‘হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি’
প্রকাশিতঃ 4:10 am | August 15, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনী সংকলন। ২০১২ সালে বইটি প্রকাশিত হয়। বইটি ইংরেজি, উর্দু, জাপানি, চীনা, আরবি, ফরাসি, হিন্দী, তুর্কি, স্প্যানিশ, অসমীয়া ও মালয় ভাষায় অনূদিত হয়েছে বলে জানিয়েছে উইকিপিডিয়া।
আরও পড়ুন: জাতির স্বপ্নপুরুষকে নৃশংসতম হত্যার অশ্রুঝরা দিন
কালের আলো’র পাঠকদের জন্য বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর দু’টি চুম্বক অংশ উপস্থাপন করা হলো। ‘একদিন সকালে আমি ও রেণু বিছানায় বসে গল্প করছিলাম। হাচু ও কামাল নিচে খেলছিল। হাচু মাঝে মধ্যে খেলা ফেলে আমার কাছে আসে আর ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ বলে ডাকে। কামাল চেয়ে থাকে।
একসময় কামাল হাচিনাকে বলছে, ‘হাচু আপা, হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি।’ আমি আর রেণু দু’জনই শুনলাম। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে গিয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললাম, ‘আমি তো তোমারও আব্বা।’ কামাল আমার কাছে আসতে চাইত না। আজ গলা ধরে পড়ে রইল।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদকে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘আন্দোলন চালিয়ে যা’
বুঝতে পারলাম, এখন আর ও সহ্য করতে পারছে না। নিজের ছেলেও অনেক দিন না দেখলে ভুলে যায়। আমি যখন জেলে যাই তখন ওর বয়স মাত্র কয়েক মাস। রাজনৈতিক কারণে একজনকে বিনা বিচারে বন্দি করে রাখা আর তার আত্মীয়স্বজন-ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে দূরে রাখা যে কত বড় জঘন্য কাজ তা কে বুঝবে? মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়।
আজ দুইশ’ বছর পর আমরা স্বাধীন হয়েছি। সামান্য হলেও কিছুটা আন্দোলনও করেছি স্বাধীনতার জন্য। ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাস, আজ আমাকে ও আমার সহকর্মীদের বছরের পর বছর জেল খাটতে হচ্ছে। আরও কতকাল খাটতে হয়, কে জানে? একেই কি বলে স্বাধীনতা? ভয় আমি পাই না, আর মনও শক্ত হয়েছে। যে পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সেই পাকিস্তানই করতে হবে, মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু ৩০০ টাকা দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদকে
গোপালগঞ্জ মহকুমার যে কেউ আসে তাদের এক প্রশ্ন, ‘আপনাকে কেন জেলে নেয়? আপনিই তো আমাদের পাকিস্তানের কথা শুনিয়েছেন।’ আবার বলে, ‘কত কথা বলেছেন, পাকিস্তান হলে কত উন্নতি হবে। জনগণ সুখে থাকবে, অত্যাচার-জুলুম থাকবে না। কয়েক বছর হয়ে গেল দুঃখই তো আরও বাড়ছে, কমার লক্ষণ তো দেখছি না। চালের দাম কত বেড়ে গেছে। কী উত্তর দেব! এরা সাধারণ মানুষ।’
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর বুকে ছিল ২৪ টি বুলেটের ছিদ্র
‘বাবা রাজনীতি কর আপত্তি করবো না’
রেণু কয়েকদিন আমাকে খুব সেবা করল। যদিও আমাদের বিয়ে হয়েছে ছোটবেলায়। ১৯৪২ সালে আমাদের ফুলশয্যা হয়। জ্বর একটু ভালো হলো। কলকাতা যাব, পরীক্ষাও নিকটবর্তী। লেখাপড়া তো মোটেই করি না। দিন-রাত রিলিফের কাজ করে কূল পাই না। আব্বা আমাকে এ সময় একটা কথা বলেছিলেন, ‘বাবা, রাজনীতি কর আপত্তি করব না, পাকিস্তানের জন্য সংগ্রাম করছ এ তো সুখের কথা, তবে লেখাপড়া করতে ভুলিও না।
আরও পড়ুন: সেদিন কারা বহন করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর লাশ?
লেখাপড়া না শিখলে মানুষ হতে পারবে না। আর একটা কথা মনে রেখ, ‘Sincerity of purpose and honesty of purpose, থাকলে জীবনে পরাজিত হবা না।’ এ কথা কোনোদিন আমি ভুলিনি।
আরেক দিনের কথাথ গোপালগঞ্জ শহরের কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তি আমার আব্বাকে বলেছিলেন, আপনার ছেলে যা আরম্ভ করেছে তাতে তার জেল খাটতে হবে। তার জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে, তাকে এখনই বাধা দেন। আমার আব্বা যে উত্তর করেছিলেন তা আমি নিজে শুনেছিলাম।
আরও পড়ুন: শোকাবহ দু:সহ সেই স্মৃতি আজো বয়ে বেড়াচ্ছেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা
তিনি বলেছিলেন, ‘দেশের কাজ করছে, অন্যায় তো করছে না; যদি জেল খাটতে হয়, খাটবে; তাতে আমি দুঃখ পাব না। জীবনটা নষ্ট নাও তো হতে পারে, আমি ওর কাজে বাধা দিব না। আমার মনে হয়, পাকিস্তান না আনতে পারলে মুসলমানদের অস্তিত্ব থাকবে না।’
কালের আলো/এআরএফ/এমএএএমকে