শিশুপার্কও থাকছে না জিয়ার নামে
প্রকাশিতঃ 2:55 pm | March 21, 2018
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং জাতীয় সংসদ সংলগ্ন উদ্যানের পর রাজধানীতে এবার শিশু পার্ক থেকে মুছে দেয়া হলো বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নাম। শাহবাগে জিয়াউর রহমানের নামে থাকা জাতীয় শিশু পার্কটি এখন শুধুই ‘শিশু পার্ক’বলে পরিচিত হবে। তবে পরে এর নামকরণ করা হবে।
বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সামনে এ কথা জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে গৃহীত কর্মসূচি এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নতুন প্রকল্প সম্পর্কে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মন্ত্রী বলেন, ‘ইতিমধ্যে শিশু পার্কের নাম আমরা পরিবর্তন করেছি। অনেকে হয়তো এটা জানেন না। ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্য আমরা নতুনভাবে (শিশু পার্ক) যখন করব সেটির (নতুন নামের) প্রতিফলন হবে।’
নতুন কী নাম দেয়া হয়েছে-জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘নতুন করে কোনো নাম রাখা হয়নি, এখন শুধু শিশু পার্ক।’
‘আগামী ৭ দিনের মধ্যে পার্কের বর্তমান নামফলক তুলে নতুন নামফলক বসানো হবে।’
২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করা হয়। এছাড়া জিয়া উদ্যানের নাম পরিবর্তন করে করা হয় চন্দ্রিমা উদ্যান।
তখন থেকেই জিয়াউর রহমানের নামে থাকা শিশু পার্কটির নাম পাল্টানোর কথা হচ্ছিল।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার চার বছর পর ১৯৭৯ সালে শাহবাগে শিশু পার্কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য পাবলিক সেক্টরে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম এই শিশুপার্কটি ১৯৮৩ সাল থেকে বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে যাত্রা শুরু করে। কয়েক দফা নাম বদলের পর ২০০৩ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের সময় এর নাম হয় ‘শহীদ জিয়া শিশু পার্ক’।
যে এলাকাটিতে এই শিশু পার্কটি করা হয়েছিল, সেট বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলন এবং বিজয় অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এই জায়গাতেই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল।
বিএনপিপন্থী সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুীর জানিয়েছিলেন, পাকিস্তানি মুসলমান সেনাবাহিনীর পরাজয়ের চিহ্ন মুছে দিতে চেয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। এ কারণেই সেখানে শিশু পার্কটি তৈরি করা হয়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী বলেন, ‘এই জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বড় স্মৃতি জড়িত রয়েছে। এখানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিল স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই জায়গাটিকে বিতর্কিত করার জন্যই এখানে শিশুপার্ক করা হয়েছিল। কেননা পাকিস্তানি বাহিনী কখনই তাদের পরাজয় মেনে নিতে পারেনি।’
এর আগে ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসেও বেশ কিছু স্থাপনার নাম পাল্টে ফেলে। আগের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারের নাম পাল্টে করা হয় ভাসানী নভোথিয়েটার।
আর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের নাম পাল্টানো না হলেও এই মাঠে যেন আর ক্রিকেট খেলা না হয়, সে জন্য মিরপুর স্টেডিয়ার ক্রিকেটকে না দিয়ে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম দেয়া হয় ফুটবল ও অ্যাথলেটিকসের। এই দুটি খেলার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা হয় না বলে বঙ্গবন্ধুর নাম তখন দেশের বাইরে যেন প্রচার হতে না পারে, সে জন্য এই ব্যবস্থা নেযা হয়।
চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন যেসব স্থাপনার নাম পরিবর্তন করা হয়েছিল ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার অনেক স্থাপনা আবার আগের নামে ফিরিয়ে আনে।
এর মধ্যে জিয়াউর রহমানের নামে থাকা স্থাপনা পাল্টানোয় বিএনপি সরকারের তীব্র সমালোচনা করে আসছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের প্রধান জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।
তবে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুতে সপরিবারে হত্যার পর তার ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা আছে। তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরষ্কৃত করেছিলেন।
আবার বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার যেন না হতে পারে, সে জন্য জারি করা হয়েছিল ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ।
সামরিক উর্দি পরে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর হা-না ভোটের আয়োজনও করেন জিয়াউর রহমান। তাতে অস্বাভাবিক ব্যবধানে জেতা জিয়াউর রহমানকে পরে উচ্চ আদালতের রায়ে দুই বার ‘অবৈধ রাষ্ট্রপ্রধান’ বলা হয়েছে।
বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০৫ সালে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়ে জিয়াউর রহমানের শাসনামলকে অবৈধ বলা হয়।
এরপর ২০১৭ সালে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়েও জিয়াউর রহমানকে অবৈধ রাষ্ট্রপতি বলা হয়।
কালের আলো/এমএ