বঙ্গমাতার গুণমুগ্ধ স্পিকার
প্রকাশিতঃ 10:41 am | August 09, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
বাঙালি জাতির সুদীর্ঘ স্বাধীকার আন্দোলনের প্রতিটি পদক্ষেপে বঙ্গবন্ধুকে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। বলা হয়, ছায়ার মতই যিনি অনুসরণ করেছেন নিজের প্রাণপ্রিয় স্বামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে। জাতির পিতার জীবনসঙ্গী বঙ্গমাতার রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় বিস্মিত হন স্পিকার ড.শিরিন শারমিন চৌধুরী এমপি।
আরও পড়ুন: মহিয়সী বঙ্গমাতায় ‘একাকার’ স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী
নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বঙ্গমাতাকে অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে মনে করেন তিনি। এক অসামান্য দৃঢ়তা, আত্মপ্রত্যয়, দৃঢ় মনোবল, সাহস এবং অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী হওয়ার কারণেই মূলত বঙ্গমাতায় নিজের গুণমুগ্ধতার কথা প্রকাশ করেন মহান জাতীয় সংসদের এ অভিভাবক।
মেধাবী, পরিচ্ছন্ন ও উচ্চ শিক্ষিত এ রাজনীতিক বরাবরই বঙ্গমাতার জীবনের ঘটনা বিশ্লেষণ করে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। শিক্ষা গ্রহণের আহ্বান জানান মহিয়সী এ নারীর জীবন থেকে। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বঙ্গমাতা পরামর্শ, সাহস, অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা দিয়ে গেছেন।’
বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে এমন কথা বলেন তিনি। মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে অসাধারণ ভূমিকা পালন করা বঙ্গমাতা সম্পর্কে স্পিকার বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের দীর্ঘ প্রেক্ষাপটে নেপথ্যে থেকে বঙ্গমাতা অসামান্য অবদান রেখেছেন।
তিনি দু:সময়ে বঙ্গবন্ধুকে প্রেরণা জুগিয়েছেন, পরামর্শ দিয়েছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে জাতির পিতার সঙ্গে বুলেটের নির্মম আঘাতে জীবন দিতে হয়েছে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে।
ড.শিরিন শারমিন চৌধুরী এমপি বলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে পাক সামরিক সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসতে নিষেধ করে বাংলার স্বাধীনতার পথ খুলে দিয়েছিলেন বঙ্গমাতা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তার এ দূরদর্শী চিন্তা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এমপি এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট তারানা হালিম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার।
নিজের বক্তব্যে সব সময়ই বঙ্গমাতাকে উপস্থাপনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে সজীব ও তেজোদীপ্ত করেন স্পিকার ড.শিরীন শারমিন। অসাধারণ মননশীলতা ও যোগ্যতায় দেশপ্রেমের শক্তিতেই যেন জাগরূক করেন চৈতন্যের দ্বীপশিখা। তিনি বঙ্গমাতাকে দেশের সকল নারীর জন্যই অনুপ্রেরণার উৎস বলে মনে করেন।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৮ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানেও গত বছর প্রধান অতিথি হিসেবে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেদিনও বাঙালি নারীর জাগরণের ‘বাতিঘর’ বঙ্গমাতার মহান মুক্তিযুদ্ধে অপরিসীম অবদান, সেকালের বুদ্ধিবৃত্তির উজ্জ্বল তারকা, মাতৃরূপী স্বিগ্ধ অভিব্যক্তি তুলে এনেছিলেন সুনিপুণ দক্ষতায়। স্মরণের আলোয় চির জাগরিত এ মহিয়সী নারীকে একাধারে একজন স্ত্রী, একজন মমতাময়ী মা, দক্ষ সংগঠক এবং দূরদর্শী রাজনীতিবিদ হিসেবেও উল্লেখ করেছিলেন স্পিকার।
তিনি বলেছিলেন, বঙ্গমাতা অত্যন্ত সরল জীবন-যাপন করতেন। সাধারণের মাঝে তিনি মিশে থাকতেন। তাঁর নিজস্ব কোন চাহিদা বা চাওয়া পাওয়া ছিল না। শুধু বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আদর্শ যেন বাস্তবায়িত হয় সেজন্যে বিভিন্ন ধরনের ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করেছেন।
স্পিকার সেদিন বলেন, বঙ্গমাতা প্রতিটি ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকেছেন। সহযোগিতা করেছেন এবং এই দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে অনেক সংকটময় মুহুর্ত ছিল। কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়ার অনেক সময় এসেছে এবং সেই সময়গুলোতে অত্যন্ত ধৈর্য্যরে সাথে ও দৃঢ়তার সাথে চিন্তাপ্রসুত দিকনির্দেশনা সংবলিত সিদ্ধান্ত বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব দিয়েছেন। যার মধ্য দিয়ে তাঁর গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞাই দেখা যায়।
তিনি বলেছিলেন, ‘প্যারোলে মুক্তি নয়, সম্পূর্ণ মুক্ত হয়েই যেকোন আলোচনায় যাবেন বঙ্গবন্ধু এই চিন্তাটিও বেগম মুজিব থেকেই এসেছে এবং তিনিই বঙ্গবন্ধুকে বলেছেন, ‘প্যারোলে মুক্তি নয়, এই বাংলার মানুষই তোমাকে মুক্ত করবে’ এবং তাই হয়েছে, এটিই ছিল সঠিক সিদ্ধান্ত।’
কালের আলো/এআরএফ/এমএএএমকে