উৎপাটনের লক্ষে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে তাঁর নেতৃত্বাধীন পুলিশ।

এবার দুর্নীতির বিরুদ্ধেও দিনবদলের পালায় পুলিশকে তিনি ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখান। প্রধানমন্ত্রীর আপত্য স্নেহ আর সততার শক্তিতেই পুলিশ প্রধান এ স্বপ্ন সফলভাবে বাস্তবায়নও করেন।

এবার তাঁর নির্দেশেই জেলায় জেলায় এসপিরা পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে বাড়তি কোন টাকার প্রয়োজন পড়ে না, দালালদের কাছে প্রতারিত হবেন না এমন ব্যাপক ভিত্তিক প্রচারণা চালায়। এতে উৎসাহিত হয়েই গতবারের চেয়ে এবার চাকরি প্রার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ৫৫ হাজার ৪০৩ জন।

একই সূত্র জানায়, শুধু তাই নয়, এবার প্রতিটি জেলাতেই পুলিশ সুপাররা (এসপি) আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে চাকরির জন্য মনোনীত প্রার্থীদের মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করেছেন।

দারিদ্র্যের অন্ধকার ঘর থেকে উঠা আসা আলোকিত এসব মেধাবী তরুণ-তরুণীরা নিজেরাও গর্বের সঙ্গেই উচ্চারণ করেছেন বিনা পয়সায় পুলিশে চাকরি পাওয়ার বিষয়টি।

তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন তাদের সৌভাগ্যবান অভিভাবকরাও। সবার চোখ থেকেই ঝরেছে আনন্দাশ্রু। চাকরি জীবনে নিজেরা ঘুষ বর্জনের যেমন অঙ্গীকার করেছেন তেমনি দেশের সেবায় জীবন উৎসর্গ করারও কথা বলেছেন।

পুলিশের প্রথা বিরোধী এমন দৃষ্টান্ত দেশের গণমাধ্যমগুলোতেও গুরুত্ব দিয়েই প্রকাশিত হয়েছে। নিত্যদিনই পজেটিভ শিরোনাম হয়েছে পুলিশ।

সূত্র মতে, পুলিশের ভাবমূর্তি উন্নয়নের সূচনা শুরু হয়েছে আইজিপি ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর হাত ধরেই। পুলিশ প্রধানের গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বেই ক্রমশ মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে পুলিশ। এবারের পুলিশ কনস্টেবল পদে দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ নিয়োগ কার্যত পুলিশের অগ্রগমনেরই অঙ্গীকারধ্বনি।

এ আইজিপির নেতৃত্বেই বাংলাদেশ পুলিশ সবক্ষেত্রেই পুরোপুরি দুর্নীতির কলঙ্কমুক্ত হতে পারবে এমন বিশ্বাসও অর্জিত হয়েছে জনমনে।  

একই সূত্র বলছে, মানুষকে বিপদগ্রস্ত বা জিম্মি করে অর্থ উপার্জনের জঘন্য মানসিকতার অধিকারী পুলিশকে আর দেখতে চান না আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী। ব্যক্তিস্বার্থ, লোভ বা বৈষয়িক চিন্তাকে জলাঞ্জলী দিয়ে তিনি নেতৃত্বে শতভাগ সততার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বাংলাদেশ পুলিশকে দুর্নীতির কলঙ্ক-কালিমা মুক্ত করতে ধাপে ধাপে প্রয়াস নিয়েছেন।

এক্ষেত্রে তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নীতি ও আদর্শে অবিচল পর্বতের মতোন। বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসের অন্তর্মূলে অনন্য ও অতুলনীয় কান্ডারী হিসেবে সততার প্রতীক হয়েই থাকবেন পুলিশের এ আইজি মত সদর দপ্তরের উচ্চ ও মধ্যম সারির একাধিক কর্মকর্তার।  

কী বলছেন আইজিপি?
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী রীতিমতো ইতিহাস সৃষ্টি করা এবারের পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে এমন কৃতিত্বের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। কালের আলোকে তিনি বলেন, কনস্টেবল নিয়োগে শতভাগ স্বচ্ছতা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

এক্ষেত্রে দেশের সফল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরও সার্বিক সহায়তা ছিল। সব জেলার জনপ্রতিনিধি ও এসপিদের প্রগাঢ় সহায়তার ফলেই বিতর্কমুক্ত একটি নিয়োগ উপহার দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

ইতিবাচক প্রতিযোগিতায় এসপিরা
৬৪ জেলায় নিজেদের মধ্যে এক প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হন জেলা পুলিশ সুপাররা (এসপি)। তুমুল এ প্রতিযোগিতায় যেন কেউ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান। প্রত্যেকেই নিজেদের সততা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির ফলে চাকরি নিশ্চিত হয়েছে সমাজের অবহেলিত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মেধাবী সন্তানদের। এ যেন বদলে যাওয়া এক পুলিশেরই প্রতিচ্ছবি।

যশোরের কেশবপুরের গৌরিঘোনা গ্রামের হাবিবুল বাশার সুমনের কথাই ধরা যাক না। খুলনা বিএল কলেজে অনার্স পড়ুয়া এ শিক্ষার্থী নিজের লেখাপড়া ও জীবিকার তাগিদে মাসের ১৫ দিন রাজমিস্ত্রির জোগালের কাজ করতেন। এখন পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়েছেন। আবেগে আপ্লুত সুমন বলেন, মাত্র ১০৩ টাকা খরচে পুলিশে চাকরি পেয়েছি। আর বাড়তি কোন টাকা লাগেনি। স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ হয়েছে বলেই চাকরি হয়েছে।

অভয়নগরের মুসলিমা খাতুন, কেশবপুরের মরিয়ম, মণিরামপুরের রুমা ও বাঘারপাড়ার সাইফুর রহমানসহ প্রায় সবাই একবাক্যে বলেছেন, ‘আমারা ভাবতেই পারিনি ঘুষ ছাড়াই পুলিশে চাকরি হয়।’

জানতে চাইলে যশোর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মঈনুল হক কালের আলোকে বলেন, ‘মাননীয় পুলিশ প্রধানের কঠোর নির্দেশনায় শতভাগ স্বচ্ছতার সাথে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে যশোর জেলায় ১০৩ টাকায় ১৯৩ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই কৃষক, দিনমজুর, শ্রমিক, ভ্যানচালক, নরসুন্দরসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর সন্তান। ইতোপূর্বে নারায়নগঞ্জেও আমি এভাবে পুলিশে নিয়োগ দিয়েছি।’  

রিকশা চালকের মেয়ে সুমি ও এতিম কাজলের মতোই ময়মনসিংহে মোট ২৫৭ জন তরুণ-তরুণী মেধা ও যোগ্যতায় মাত্র ১০০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেয়েছেন। ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ আবিদ হোসেন কালের আলোকে জানান, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে এ পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ নজিরবিহীন ঘটনা।

মাননীয় প্রধামন্ত্রীর নির্দেশে আইজিপি মহোদয় শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে এ নিয়োগ সম্পন্ন করার জন্য কড়া নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আমরা পেশাদারিত্ব, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি।’

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার দক্ষিণ নাগরপুর এলাকার কৃষক পরিবারের বন্যা আক্তার। অভাবের সংসারের হাল ধরার মতো নেই কেউ। বন্যার স্বপ্ন ছিল পুলিশে চাকরির। কিন্তু অভাবের সংসারে ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়ার মতো সেই সামর্থ্য ছিল না তাঁর। ঘুষবিহীন পুলিশী চাকরির প্রচারণা দেখে স্বপ্নপূরণের আবেদন করেই বাজিমাত। চাকরি হয়েছে। বন্যার মতোই মাত্র ১০৩ টাকায় এভাবেই চাকরি হয়েছে আরো ১৩৫ জনের।

পুলিশ কীভাবে এমন অসম্ভবকে সম্ভব করেছে জানতে চাইলে টাঙ্গাইল জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) সঞ্চিত কুমার রায় কালের আলোকে বলেন, অনেক চাপ ছিল। কিন্তু কোন চাপের কাছে আমরা মাথানত করিনি। মাননীয় আইজিপি মহোদয় আমাদের সাহস জুগিয়েছেন। ফলে স্বচ্ছতা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতেই প্রকৃত মেধাবীরাই চাকরি পেয়েছে।’

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাসিন্দা ইউসুফ আলী। বাবা মোখলেছ দিনমজুর। বিনা পয়সায় পুলিশে চাকরির প্রচারণায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে আবেদন করেন। অবশেষে তিনি পেয়েছেন চাকরির নামের ‘সোনার হরিণ’। উচ্ছ্বসিত ইউসুফ আলী কালের আলোকে বলেন, ‘আমার একটা চাকরির খুব প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ঘুষ ছাড়া কোথায় চাকরি পাবো, এমন চিন্তা মাথা থেকে দূর হচ্ছিল না। ব্যাংক ড্রাফট ও ফরমের ১০৩ টাকা খরচায় নিজের যোগ্যতাতেই চাকরি পেয়েছি।’

ঘুষ বা তদবির ছাড়াই সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে এ জেলায় ২৩৯ জনকে কনস্টেবল পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নন্দীগ্রাম উপজেলার রাবেয়া, শিবগঞ্জ উপজেলার শামীম, এরশাদুল, দুপচাঁচিয়া উপজেলার রিফাহ হোসেন, বগুড়া সদর উপজেলার বিথি খাতুনসহ অনেকেই ঘুষ ছাড়াই চাকরি পেয়েছেন। গতবারও একই রকম চমক তৈরি করেছিলেন বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আলী আশরাফ ভূঞা।

এ বিষয়ে কালের আলোকে এ এসপি বলেন, ‘মাননীয় আইজিপির কঠোর নির্দেশনায় কনস্টেবল নিয়োগে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম প্রতিরোধে নিয়োগ পরীক্ষার আগে থেকে আমরা সতর্ক ছিলাম। দালালরা যাতে প্রার্থীদের প্রতারিত করতে না পারে, সেজন্য গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করেছে। ফলে প্রত্যেকেই নিজ নিজ যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছে।’

কোন লেনদেন ছাড়াই মেধার দৌলতেই ৭৫ জন তরুণ-তরুণীকে বেছে নিয়েছে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম তানভীর আরাফাত কালের আলোকে বলেন, ‘আমার চ্যালেঞ্জ ছিল ঘুষ ছাড়া নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা সফল হয়েছি। মাননীয় পুলিশ প্রধানের নির্দেশনাই আমাদের সফলতা অর্জনে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে।’

নাটোর জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল্লাহ আল মামুন কালের আলোকে বলেন, ‘মাননীয় আইজিপি মহোদয়ের কঠোর নির্দেশনা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। আমার জেলায় নিয়োগ পাওয়া ৬৯ জনের বেশিরভাগই দরিদ্র পরিবারের। যোগ্য হিসেবেই তাঁরা চাকরি পেয়েছে।’

নজিরবিহীন পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নিয়েছে বলে মনে করেন নড়াইল জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। কালের আলোকে তিনি বলেন, ‘মাননীয় আইজিপি’র দক্ষ ও গতিশীল নেতৃত্বের মাধ্যমে পুলিশকে বদলে দিচ্ছেন। কোন রকম টাকা ছাড়াই নিয়োগ পাওয়া পুলিশ সদস্যরা ঘুষ, দুর্নীতির ঊর্ধ্বে থেকেই দেশের জন্যই নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করবেন।’  

অ্যাকশন শুরু টাঙ্গাইলে, সর্বোচ্চ মামলা বগুড়ায়
পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ঘুষ লেনদেনের চেষ্টাসহ নানা অভিযোগে টাঙ্গাইল, গাজীপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, বগুড়া, খুলনা, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, নড়াইল, কুষ্টিয়া, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় দায়ের করা ১৮টি মামলায় ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে বগুড়া জেলায় ৫ টি মামলা করা হয়। খুলনা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে হয়েছে দু’টি করে মামলা। অন্য জেলায় একটি করে।

কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে এবারই প্রথমবারের বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য ও পুলিশের বিভিন্ন কার্যালয়ে কর্মরত সিভিল স্টাফদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টিও নজিরবিহীন। বিশেষ করে গত ২১ জুন টাঙ্গাইলে কনস্টেবল পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১০ লাখ টাকা লেনদেনের অভিযোগে পুলিশের এসআই মোহাম্মদ আলী এবং কথিত সাংবাদিকের স্ত্রী শাহানাতুল আরেফিন সুমিকে গ্রেফতারের মধ্যে দিয়ে কনস্টেবল নিয়োগে দুর্নীতি ঠেকাতে প্রথম পুলিশী অ্যাকশন দৃশ্যমান হয়।

রেহাই পাননি এসপিও, বদলি ও প্রত্যাহার শতাধিক
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিয়োগ-বাণিজ্যের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের শতাধিক পুলিশ সদস্যের সংশ্নিষ্টতার অভিযোগ উঠে। তাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে বদলি ও প্রত্যাহারও করা হয়। প্রাথমিক তদন্তের পর অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হবে।

মাদারীপুরে রেহাই পাননি স্বয়ং কনস্টেবল নিয়োগে ‘নিয়োগকর্তা’ পুলিশ সুপার (এসপি) সুব্রত কুমার হালদারও। গত ২৪ জুন তাঁর দেহরক্ষী কনস্টেবল নুরুজ্জামান সুমনকে ঘুষ গ্রহণের নগদ টাকাসহ আটক করে পুলিশ সদর দপ্তরের বিশেষ টিম।

এছাড়া পুলিশ লাইনের মেস ম্যানেজার জাহিদ হোসেন, টিএসআই গোলাম রহমান ও পুলিশ হাসপাতালের স্বাস্থ্য সহকারী পিয়াস বালার কাছ থেকেও ঘুষের ৭২ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। এসব ঘটনায় ওই এসপি’র সম্পৃক্ততার প্রমাণ পায় কনস্টেবল নিয়োগে নজরদারি চালানো পুলিশ সদর দপ্তরের বিশেষ টিম।

কালের আলো/এইকেআ/এমএএএমকে