শোকাবহ দু:সহ সেই স্মৃতি আজো বয়ে বেড়াচ্ছেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা
প্রকাশিতঃ 2:24 pm | August 15, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
ঘাতকরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়িতে আক্রমণ করে বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের প্রতিটি সদস্যকেই নৃশংসভাবে হত্যা করেছিলেন। এরই মধ্যে দিয়ে বিপথগামী সেনা সদস্যরা বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্খার কেন্দ্রবিন্দুকে নস্যাৎ করতে চেয়েছিল।
আরও পড়ুন: ‘হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি’
কিন্তু প্রবাসে থাকায় সেদিন প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। ৪৪ বছর আগের সেই শোকাবহ দু:সহ স্মৃতি আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কর্ণেল (অব.) ফারুক খান কালের আলোকে বলেন, ‘প্রতি বছর ১৫ আগস্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে খুবই শোকাহত দেখি। আবার তাঁরা দু’জনই এ শোককে শক্তিতে রূপান্তর করতে পেরেছেন।
আরও পড়ুন:জাতির স্বপ্নপুরুষকে নৃশংসতম হত্যার অশ্রুঝরা দিন
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের কমপক্ষে ১ লাখ জায়গায় বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকী পালিত হয়। বিশ্বের কোন রাজনৈতিক নেতার শাহাদাত বার্ষিকী এভাবে পালিত হয় না। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নের কাজ করছি আমরা।’
আরও পড়ুন:বঙ্গবন্ধু ৩০০ টাকা দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদকে
সাবেক এ বাণিজ্যমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের আগামী বছর তাঁর শততম জন্মবার্ষিকীর আগেই ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে কালের আলোকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিরা নাম পরিবর্তন করায় তাদের সঠিক অবস্থান নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দ্রুত সময়ের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর পলাতক ৬ খুনিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ শিরোনামে ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত একটি বইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী প্রয়াত পরমাণু বিজ্ঞানী ড.এম.এ.ওয়াজেদ মিয়া লিখেছিলেন বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর ঘটনাপ্রবাহ।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদকে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘আন্দোলন চালিয়ে যা’
১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্ট দিনটি ছিল শুক্রবার। ভোর ৬ টার দিকে ওয়াজেদ মিয়ার ঘুম ভাঙ্গে বেলজিয়ামে তখনকার বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের স্ত্রীর ডাকে – কারণ জার্মানির বন থেকে সেখানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী টেলিফোনে জরুরী কথা বলতে চান।
হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর সাথে কথা বলার জন্য ওয়াজেদ মিয়া স্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু দুই-এক মিনিট পর শেখ হাসিনা ফিরে তাঁর স্বামীকে জানান যে রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী ওয়াজেদ মিয়ার সাথেই কথা বলতে চান। ওয়াজেদ মিয়ার বর্ণনা অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে তখন ভীষণ চিন্তিত এবং উৎকণ্ঠিত দেখাচ্ছিল।
আরও পড়ুন: সেদিন কারা বহন করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর লাশ?
টেলিফোন ধরার জন্য ওয়াজেদ মিয়া দ্রুত নিচে নামেন। তখন সেখানে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় মাথা নিচু করে পায়চারি করছিলেন সানাউল হক। ফোনের রিসিভার ধরতেই অপর প্রান্ত থেকে রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘আজ ভোরে বাংলাদেশে ক্যু-দে-টা হয়ে গেছে। আপনারা প্যারিস যাবেন না। রেহানা ও হাসিনাকে এ কথা জানাবেন না। এক্ষুনি আপনারা আমার এখানে বনে চলে আসুন।’
টেলিফোনে কথা বলার পর ওয়াজেদ মিয়া যখন বাসার উপরে যান তখন শেখ হাসিনা অশ্রুজড়িত কণ্ঠে ওয়াজেদ মিয়ার কাছে জানতে চান রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর কী কথা হয়েছে? তখন ওয়াজেদ মিয়া স্ত্রীকে জানান যে রাষ্ট্রদূত চৌধুরী তাদের প্যারিস যাত্রা বাতিল করে সেদিনই জার্মানির বনে ফিরে যেতে বলেছেন।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর বুকে ছিল ২৪ টি বুলেটের ছিদ্র
শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা-দু’জনেই কাঁদতে কাঁদতে বলেন যে নিশ্চয়ই কোন দু:সংবাদ আছে যেটি ওয়াজেদ মিয়া তাদেরকে বলতে চাইছেন না। আর তখন শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা বলেন যে প্যারিসের যাত্রা বাতিল করার কারণ পরিষ্কারভাবে না বললে তাঁরা সে বাসা ছেড়ে অন্য কোথাও যাবেন না।
বাধ্য হয়ে ওয়াজেদ মিয়া বলেন যে বাংলাদেশে ‘কি একটা মারাত্মক ঘটনা ঘটে গেছে যার জন্য আমাদের প্যারিস যাওয়া যুক্তিসংগত হবে না। এ কথা শুনে তারা দু’বোন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তাদের কান্নায় ছেলে মেয়েদেরও ঘুম ভেঙ্গে যায়।’
৪৪ বছর আগের দু:সহ সেই স্মৃতি আজো বয়ে বেড়াচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা কার্যতই শোককে শক্তিতে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছেন। গত ১০ বছরে তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।
স্বাধীন বাংলাদেশে অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন হ্যাট্ট্রিক প্রধানমন্ত্রী। চারবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। নিজের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। শত বাধা-বিপত্তি এবং হত্যার হুমকিসহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা ভাত-ভোট এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য অবিচল থেকে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন।
শেখ হাসিনার জাদুকরী নেতৃত্বেই বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে তাঁর জনপ্রিয়তা।
কালের আলো/এসআর/এমএএএমকে