দীপু মনির নেতৃত্বের ক্যারিশমা
প্রকাশিতঃ 12:13 am | July 17, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
চিরচেনা সেই হাসি মুখেই মঞ্চে আসন নিলেন। এরই ফাঁকে শুভেচ্ছা বিনিময় করে নিলেন দলটির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে। বক্তৃতার পর্ব চলাকালে নিজেকে ব্যস্ত রাখলেন নোট নেওয়ায়। আবার কান পেতে রাখলেন বক্তাদের বক্তব্যেও। যেন সব দিকেই তাঁর নজর। তৃণমূলের কোন নেতা দলের শৃঙ্খলা বিরোধী কথা বললেই মাইক হাতে তাকে সতর্ক করলেন।
আরও পড়ুন: আ.লীগের তৃণমূলে ঐক্য ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার নির্দেশ কেন্দ্রীয় নেতাদের
ভুল ধরিয়ে সংশোধনের সুযোগ দিলেন। এক জেলার নেতার বক্তব্যকে ঘিরে হঠাৎ হট্টগোল তৈরি হলে কঠোর হয়েই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করলেন। বৈরিতা ও মানসিক দূরত্ব পরিহার করে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, সহনশীল আচরণের অনুশীলনের মাধ্যমে ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে দল ও দেশের স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দেওয়ার বার্তা দিলেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের।
আরও পড়ুন: ‘ভোটের রাজা’ মির্জা আজম!
স্পষ্টই জানিয়ে দিলেন ‘উন্নয়নের দীপশিখা’ বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশের চেহারা বদলে দেওয়া বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিশন-ভিশনের কথা। সবাই দেখলেন তাঁর নেতৃত্বের ক্যারিশমা। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারাও একবাক্যে প্রশংসা করলেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি এমপি’র নেতৃত্বগুণের।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) নগরীর অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে আওয়ামী লীগের ময়মনসিংহ বিভাগের প্রতিনিধি সভায় অনন্য সাধারণ এমনই একজন দীপু মনির দেখাই পেলো রাজনীতি সচেতন জেলা ময়মনসিংহের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আমির হোসেন আমু থেকে শুরু করে দলটির কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য মির্জা আজম এমপি পর্যন্ত সবাই নিজেদের বক্তৃতার শুরুতেই ডা: দীপু মনিকে সাবেক সফল পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সম্বোধন করেন। অগ্নিকন্যা হিসেবে পরিচিত সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী নিজের বক্তৃতায় কমপক্ষে দু’বার বললেন, দীপু মনির বক্তব্য শুনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
দীপু মনি’র দেশের প্রথম নারী শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জনের প্রেক্ষাপটও উপস্থাপন করলেন দলটির প্রভাবশালী সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর কেবিনেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী ছিলেন বদরুন্নেছা আহমেদ। জাতির পিতার পথ ধরে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার মন্ত্রীত্বের ভার যার হাতে অর্পণ করেছেন তিনি ডা: দীপু মনি।

ময়মনসিংহ বিভাগের এ প্রতিনিধি সভা বিলম্বে শুরুর কারণও নিজের বক্তৃতার শুরুতেই ব্যাখ্যা করলেন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রশ্নফাঁস বন্ধ করে দেশজুড়ে প্রশংসিত এ শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, আজকের সভাটি বিলম্বে শুরুর কারণ একনেকে মিটিং থাকায় আমাকে সেখানে অংশগ্রহণ করতে হয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এজন্য অনুমতিও চাইতে গিয়েছিলাম যে এ মিটিংটায় আমি না গিয়ে সকাল থেকেই প্রতিনিধি সভায় আসতে পারি কীনা? কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন একনেক করে পরে মিটিংএ আসতে হবে। যে কারণে দুপুরে সভা করা হল। কম সময়ে একটি সভা করতে হলো। এজন্য আমি অত্যন্ত দু:খিত।
প্রতিটি জেলায় দিনব্যাপী প্রতিনিধি সভা
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা: দীপু মনি এমপি বলেন, আগে অন্যান্য জায়গায় যেভাবে সকাল থেকে রাত অবধি আমরা প্রতিনিধি সভা করেছি সেইভাবে আগামী দিনগুলোতে প্রত্যেকটি জেলায় দিনব্যাপী বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা করবো। এবং সেখানে সকল পর্যায়ে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে আমাদের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখতে পারবেন।

বক্তব্যেই ৮০ ভাগ সমস্যার সমাধান
তৃণমূল প্রতিনিধি সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মির্জা আজম এমপি বলেছিলেন, তৃণমূলের নেতারা একবার যদি কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে কথা বলতে পারে তাহলে তাদের মনের সব জ্বালা যন্ত্রণা দূর হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গ টেনে ডা: দীপু মনি বলেন, তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে অনেক জায়গায় দ্বন্দ্ব-রেষারেষি তৈরি হয়েছে। সেখানে যদি তাঁরা একটু বলতে পারেন তাহলে সমস্যার ৮০ ভাগ সমাধান হবে।
সদস্য সংগ্রহ অভিযানে সতর্ক
আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ অভিযানে যাতে কোনভাবে বিএনপি-জামায়াত, কোন স্বাধীনতা বিরোধী কেউ বা যুদ্ধাপরাধীদের কেউ যেন দলে প্রবেশ করতে না পারে এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে কঠোর নির্দেশ দেন দীপু মনি এমপি। তিনি বলেন, সদস্য সংগ্রহ করার ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

এমপি-মন্ত্রী হলেও রেহাই নেই
ডা: দীপু মনি জানান, ২০১৪ সালের নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে বিদ্রোহীদের বিষয়ে কোন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে হয়তো নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। সেখানেও আমরা শক্ত কোন অবস্থান নেইনি। কিন্তু আগে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলেই এবার উপজেলা নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের প্রবণতা ছিল অনেক বেশি।
এবং সেই প্রবণতায় যারা নিজেরা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন শুধুমাত্র তারা নন দায়িত্বশীল পদধারীরা এমনকি মন্ত্রী-এমপিরা অনেকেই বিদ্রোহীদেরকে প্রকাশ্যে মদদ দিয়েছেন। এটি দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের বড় উদাহরণ। আমাদের দলীয় আদর্শ এবং নিয়ম-কানুন আছে গঠনতন্ত্র আছে। সেগুলো মেনেই আমাদের চলতে হবে।
আওয়ামী লীগের গত কার্যকরী পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে উপজেলা নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন তাঁরা দলীয় পদে থাকলে সাসপেন্ড করা হবে। যারা প্রার্থীদের মদদ দিয়েছেন তারা এমপি মন্ত্রী হলেও তাদেরকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।

বঙ্গবন্ধু বলতেন কর্মী থাকতে হয় সংগঠন থাকতে হয়
বঙ্গবন্ধুর উদাহরণ টেনে ডা: দীপু মনি এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলতেন কর্মী থাকতে হয় সংগঠন থাকতে হয়, আদর্শ থাকতে হয়। নয়তো আন্দোলন-সংগ্রাম কোনটিই হয় না। এখন হয়তো আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হচ্ছে না কিন্তু আমাদের এ দেশটিকে গড়ে তুলতে হলে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে বিশাল একটি সামাজিক আন্দোলন চলছে এখন আমরা তাতেও সক্রিয় অংশগ্রহণ করছি।
এক্ষেত্রেও সংগঠন সুসংগঠিত থাকা দরকার আছে। আজ আমরা যেহেতু দীর্ঘদিন সরকারে আছে এজন্য হয়তো আমাদের মাঝে শিথিলতা এসেছে। আমরা যেন ভুল না যাই আমাদের প্রতিপক্ষরা বসে নেই। আমরা সংগঠিত না থাকলে বিরোধীরা দেশের ক্ষতি করতে সার্বক্ষণিক লিপ্ত রয়েছে। সেই ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করতে হলে দলকে সুংগঠিত করতে হবে।

৩৮ বছর যাবত অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন শেখ হাসিনা
ডা: দীপু মনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা ৩৮ টি বছর যাবত প্রতিটি মুহুর্ত এ দেশের জন্য অমানুষিক পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী হিসেবে নেত্রী যে স্বপ্ন দেখেন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ আমাদের করতে হবে।
কালের আলো/এআর/এমএম