‘ভোটের রাজা’ মির্জা আজম!
প্রকাশিতঃ 11:20 pm | July 16, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
ভোট রাজনীতিতে কোন হার নেই আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য মির্জা আজমের। ৬ বার জামালপুর-৩ (মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ভোট রাজনীতিতে সফল এ নেতাকে এবার দেওয়া হয়েছে নতুন উপাধি। খোদ দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা তাকে ভূষিত করেছেন ‘ভোটের রাজা’ উপাধিতে।
আরও পড়ুন: আ.লীগের তৃণমূলে ঐক্য ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার নির্দেশ কেন্দ্রীয় নেতাদের
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) নগরীর অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে আওয়ামী লীগের ময়মনসিংহ বিভাগের বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় তাকে এ উপাধি দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। পাশাপাশি মির্জা আজম আমৃত্যু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন বলে আশাবাদী উচ্চারণ করেন দলটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাক এমপি।
আরও পড়ুন: দীপু মনির নেতৃত্বের ক্যারিশমা
নিজের বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, মির্জা আজম ভোটে দাঁড়ালেই পাস। তিনি হলেন ভোটের রাজা। এই বয়সে ৬ বার এমপি হয়েছেন। আরো কতোবার যে এমপি হবেন তা আল্লাহই জানেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেন, মির্জা আজম যতদিন বেঁচে থাকবেন তিনি আমৃত্যু এমপি হবেন। আগামী দিনের বাংলাদেশে তিনি নেতৃত্ব দেবেন।
দলটির গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিনিধি সভায় নিজের বক্তৃতায় তৃণমূলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেন দলটির কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য মির্জা আজম এমপি। তিনি বলেন, ময়মনসিংহ বিভাগে আওয়ামী লীগের ২৩ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে মাত্র ১০ জন এখানে উপস্থিত হয়েছেন। একটি জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আসেননি। এ সভা অনেক প্রত্যাশিত। আসলে আমাদের মাঝে একটি স্থিরতা চলে এসেছে। ১১ বছর তিন টার্ম ক্ষমতায় আমরা।
শেখ হাসিনা তিন টার্ম ক্ষমতায় থেকে বাংলাদেশের চেহারাই বদলে দিয়েছেন জানিয়ে মির্জা আজম এমপি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম। সবার মাঝে হতাশা চলে আসল। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা মেকানিজমে একক নেতৃত্বে আমরা ক্ষমতায় আসি।

২০১৮ সালের আরেকটি নির্বাচনে অনেক ভীতি ও আশঙ্কা ছিল। সবকিছু ছাপিয়ে শেখ হাসিনা আবারো ক্ষমতায় এনেছেন দলকে। অথচ আমরা ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল কেমন ছিলাম সেটি ভুলে গেছি। যার কারণে আমাদের মাঝে অনেক স্থিরতা এসেছে। আমরা ভাবছি সারাজীবন এভাবেই ক্ষমতায় থাকবো। বিরোধী দলে আর কোনদিন যেতে হবে না। হয়তো আর যেতে হবে না।
দলীয় সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সব এমপি গোল্ডেন জিপিএ। সবাই লক্ষ লক্ষ ভোট পেয়েছেন। আর বিরোধী দল ৫ থেকে ৭ হাজার। কোন প্রতিদ্বন্দ্বীতা নেই। সবাই আমাদের অবস্থান সম্পর্কে টের পাচ্ছি না। জননেত্রী শেখ হাসিনার যে নির্বাচনী মেকানিজম প্রচেষ্টার কারণে আসল অবস্থা আমরা নেতারা নিজেরাই বুঝতে পারছি না।
আমাদের ভাবতে হবে ভবিষ্যতে একটি প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ নির্বাচন হবে এবং সেই নির্বাচনে আমরা বিজয়ী হবো। আজকে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা যে উন্নয়ন করেছেন সেই উন্নয়নের কারণে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা তিনি সহজ করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের কমপক্ষে ৩৪ শতাংশ ভোটার শেখ হাসিনার সরাসরি কোন না কোন অনুদানে তাঁরা সদস্য।
আমরা যারা দলের দায়িত্বে আছি, আমরা যারা জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছি আজকে নৌকা মার্কা ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদে নৌকা মার্কা প্রতীক দেওয়া হয়েছে। আজ সেই নৌকা প্রতীক নিয়ে যারা নির্বাচিত হচ্ছেন তাঁরা নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে সচেতন হন না।
তিনি বলেন, যেহেতু বিরোধী দল নাই, তাঁই আমরা নিজেরা নিজেদের মধ্যে হানাহানি, মারামারি প্রতিদ্বন্দ্বীতা, প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত হয়ে গেছি। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চিত্রটা কী? উপজেলা পরিষদে ৪০ শতাংশ সিটে বিদ্রোহীরা জয়ী হয়েছে। এটা আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং অনৈক্যের চিত্র ফুটে উঠেছে। আমাদের এ অনৈক্য দূর করতে হবে।

প্রত্যেকটি জেলায় দিনব্যাপী একটি বর্ধিত সভা করতে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনির কাছে দাবি জানিয়ে মির্জা আজম বলেন, ময়মনসিংহ বিভাগে সবচেয়ে কম জটিল জেলা জামালপুর। আমরা যখন খোলামেলা আলোচনা করবো সারাদিনব্যাপী করতে হবে। সেই জায়গায় নিজেদের মধ্যে থেকে অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে। এ বক্তব্য শুনার মাধ্যমে ৮০ শতাংশ সমস্যা নিরসন করা সম্ভব।
নিজের উদাহরণ টেনে যুবলীগের সাবেক সফল সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, আমি ৬ বার এমপি হয়েছি। আরো অনেকে আমার সঙ্গে এমপি হতে চান। তাদের মনের মধ্যে ক্ষোভ জমা থাকে। অনেক কথা তাঁরা বলতে পারে না। একবার যদি বক্তব্য দিয়ে নেতাদের সামনে কথা বলতে পারে তাহলে মনের সব জ্বালা যন্ত্রণা দূর হয়ে যায়। সুতরাং, সবার ক্ষোভ-দু:খের কথা শুনে জটিলতা নিরসন করতে চাই।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনির সভাপতিত্বে প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আমির হোসেন আমু এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি, কৃষিমন্ত্রী ও সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড.আব্দুর রাজ্জাক এমপি।
সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল এমপি, আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য মির্জা আজম এমপি, মারুফা আক্তার পপি, রেমন্ড আরেং। সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন সিরাজ।
সভায় ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর ও নেত্রকোণা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা বক্তব্য রাখেন।
কালের আলো/ওএইচএম/এএ