রেনু হত্যায় গুজব রটনাকারী ও মূল হোতার স্বীকারোক্তি

প্রকাশিতঃ 7:23 am | July 27, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে তাসলিমা বেগম রেনুকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন রিয়া বেগম ও প্রধান অভিযুক্ত ইব্রাহিম ওরফে হৃদয় হোসেন মোল্লা।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে এ জবানবন্দি দেন তারা। এ সময় তারা সেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাক।

আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ মিল্লাত হোসেন তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

জবানবন্দিতে হৃদয় জানান, সন্তানের ভর্তির ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন তাসলিমা বেগম রেণু। স্কুলের প্রধান ফটকের কাছে কয়েকজন অভিভাবককে দেখতে পেয়ে কিভাবে সন্তানকে ভর্তি করানো যায়, তা জিজ্ঞেস করেন তিনি। উল্টো রেণুকে জিজ্ঞেস করা হয়, কোথায় থেকে এসেছে, বাসা কোথায়, কী পরিচয়? এসব কথার ফাঁকে সন্তানের ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে আসা রেণুকে ছেলেধরা বলে সম্বোধন করেন মোছাম্মৎ রিয়া বেগম ওরফে ময়না।

রিয়া ছেলেধরা বলে আওয়াজ তোলার পরই অন্য অভিভাবক ও আশপাশের লোকজন মিলে ১৫-২০ জনের একটি জটলা তৈরি হয়। মুহুর্তেই মুখে মুখে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে, স্কুলে ছেলেধরা এসেছে। এরইমধ্যে রেণুকে নিয়ে যাওয়া হয় প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে। সেখানেও তার নাম-পরিচয় জানতে চাওয়া হয় এবং একটি কাগজে তা লিখতে বলা হয়।

এই সময়ের মধ্যে হাজারও লোকজন জড়ো হয় স্কুলের সামনে। পরিস্থিতি চলে যায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। গেট থেকে ১০-১৫ জন স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করে। এদের মধ্যে একজন স্কুলের পাশের রাস্তায় সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ ইব্রাহিম ওরফে হৃদয় হোসেন মোল্লা (২০)। টেনে হিঁচড়ে বের করে রাস্তায় আনা হয় রেণুকে। ছেলেধরা অভিযোগ তুলে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে উত্তর পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রিয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের ভূলতা এলাকা থেকে হৃদয়কে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন আদালত তার পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

উত্তর বাড্ডায় গত ২০ জুলাই সকালে ছেলেধরা সন্দেহে তাসলিমা বেগম রেনুকে পিটিয়ে আহত করে বিক্ষুব্ধ জনতা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় ওইদিন বাড্ডা থানায় ৪০০-৫০০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন তাসলিমার ভাগ্নে নাসির উদ্দিন। এর আগে নারায়ণগঞ্জ, বাড্ডা ও উত্তর বাড্ডা থেকে ৮ জনকে গ্রেফতার করে বাড্ডা থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ।

কালের আলো/এনআর/এমএম