দুদকের ডিডি মলয়ের স্ত্রী প্রিয়া, বহিস্কৃত হয়েছিলেন সংগঠন থেকেও

প্রকাশিতঃ 9:51 am | July 20, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান নিখোঁজ রয়েছেন, দাবি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের কাছে ভয়াবহ মিথ্যাচার করা বাংলাদেশের নারী প্রিয়া সাহার পরিচয় মিলেছে। তিনি বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ -খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক।

আরো পড়ুন: দেশ বিরোধী ভয়াবহ ষড়যন্ত্রে প্রিয়া সাহা, পেছনে কারা নাড়ছেন কলকাঠি?

তাঁর স্বামী মলয় সাহা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক। প্রিয়ার বাড়ি পিরোজপুর জেলার চরবানিনীর মাটিভাঙ্গায়। বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ‘শারি’-এর নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বেও রয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) পড়াশোনা করার সময় রোকেয়া হলে থাকতেন।

জানা যায়, প্রিয়া সাহা এক সময় ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ‘মহিলা ঐক্য পরিষদ’এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য গতবছর তাকে সেই পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, মূলত নিজের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার নাটক মঞ্চস্থ করে বিদেশী টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রিয়া সাহা। তাঁর স্বামীর টাকার জোরেই গত ক’বছর ধরে তাঁর দুই মেয়ে আমেরিকায় বসবাস করছেন। দু’মেয়েকে সেখানে পড়াশুনা চালানোর মতো অর্থ প্রিয়া বা তাঁর স্বামী কোথায় পেলেন তাও তদন্ত করে খুঁজে বের করার দাবি উঠেছে।

আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির স্বপ্ন পূরণ করেছেন শেখ হাসিনা

পাশাপাশি স্ত্রীর মিথ্যাচারের ঘটনার সঙ্গে স্বামী দুদক উপ-পরিচালক মলয় সাহা স্বভাবতই জড়িত থাকবেন বলেই মনে করছেন সবাই। তাই তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে দেশ বিরোধী চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য মিলবে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভাইরাল হওয়া প্রিয়া সাহার মিথ্যাচারে ভরপুর ভিডিও মারফত জানা গেছে, গত ১৬ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহিষ্ণুতা বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে হোয়াইট হাউজে কথা বলেন।

এতে বাংলাদেশি পরিচয়ে প্রিয়া সাহা উপস্থিত হয়ে ট্রাম্পের কাছে অভিযোগ করেন, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান নিখোঁজ রয়েছেন। দয়া করে আমাদের লোকজনকে সহায়তা করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই।

এরপর তিনি বলেন, এখন সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু রয়েছে। আমরা আমাদের বাড়িঘর খুইয়েছি। তারা আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, তারা আমাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিচার পাইনি। এক পর্যায়ে ট্রাম্প নিজেই সহানুভূতিশীলতার স্বরূপ এই নারীর সঙ্গে হাত মেলান। এ সময় ট্রাম্প প্রশ্ন করেন, ‘কারা জমি দখল করেছে, কারা বাড়ি-ঘর দখল করেছে?’

ট্রাম্পের প্রশ্নের উত্তরে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘তারা মুসলিম মৌলবাদি গ্রুপ এবং তারা সব সময় রাজনৈতিক আশ্রয় পায়। সব সময়ই পায়।’

মার্কিন টিভি চ্যানেল এবিসি নেটওয়ার্কের চ্যানেল এবিসি ফোর ইউটাহ ট্রাম্পের সঙ্গে প্রিয়া সাহার সেই সাক্ষাতকারের ভিডিও প্রকাশ করে। এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সেটি। তাঁর এমন মিথ্যাচারে ক্ষোভে ফেটে পড়েন দেশ-বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা। তাঁরা প্রিয়া সাহা’র ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন।

ইতিমধ্যে ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রিয়া সাহার নালিশকে চক্রান্ত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মন্তব্য করে বক্তব্য দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। প্রিয়া সাহার এমন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

এ বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টকে দেয়া ওই নারীর অভিযোগ সত্য নয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় একে-অপরকে শ্রদ্ধা করে।

কালের আলো/এআর/এমএইচএ