বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিএনপি’র ওবায়দুর রহমান কী বলেছিলেন, জানালেন এলজিআরডি মন্ত্রী
প্রকাশিতঃ 10:29 am | August 05, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
দেশের সাবেক প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র খ্যাতিমান রাজনীতিক ছিলেন প্রয়াত কে.এম.ওবায়দুর রহমান। ছিলেন দলটির মহাসচিবও। প্রয়াত এ রাজনীতিকও বিশ্বাস করতেন বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা ইতিহাসে বিরল। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রসঙ্গে তিনি একবার কথা বলেছিলেন বর্তমান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এমপি’র সঙ্গে।
আরও পড়ুন: বদলে যাওয়া বাংলাদেশের গল্প বললেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী
১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারে তখন প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তাজুল ইসলাম। ওই সময়কার সেই মধুর স্মৃতিচারণ নিজের জবানীতে উপস্থাপন করলেন এ মন্ত্রী। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির মর্যাদায় অভিসিক্ত ও গর্বের মানস বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কথা বলতে গিয়েই প্রায় দুই যুগ আগের সেই স্মৃতিপ্রবাহই তুলে আনলেন বঙ্গবন্ধু কন্যার মন্ত্রীসভায় দেশের বৃহৎ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্ব দেওয়া আধুনিক এ রাজনীতিক।
রোববার (০৪ আগষ্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে ‘শতবর্ষের পথে বঙ্গবন্ধু’, চিত্রে, গানে, কবিতায় স্মরণ অনুষ্ঠানে পুরনো এ স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসেন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
আরও পড়ুনঃ কুমিল্লায় ইউপি সদস্যদের আলাদা অফিস, রয়েছে নাগরিকের হালনাগাদ তথ্য
তিনি বলেন, ‘আমি তখন নতুন পার্লামেন্ট মেম্বার। ক্যাফেটিয়ায় খেতে গেলাম। লাঞ্চ করে পার্লামেন্টে অংশগ্রহণ করবো। ক্যাফেটেরিয়ায় খাচ্ছেন বিএনপি’র তৎকালীন সেক্রেটারী কে এম ওবায়দুর রহমান। প্রবীণ নেতা হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই তাকে সালাম দিলাম।
তাঁর খাওয়া শেষ। তিনি এক টেবিলে বসে তবুও আমাকে খাওয়ার অনুরোধ করলেন। দু’জনে কথা বললাম। আলাপের বিষয়বস্তু বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তাঁর কাছে জানার চেষ্টা করেছি। কারণ বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় আমরা ছোট ছিলাম, বলতে থাকেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘কে.এম.ওবায়দুর রহমানের কাছে আমার শেষ প্রশ্ন ছিল, আরেকজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কী এ বাংলাদেশে জন্ম নিবে? তিনি বললেন, কে বলছে জন্মাবে না? তবে কত হাজার বছর পরে আরেকজন এরকম মানুষ জন্মাবে সেটাই হলো কথা’ মন্ত্রীর কন্ঠে এমন উচ্চারণে মিলনায়তনে তুমুল করতালি।
‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে আমাদের ধন্য করেছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন মধ্যম আয়ের দেশ’ যোগ করেন মন্ত্রী।
উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘আমি ভারতের ডেভেলাপমেন্ট মিনিস্টিার, ডিজেস্টার মিনিস্টার, মেয়র ও ডেপুটি মেয়রের সঙ্গে মিটিং করেছি। তাঁরা আমাকে রিসিভ করে বললো, ‘ইট ইজ অ্যা মিরাক্যাল। রিয়েলি ওই কান্ট ইমাজিন বাংলাদেশ কুড এসিভ সাচ এ ডেভেলাপমেন্ট উইথ ইন দ্যা সোন এজ টাইম এন্ড ইউ হেভ ক্রস দ্যা ডেভেলাপমেন্ট গ্রোথ রেইট আনপ্যারালাল ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড।’
রাইট মেন পাওয়ার ও রাইট লিডারশিপ
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, এখন আমাদের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯০৯ ডলার। আমাদের অসংখ্য তরুণ-তরুণী সুশিক্ষিত হয়েছে। আমাদের প্রযুক্তির ব্যবহার বিস্তৃতি লাভ করেছে এবং ইনফরমেশন টেকনোলজির সুযোগ-সুবিধা আজ বাংলাদেশ অনেক সমৃদ্ধ।
স্যাটেলাইট স্টেশন স্থাপন, সাবমেরিন ক্যাবল ইন্সটুলেশন এ সমস্ত সুযোগ সুবিধা সম্প্রসারিত। আমাদের রাইট মেন পাওয়ার ও রাইট লিডারশিপ আছে। এসব কিছুই শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বগুণে। আমাদের প্রচুর কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে।
আমাদের প্রচুর খনিজ সম্পদ রয়েছে। সেই খনিজ সম্পদ উত্তোলন করা, মৎস্য সম্পদ আহরণ করা এবং ব্লু ইকোনমিক অ্যাডভান্টেজগুলো সুযোগ রয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা, প্রযুক্তিগত সুবিধা এবং শিল্পায়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানি আয় তথা সামগ্রিক এগুলো করার মাধ্যমে বহুমুখী উন্নয়ন কর্মসূচি আজ চলমান রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আমাকে বড় দায়িত্ব দিয়েছেন
বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে দেওয়ায় আল্লাহ’র কাছে শুকরিয়া আদায় করেছেন তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে সৌভাগ্যবান। আল্লাহ’র কাছে শুকরিয়া আদায় করি। রাব্বুল আলামিন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে আমাকে একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। একটি বড় দায়িত্ব দিয়েছেন।
তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব শহরের উন্নত এলাকা থেকে তৃণমূল গ্রাম। গ্রামের বঞ্চিত রাস্তাঘাট নেই এমন এলাকা থেকে গুলশানের সবচেয়ে সমৃদ্ধ এলাকা পর্যন্ত কাজ করার জন্য আমি দায়বদ্ধ। এবং সেই দায়িত্বটি আমি পেয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করার চেষ্টা করছি।
কথাটা এজন্য বললাম, আজ শেখ হাসিনা গ্রামকে শহর করার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রতিটি গ্রামে শহরের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার জন্য। আমাদের মানুষ শিক্ষিত ও স্বাস্থ্যবান হচ্ছে। তাদের আয় বাড়ছে। এ পর্যায়ে তাঁরা বলছে, আমি শহরে চলে যাবো। যিনি গ্রামের সঙ্গতি অর্জন করেছেন তিনি মনে করেন শহরে গিয়ে আরো উন্নত জীবনযাপন করবো।
ছেলে-মেয়ের শিক্ষার ব্যবস্থা করবো। যাদের নদী ভেঙে যায় আয় রোজগার বঞ্চিত হয় তাঁরাও শহরে চলে আসে। শহরে তো সব মানুষের জায়গা হবে না। প্রতি স্কয়ার মাইলে এখানে ৪৪ হাজার লোক বাস করে।
এখন সবাই যদি শহরে আসতে চায় তাহলে তো এখানে বসবাসের উপযোগী পরিবেশ থাকবে না। কিন্তু মানুষের অধিকার আছে, উন্নত জীবন যাপন করার। কৃষক বলে তাঁর ছেলে কৃষক হবে না। আমি রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে বলতে পারি না তোমার ছেলে কৃষক হবে না কেন?
এ বঞ্চনার জন্য স্বাধীনতা আসেনি। তাকে উন্নত জীবন দেওয়ার জন্য দায়িত্ব রয়েছে। এজন্য শেখ হাসিনা বলেছেন, এ শহরের যতো সুযোগ সুবিধা সব গ্রামে পৌঁছে দিবো।
কালের আলো/এপিএস/এমএএএমকে