ঘুষবিহীন পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে মুগ্ধ প্রধানমন্ত্রী, ধারাবাহিকতা বজায় রাখার নির্দেশ

প্রকাশিতঃ 10:02 pm | September 15, 2019

অ্যাক্টিং এডিটর, কালের আলো :

পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি রীতিমতো ‘সোনার হরিণ’! লাখ লাখ টাকা ঘুষের ছড়াছড়ি! কিন্তু এসব পুরনো ধারাপাত। হাল সময়ে বদলে গেছে সেই চিত্র। এবার স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত নিয়োগের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলা গৌরবময় এ বাহিনীর দীর্ঘদিনের বদনাম মুছে গেছে। আর এমন অসম্ভব কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনা ও অনুপ্রেরণার দৌলতেই।

আরও পড়ুন: পুলিশকে জনবান্ধব হতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

ঘুষমুক্ত ও সম্পূর্ণ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় এ নিয়োগ সম্পন্ন করতে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীকে বঙ্গবন্ধু কন্যার এমন নির্দেশনা তিনি সফলভাবে বাস্তবায়ন করেই ষোল কোটির বাংলাদেশের কাছে অনুকরণীয় এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

নিজেদের সদিচ্ছায় কোনো প্রকার অর্থ লেনদেন, অনিয়ম ও তদবির ছাড়াই স্বচ্ছতা ও মেধার ভিত্তিতে প্রায় ১০ হাজার কনস্টেবল নিয়োগ দিয়ে অনন্য এক উদাহরণ তৈরি হওয়ায় জনমানসে উজ্জ্বল হয়েছে সরকারের ভাবমূর্তি। ফলে স্বভাবতই দেশের সাধারণ মানুষের আস্থা, বিশ্বাস ও নির্ভরতার প্রতীক পুলিশের দৃঢ়কন্ঠে প্রশংসা করছেন প্রধানমন্ত্রী।

আরও পড়ুন: পুলিশের প্রশংসায় প্রধানমন্ত্রী, উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় নিজেদের সহযাত্রী মনে করেন আইজিপি

মাত্র চারদিনের ব্যবধানে দু’বার তিনি পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে অকপটে নিজের মুগ্ধতার কথা প্রকাশ করেছেন। গত বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের মালিকানাধীন কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কনস্টেবল নিয়োগের দৃষ্টান্ত সবাইকে অনুসরণের নির্দেশনা দেন।

এরপর রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৬তম বিসিএস ব্যাচের সহকারী পুলিশ সুপারদের (এএসপি) পাসিং আউট প্যারেডে বক্তৃতাতেও মনখোলা প্রশংসা করেছেন পুলিশ বাহিনীর। পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘আমাদের পুলিশ বাহিনী যে এবার নতুন রিস্ক্রুট করেছে সেখানে একটি লোকও কোন দুর্নীতি বা ঘুষ দেওয়ার কথা বলতে পারেনি।

এ নিয়োগে এতো স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়েছে। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করার জন্য এ পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী দিনেও এ ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই আপনারা (পুলিশ) এগিয়ে যাবেন।’

এর আগে বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের মালিকানাধীন কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘পুলিশে নিয়োগের ক্ষেত্রে ঘুষ দুর্নীতির একটি বদনাম ছিল। পুলিশ সেখানে এবার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

ঘুষ, দুর্নীতিমুক্তভাবে যেভাবে নিয়োগ হয়েছে অতি সাধারণ পরিবারের গরিব ছেলে-মেয়েরা চাকরি পেয়েছেন। প্রত্যেকে সততার সাথে দায়িত্ব পালন করে বিশেষ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সকলের এ বিষয়টি অনুসরণ করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনার ফলেই স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্তভাবে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে এমনটি বারবার উচ্চারণ করেছেন পুলিশ বাহিনীতে এক অনি:শেষ প্রেরণার প্রতীক পুলিশ প্রধান ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার)।

তিনি একাধিকবার বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত প্রক্রিয়ায় পুলিশে নিয়োগ প্রদান সম্ভব হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপারদেরও ভূমিকা ছিল।’ এতো বড়ো সফলতা আসায় তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশের প্রতি সংবেদনশীল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বিভিন্ন সময়েই নিজের বক্তব্যে এ বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘১০ থেকে ১৫ বছর আগের পুলিশ আর এখনকার পুলিশ এক নয়। বর্তমানে পুলিশ জনবান্ধব পুলিশে রূপান্তরিত হয়েছে।

পুলিশ আস্থার প্রতীক হিসেবে মানুষের বিশ্বাসের জায়গাটি দখল করে নিয়েছে। পুলিশকে আধুনিকীকরণ ও উন্নয়নের ধারা চলমান রয়েছে। পুলিশ যদি নিরাপত্তার দায়িত্ব না নেয় তাহলে উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়বে এমন ভাবনায় প্রধানমন্ত্রী পুলিশকে যথেষ্ট অগ্রাধিকার দেন।’

১৯৭২ সালের ৯ মে পুলিশ বাহিনীর প্রথম প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়েছিল রাজশাহীর সারদায়। সেই কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেখানে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর সেই অমর উচ্চারণ এবার প্রধানমন্ত্রীর কন্ঠে।

বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আপনারা স্বাধীন দেশের পুলিশ। আপনারা বিদেশি শোষকদের পুলিশ নন, জনগণের পুলিশ। আপনাদের কতর্ব্য জনগণের সেবা করা। জনগণকে ভালোবাসা, দুর্দিনে জনগণকে সাহায্য করা।’

বঙ্গবন্ধুর পর বাংলাদেশের স্বনির্ভর ও আলোকিত মহাযাত্রার পথ রচনা করেছেন তাঁরই জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতিহাসের মহানায়কের স্বপ্ন সফলের প্রত্যয়ে অদম্য প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছেন।

দেশের গৌরব ও অর্জনের আলোকশিখা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৬তম বিসিএস ব্যাচের সহকারী পুলিশ সুপারদের (এএসপি) পাসিং আউট প্যারেডের বক্তৃতায় বলেছেন, ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে।

আমাদের পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে বলেই সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ ও জঙ্গিবাদ দমন করতে পেরেছি। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে এবং অভিযান চলবে।’

বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে পুলিশের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ২০১১ সালে স্বাধীনতা পদকে পুলিশ বাহিনীকে ভূষিত করেছি। যাতে করে পুলিশ বাহিনীর সকল সদস্য গর্বের সাথে অনুভব করতে পারে তাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশেষ অবদান ছিল।’

‘বিপদের সময় জনগণের বন্ধু’ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পুলিশ কর্মকর্তাদের তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের অবশ্যই অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে।’ পুলিশকে জনগণের কল্যাণ, শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও নির্দেশ দেন তিনি।

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে মন্তব্য করে জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশের দায়িত্ব বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ যাতে সেবা পায় সেজন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ আমরা নিয়োগ দিয়ে যাচ্ছি। উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ বাড়ানো হয়েছে বেতন-ভাতাও।

প্রধানমন্ত্রী গত ১০ বছরে পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে তাঁর সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। এর মধ্যে পুলিশে প্রায় ৪৯ হাজার ২০০ পদ সৃষ্টি, বর্ধিত জনবলের সঙ্গে প্রয়োাজনীয় যানবাহন ও সরঞ্জামাদি সরবরাহ, গাজীপুর ও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ গঠন, জঙ্গি ও সন্ত্রাস নির্মূলে পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), টুরিস্ট পুলিশ, নৌ পুলিশ এবং দু’টি স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন গঠন উল্লেখযোগ্য।

সরকার প্রধান তুলে ধরেন গার্ড অ্যান্ড প্রটেকশন পুলিশ’ গঠনের উদ্যোগ, এসআই পদকে তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে এবং দ্বিতীয় শ্রেণির ইন্সপেক্টর পদকে প্রথম শ্রেণি পদে উন্নীত করা, জাতির জনক প্রদত্ত আইজিপির র‌্যাংক ব্যাজ পুন:প্রবর্তন করে আইজিপির পদকে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় উন্নীত করা, সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন, আরও চারটি ট্রেনিং সেন্টার স্থাপনের কাজ শুরু, ঝুঁকি ভাতা প্রবর্তন, ‘৯৯৯’, বিডি পুলিশ হেল্পলাইন এবং অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্ভিস চালু, পুলিশের বিভিন্ন স্তরে নারীদের নিয়োগ, পুলিশের আবাসন, রেশন, চিকিৎসা সুবিধা বাড়ানো, উন্নত প্রশিক্ষণ, লজিস্টিক, যানবাহন, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নের কথা।

নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে হ্যাট্টিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের নবীন কর্মকর্তারা যারা প্রশিক্ষণ নিয়ে নতুন কাজে যাচ্ছেন তাদেরকে এটাই আহবান করবো সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সাথে আপনারা দায়িত্ব পালন করবেন।’

তিনি বলেন ‘আপনারা জনগণের পুলিশ। তাদের কল্যাণ, শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আপনাদের দায়িত্ব। বর্তমান সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। আমরা দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। সেজন্য শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অপরিহার্য।’

কালের আলো/এএ/এমএএএমকে