দেশ বিরোধী ভয়াবহ ষড়যন্ত্রে প্রিয়া সাহা, পেছনে কারা নাড়ছেন কলকাঠি?

প্রকাশিতঃ 9:39 am | July 20, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান নিখোঁজ রয়েছেন, দাবি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের নারী প্রিয়া সাহার নির্লজ্জ মিথ্যাচার মূলত দেশ বিরোধী ভয়াবহ ষড়যন্ত্র বলেই মনে করছেন সবাই।

আরও পড়ুন: দুদকের ডিডি মলয়ের স্ত্রী প্রিয়া, বহিস্কৃত হয়েছিলেন সংগঠন থেকেও

বিষয়টিকে চক্রান্ত হিসেবে দেখছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। অসত্য এ বক্তব্য খতিয়ে দেখার কথা ঘোষণা দিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম।

প্রিয়া সাহার এ বক্তব্যকে সঠিক নয় উল্লেখ করে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার বলেছেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। তাঁর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার কথা জানিয়েছেন সোশ্যাল এক্টিভিস্ট ও সুপ্রিমকোর্টের আলোচিত আইনজীবী ব্যারিস্টার সাইয়েদুল হক সুমন।

মূলত বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহার এমন প্রপাগান্ডা চালিয়ে বাংলাদেশ বিরোধী ভাবমূর্তি তৈরির অপচেষ্টার নেপথ্যে কারা কলকাঠি নাড়ছেন, তাকে কারা কীভাবে হোয়াইট হাউজের সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সহায়তা করেছেন এবং স্বাধীনতা বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা প্রভাবিত করেছে কীনা এসব প্রশ্ন বড় হয়ে উঠেছে। এসব বিষয়াদি চিহ্নিত করে অনুসন্ধান শুরু হলেই ‘থলের বিড়াল’ বেরিয়ে আসবে বলেই ধরে নিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির স্বপ্ন পূরণ করেছেন শেখ হাসিনা

প্রিয়া সাহার এমন মিথ্যার বেসাতিকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল বলে মনে করছেন সরকারি দলের কোন কোন নেতা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশের সর্বস্তরের সংক্ষুব্ধ মানুষ তাঁর দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। আবার এক্ষেত্রে উগ্রতা প্রদর্শনের পরিবর্তে ধৈর্য্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার পাশাপাশি কুটনৈতিকভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা।

ভাইরাল হওয়া প্রিয়া সাহার মিথ্যাচারে ভরপুর ভিডিও মারফত জানা গেছে, গত ১৬ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহিষ্ণুতা বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে হোয়াইট হাউজে কথা বলেন।

এতে বাংলাদেশি পরিচয়ে প্রিয়া সাহা উপস্থিত হয়ে ট্রাম্পের কাছে অভিযোগ করেন, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান নিখোঁজ রয়েছেন। দয়া করে আমাদের লোকজনকে সহায়তা করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই।

এরপর তিনি বলেন, এখন সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু রয়েছে। আমরা আমাদের বাড়িঘর খুইয়েছি। তারা আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, তারা আমাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিচার পাইনি। এক পর্যায়ে ট্রাম্প নিজেই সহানুভূতিশীলতার স্বরূপ এই নারীর সঙ্গে হাত মেলান। এ সময় ট্রাম্প প্রশ্ন করেন, ‘কারা জমি দখল করেছে, কারা বাড়ি-ঘর দখল করেছে?’

ট্রাম্পের প্রশ্নের উত্তরে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘তারা মুসলিম মৌলবাদি গ্রুপ এবং তারা সব সময় রাজনৈতিক আশ্রয় পায়। সব সময়ই পায়।’

মার্কিন টিভি চ্যানেল এবিসি নেটওয়ার্কের চ্যানেল এবিসি ফোর ইউটাহ ট্রাম্পের সঙ্গে প্রিয়া সাহার সেই সাক্ষাতকারের ভিডিও প্রকাশ করে। এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সেটি। তাঁর এমন মিথ্যাচারে ক্ষোভে ফেটে পড়েন দেশ-বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা। তাঁরা প্রিয়া সাহা’র ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন।

প্রিয়া সাহা রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক অপরাধ করেছেন বলে মনে করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা মো. আবু কাওসার। কালের আলো’র সঙ্গে আলাপকালে তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে তিনি বলেন, সারা বিশ্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল নিদর্শন হচ্ছে বাংলাদেশ। এদেশের মতো এমন সুন্দর পরিবেশ পৃথিবীর কম দেশেই আছে।

প্রিয়া সাহা নামের এক নারী হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে বিদেশীদের কাছে নালিশ করেছেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই বিকৃত তথ্য উপস্থাপন করছেন। দলমত নির্বিশেষে বাংলাদেশের সব ধর্মের মানুষ তাঁর এ মিথ্যা ভরপুর বক্তব্য ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।

অ্যাডভোকেট মোল্লা আবু কাওসার আরো বলেন, দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রকারী প্রিয়া সাহা যার কাছে মিথ্যা তথ্যে নালিশ করেছেন সেই দেশের রাষ্ট্রদূত নিজেও তাঁর বক্তব্য গ্রহণ করেননি। প্রিয়া সাহার এ বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। তিনি কেন এ কথা বলছেন, এর পেছনে কাঁরা জড়িত তা খুঁজে বের করতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

প্রিয়া সাহার অসত্য বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সভাপতিমন্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান কালের আলোকে বলেন, এই নারী বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নামে যে সংগঠনের নেতা এই সংগঠনের লোকজনও বলছেন তাঁরা কিছুই জানেন না। তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কাছে আজগুবি, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। আসলে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গোটা বিশ্বেই দৃষ্টান্ত।

তিনি বলেন, আমেরিকার রাষ্ট্রদূতও স্বীকার করেছেন বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রোল মডেল। এ বিষয়ে সরকার কুটনৈতিকভাবেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে এ বিষয়ে উগ্রতা প্রদর্শন না করে পর্যালোচনা করেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

প্রিয়া সাহার বক্তব্যের পেছনে বিএনপি’র হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে এমন প্রশ্নে সাবেক এ বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির দায়ে দন্ডিত বিএনপি’র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন। ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় তিনি দেশবিরোধী নিবন্ধনও লিখেছিলেন।

যারা দেশের ভালো চায় না, দেশের অগ্রযাত্রা নষ্ট করতে চায় তাঁরাই এই ধরণের অপতৎপরতার নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবেই তাদের প্রতিরোধ করবে, যোগ করেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির এ সদস্য।

কালের আলো/এসআর/এমএএএম