নেক্সাস হাসপাতালে পোয়াবারো চিকিৎসকদের, মাথায় হাত শেয়ার হোল্ডারদের!
প্রকাশিতঃ 11:25 am | March 18, 2018
বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :
হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের নিবিড় পরিচর্যার প্রতিশ্রুতি নিয়ে যাত্রা শুরু করা ময়মনসিংহ নগরীর নেক্সাস কার্ডিয়াক হাসপাতাল শেয়ার হোল্ডাররা হতাশার অনলে পুড়ছেন। লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেও প্রায় কয়েক’শ শেয়ার হোল্ডার লাভের মুখ দেখতে না পারায় হাসপাতালের ভেতরে ভেতরে চলছে চরম অস্থিরতা।
এ নিয়ে তাদের মাঝে দ্বন্দ্ব-বিভক্তিও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। পরামর্শ ফি আর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় টাকায় চিকিৎসকদের পোয়াবারো অবস্থা হলেও শেয়ার হোল্ডাররা পুঁজি খাটিয়ে এখনো আশার আলো দেখতে না পাওয়ায় তাদের মাথায় যেন হাত পড়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে একাধিক শেয়ার হোল্ডার ও হাসপাতাল কর্তৃপে ক্ষর সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে, সহসাই এ প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে শেয়ার হোল্ডারদের লাভের অঙ্ক গুনার সুযোগ নেই।
জানা যায়, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজী বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা: এম.সাইফুল বারী কয়েকজন চিকিৎসককে নিয়ে বছর পাঁচেক আগে নগরীর সেহড়া ধোপাখোলা এলাকায় নেক্সাস কার্ডিয়াক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় জমি ও ভবনসহ সব মিলিয়ে প্রায় ২৫ কোটি টাকার মতো খরচ হয়।
তবে নিজে সরকারি গুরু দায়িত্বে থাকায় অধ্যাপক সাইফুল বারী তার স্ত্রী তাহমিনা সাইফুলকে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান করেন। ২০১২ সালে শুরু হয় এ হাসপাতালের যাত্রা। ওই সময় এ হাসপাতালের পরিচালকের তালিকায় ছিলেন ১৭ জন। আর শেয়ার হোল্ডার ছিলেন প্রায় অর্ধ শতাধিক।
পরবর্তীতে এ প্রাইভেট হাসপাতালের বহুতল ভবন মাথাচাড়া দিয়ে দাঁড়ালেও নুন্যতম লাভের মুখ দেখতে পারেননি শেয়ার হোল্ডাররা। উল্টো বছরে বছরে বেড়েছে এ হাসপাতালের পরিচালক ও শেয়ার হোল্ডারের সংখ্যা। এ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে বছর দুয়েক আগে এক পরিচালক নিজ পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
সূত্র জানায়, হাসপাতালের কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক সাইফুল বারী ও কয়েকজন চিকিৎসক নিজেদের ইচ্ছামতো পরিচালক ও শেয়ার হোল্ডার নির্ধারণ করছেন। প্রতি বছরেই বাড়ছে তাদের সংখ্যা। এমনকি এ হাসপাতালের শেয়ার হোল্ডারদের সংখ্যা নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সাইফুল বারী প্রায় শতাধিক শেয়ার হোল্ডারের কথা জানালেও হাসপাতাল ম্যানেজার ফজলে রাব্বী জানিয়েছেন ঠিক উল্টো। তার ভাষ্যে, চলতি সময় নাগাদ শেয়ার হোল্ডার কম করে হলেও চার শতাধিক। আর কাগজে-পত্রে ১৭ জন পরিচালকের রেজিষ্ট্রেশন থাকলেও মূলত এ সংখ্যাটা ত্রিশের কম নয় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন শেয়ার হোল্ডার অভিযোগ করে বলেন, কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও শেয়ার হোল্ডারদের সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ হয়নি। কবে নাগাদ তারা বিনিয়োগের টাকা ফেরত পাবেন এবং সুযোগ-সুবিধার আওতায় আসবেন এ নিয়েও এক রকম অন্ধকারে রয়েছেন তারা।
গত বছরের ২৬ মার্চ হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শরাফ উদ্দিন কোহিনূরসহ বেশ কয়েকজন শেয়ার হোল্ডার এসব নিয়ে প্রশ্ন তুলে ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটান।
এ সময় তারা জানতে চান, শেয়ার হোল্ডারদের সুযোগ সুবিধা কী? লাভের টাকা তারা কবে পাবেন? কিন্তু হাসপাতালের চেয়ারম্যান বা কো অর্ডিনেটর তাদের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ হাসপাতালের এক পরিচালক নাম প্রকাশে আপত্তি জানিয়ে বলেন, পরিচালকদের কেউ কেউ ৫ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছেন। তবুও অনেক পরিচালকের নাম রেজিষ্ট্রেশনে কর্তৃপক্ষ গড়িমসি করছেন। এখানকার সব লাভ গুণছেন শুধুমাত্র চিকিৎসকরা।
তারা চেম্বার খুলে রোগীদের কাছ থেকে পরামর্শ ফি নিচ্ছেন। পরীক্ষা নিরীক্ষা বাবদ কমিশনও খাচ্ছেন। কিন্তু পরিচালকরা কোন মুনাফাই পাচ্ছেন না। মূলত হাসপাতালের কোন মেমোরেন্ডাম না থাকায় তারা চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে নেক্সাস কার্ডিয়াক হাসপাতালের কো অর্ডিনেটর অধ্যাপক ডা: এম.সাইফুল বারী দৈনিক কালের আলোকে বলেন, পরিচালকদের রেজিষ্ট্রেশন কাজ হয়েছে। হাসপাতালের নীতিমালা তৈরির কাজও চলছে।
লাভ বা সুযোগ সুবিধা নিয়ে সব শেয়ার হোল্ডাররাই অনিশ্চয়তায় নেই। গুটিকয়েক শেয়ার হোল্ডার এমন মন্তব্য করতে পারেন। আমরা শুরুতেই বলেছিলোম ৫ থেকে ৭ বছর না গেলে লাভের কোন সুযোগ নেই।
চিকিৎসকদের পোয়াবারের বিষয়ে তিনি বলেন, চিকিৎসকরা বাড়িতেও চেম্বার খুলে রোগী দেখতে পারেন। এটা বড় কোন বিষয় না। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার লাভের টাকা হাসপাতালের উন্নয়ন কাজে ব্যয় হচ্ছে।
কালের আলো/এসএ/এমএ