কথা রাখলেন বগুড়ার এসপি, ঘুষ ছাড়া মিলেছে পুলিশে চাকরি!
প্রকাশিতঃ 11:13 am | March 16, 2018
বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :
পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষার একদিন আগে সোমবার (০৫ মার্চ) স্থানীয় সংবাদকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বগুড়ার জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম বলেছিলেন, ‘পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ হবে সম্পূর্ণ ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার।
এ ব্যাপারে কেউ একটি পয়সাও নিতে পারবেন না। সে পুলিশের বড় কর্মকর্তাই হোক আর দালালই হোক। কারও তদবিরে কোনো কাজ হবে না। সম্পূর্ণ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পুলিশ সদস্য নিয়োগ দেওয়া হবে।’
বগুড়ার নবাগত এ পুলিশ সুপারের (এসপি) কন্ঠে এমন উচ্চারণের পর অনেকেই হয়তো ভেবেছিলেন, তিনি কথার কথা বলেছিলেন। যেমনটি পুলিশ সদস্য নিয়োগ পরীক্ষার আগে বলে থাকেন বেশিরভাগ পুলিশ কর্মকর্তাই। কিন্তু কথার সঙ্গে কাজের হুবুহু মিল রেখে রীতিমতো এক দৃষ্টান্তই স্থাপন করেছেন এসপি আলী আশরাফ ভূঞা। তিনি প্রমাণ দিয়েছেন, ঘুষ ছাড়াই পুলিশে চাকরি হয়।
জানা যায়, এবার বগুড়ায় পুলিশ কনস্টেবল পদে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন ৪ হাজার ৩০০ জন প্রার্থী। এর মধ্যে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয় ২’শ জন। এবারই প্রথমবার শতভাগ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় কুলি, শ্রমিক, ভ্যানচালক, ভূমিহীন বর্গাচাষি, দিনমজুর ও ডাব বিক্রেতার সন্তানেরাও চাকরি পেয়েছেন।
মূলত ঘুষ ছাড়াই নিজ নিজ সন্তানের চাকরি হওয়ায় খুশির আনন্দ যেন বাঁধ ভেঙেছে স্থানীয় অভিভাবকদের। ইতোমধ্যে প্রায় শতাধিক অভিভাবক এসপি’র সঙ্গে সাক্ষাত করে নিজেদের আনন্দ অনুভূতির কথা জানিয়েছেন। তাঁর প্রতি প্রকাশ করেছেন অশেষ কৃতজ্ঞতা।
বগুড়ায় এবার পুলিশ নিয়োগ পরীক্ষা স্বচ্ছ হয়েছে কীনা তা শুনা গেলো স্থানীয় সোনাতলা উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আকতার হোসেনের মুখ থেকে। দৈনিক কালের আলোকে একাত্তুরের রণাঙ্গণের এ বীর সেনানি জানান, কনস্টেবল পদে তাঁর নাতি উত্তীর্ণ হয়েছেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর এ প্রথম দেখলাম ঘুষ ছাড়াই পুলিশে চাকরি হয়েছে। এবার আর কোন প্রার্থীর কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেতে ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকা লাগেনি। কোন প্রকার টাকা ছাড়াই নিয়োগ দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এসপি সাহেব।’
শুধু এ বীর মুক্তিযোদ্ধাই নন ঘুষ ছাড়া চাকরি পেয়েছেন শেরপুর উপজেলার খানপুর গ্রামের শ্রমিক তোতা শেখ’র ছেলে মাসুদ রানার। খেটে খাওয়া এ হতদরিদ্র বলেন, কোনদিন ভাবিনি বিনা পয়সায় আমার ছেলের চাকরি হবে। এসপি স্যার (আলী আশরাফ ভূঞা) আমার স্বপ্ন পূরণ করেছেন।’
মাত্র ১’শ টাকা খরচে পুলিশে চাকরি হয়েছে জেলার সোনাতলা উপজেলার উত্তর সুখানপুকুর গ্রামের ভ্যানচালক শাহিদুল ইসলামের কলেজপড়–য়া মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিনের। নিয়োগ তালিকায় নিজের মেয়ের নাম দেখে ঠিক যেন আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে দরিদ্র শহিদুল ইসলামের। কালের আলোকে তিনি বলেন, ‘সবাই কয় পুলিশে চাকরিতে ঘুষ লাগে। এসপি স্যার (আলী আশরাফ ভূঞা) তো একটাকাও নিলো না।
একই রকম কথা জানান শিবগঞ্জ উপজেলার দোপাড়া গ্রামের বর্গাচাষি তফসির উদ্দিন, সোনাতলার মহিষপাড়া গ্রামের দরিদ্র গৃহবধূ ফাতেমা বেগম, সালমা বেগমরা। অভিন্ন সুরে তাঁরা দৈনিক কালের আলোকে বলেন, দেশের প্রতিটি জেলায় তাঁর মতো (আলী আশরাফ ভূঞা) এসপি থাকলে পুলিশ নিয়োগে আর কোনদিন দুর্নীতি হবে না। মেধা ও যোগ্যতার মূল্যায়ন হবে। সত্যিই তিনি একজন বিরল মানুষ।’
সম্পূর্ণ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করে এমন প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন এসপি আলী আশরাফ ভূঞা। স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও তার সততা ও দক্ষতার প্রশংসা করেছেন। তাদের কন্ঠেও উচ্চারণ- সব জেলাতেই যদি একজন আলী আশরাফ ভূঞা থাকতো!
কালের আলো/এসএস/আরএম