ইন্দো-প্রশান্ত সেনাপ্রধানদের রোহিঙ্গা সমস্যা ও ভবিষ্যত পরিণতি সম্পর্কে বললেন জেনারেল আজিজ

প্রকাশিতঃ 9:31 am | September 12, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় ও সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এতে করে বাংলাদেশের জন্য মারাত্মক নিরাপত্তাঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিকতা প্রদর্শনের ভয়াবহ জের সরকারকে টানতে হওয়ায় সংকট ক্রমশ জটিল হচ্ছে।

আরও পড়ুন: প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে সীমান্ত পরিস্থিতি কীভাবে উন্নতি করেছেন, জানালেন জেনারেল আজিজ

এই মানবিক সংকট শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় প্রচেষ্টার সম্পূরক হিসেবে অব্যাহত আন্তর্জাতিক চাপ ও সম্পৃক্ততা জোরালো হয়ে উঠেছে। অবশ্য এরই মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ নিয়ে নিজেদের গভীর উদ্বেগের কথা জানিয়ে দিয়েছে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী। দুই দেশের মধ্যকার সীমান্ত উত্তেজনা নিরসনেও কার্যকর ভূমিকা পালন করছে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী।

থাইল্যান্ডের ব্যাংককে গত সোমবার (০৯ সেপ্টেম্বর) ১৯টি দেশের সেনাপ্রধানের অংশগ্রহণে ইন্দো-প্রশান্ত সেনাপ্রধান সম্মেলনে এমন তথ্য জানান বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

১৯ দেশের সেনাপ্রধানদের অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিতব্য ইন্দো-প্যাসিফিক আর্মি চিফস সম্মেলনের উদ্দেশ্যে শনিবার তিনদিনের সফরে থাইল্যান্ড যাচ্ছেন সেনাবাহিনী প্রধান। এখানে অংশ নিতে সেনাপ্রধানকে চিফ অব স্টাফ, ইউএস আর্মি ও ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ডারের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। নিজের মেধা, প্রজ্ঞা ও যুক্তির অপূর্ব সম্মিলন ঘটানো সেনাপ্রধানের এমন বক্তব্যে সমাধানের বিষয়টিও উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দায়িত্ব নেওয়ার পর জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ মিয়ানমার নাগরিকের মানবিক কর্মতৎপরতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা জানিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ ও সামাজিক জীবনে প্রবল চাপ সৃষ্টি করেছে।

আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’

রোহিঙ্গা নামে পরিচিত জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকেরা এখন বাংলাদেশের জন্য নিরাপত্তাঝুঁকি সৃষ্টি করছে এবং দ্রুত বাংলাদেশ ও সন্নিহিত অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিক্ষুব্ধ ও বেকার রোহিঙ্গাদের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তু হয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। জীবিকার জন্য আন্তদেশীয় মানব পাচার, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, সীমান্তবর্তী অপরাধ ইত্যাদির মতো অপরাধেও তাঁরা যুক্ত হয়ে যেতে পারে।’

জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নারী ও শিশুরা এখন মানব পাচারকারীদের প্রধান লক্ষ্যবস্তু বলেও জানান সেনাপ্রধান। দেশের একমাত্র এ চারতারকা জেনারেল জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদানের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপন করেন।

আরও পড়ুন: সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা জানালেন সেনাপ্রধান

তিনি বলেন, প্রায় ১১ লাখ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে রোহিঙ্গারা ৬ হাজার ৫০০ একর ভূমির ওপর গড়ে তোলা ৩১টি ক্যাম্পে বসবাস করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের আশ্রয়, জীবন রক্ষাকারী জরুরি চিকিৎসা, খাদ্য, পানীয় সরবরাহ ও মানসিক আঘাত ব্যবস্থাপনার কাজ করছে।

জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘তাদের ক্যাম্পের নিরাপত্তা বিধান এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ত্রাণ কার্যক্রম সমন্বয় করছে। ভূমিধস, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা উপদ্রুত সমুদ্র উপকূলবর্তী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দুর্যোগের ঝুঁকি লাঘবে কাজ করছে।

ইউএনএইচসিআর, আইওএম ও অন্যান্য জাতিসংঘ সংস্থা এবং দেশি-বিদেশি বেসরকারি সংস্থার মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে সহায়তা দিচ্ছে। এসব মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যকার সীমান্ত উত্তেজনা নিরসনেও সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মিয়ানমারের সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে আমরা সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করেছি।

কৌশলগত পর্যায়ে সরাসরি যোগাযোগ ছাড়াও বিভিন্ন পথে আমাদের উদ্বেগের কথা মিয়ানমারকে জানিয়ে দিয়েছি। এ ধরনের যোগাযোগ স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখা এবং ভুল-বোঝাবুঝির অবসানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলেও মনে করেন সেনাপ্রধান।

কালের আলো/এএ/এমএএএমকে