দুর্নীতির মুলোৎপাটনে ‘অটল’ প্রধানমন্ত্রী, অব্যাহত অভিযানেই টেকসই সমাধান
প্রকাশিতঃ 9:07 am | September 25, 2019
এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, কালের আলো :
সুশাসন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের পথে দুর্নীতিই কঠোর প্রতিবন্ধক হয়ে উঠেছিল। দিব্যি বসেছিল অবৈধ ক্যাসিনো, চাঁদাবাজি, টেন্ডার ও তদবির বাণিজ্যের উন্মত্ত বেপরোয়া হাট! সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্যই অন্তরাত্মার ডাকে সাড়া দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘শুন্য সহিষ্ণুতা’ নীতি নিয়ে এসবের বিরুদ্ধে নিজ ঘর থেকেই শুরু করেছেন অ্যাকশন।
আরও পড়ুন: ক্যাসিনোতে অভিযানকে স্বাগত জানালেন সেনাপ্রধান
বঙ্গকন্যার এমন কঠোরতার গুরুত্ব, যথার্থতা ও ইতিবাচক প্রভাবের সুফল ইতোমধ্যেই মিলতে শুরু করেছে। দেশ, জনগণ ও স্বচ্ছতার প্রশ্নে আপসহীন প্রধানমন্ত্রীর এমন সুদৃঢ় অবস্থানে এখন ব্যাপকভাবে আত্মবিশ্বাসী দেশের বিশিষ্টজন থেকে শুরু করে সচেতন সাধারণ মানুষ।
সরকার প্রধানের এমন দূরদর্শী, দক্ষ নেতৃত্বগুণ ও বিচক্ষণ সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন দেশের মানুষের ভরসা ও বিশ্বাসের মূর্ত প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও।
পেশাদারিত্ব, দক্ষতা, সততা, নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলার নজির স্থাপন করা এ বাহিনীটিকে নেতৃত্ব দেওয়া জেনারেল আজিজ আহমেদ এ সাহসী সিদ্ধান্তকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর অবস্থানের বহি:প্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন।
তাঁর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ও আশা জাগানিয়া এ বক্তব্য শিক্ষাঙ্গণ থেকে কর্মক্ষেত্র, পরিবার থেকে সমাজ সর্বত্রই আলোচিত হচ্ছে।
সমাজ জীবনকে রাহুর মতো গ্রাস করা দুর্নীতি ও অপরাধের কালো দৈত্যের বিরুদ্ধে চলমান এ হাইভোল্টেজ অভিযান অব্যাহত থাকলে অপরাধ যে কমে আসবে আর এর মাধ্যমেই যে টেকসই সমাধান সম্ভব এমনটিও মনে করেন সেনাপ্রধান। মহান মুক্তিযুদ্ধের সুমহান চেতনায় গড়ে উঠা গৌরবময় সেনাবাহিনী জনগণেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ।
আবার দেশের সাধারণ মানুষই মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকারিত্ব বহন করা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ ও তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার শক্তির উৎস। এ মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়নই প্রধানমন্ত্রীর পরম আরাধ্য হওয়ায় দুর্নীতি বিরোধী তাঁর নির্মোহ অবস্থানকে অভিবাদন জানিয়েছেন এ চারতারকা জেনারেল। সেনাপ্রধানের এমন প্রতিক্রিয়া খুবই উচ্ছ্বসিত করেছে উন্নয়নের পথে অগ্রসরমান দেশের নাগরিকদের।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকেই রাজধানীর মতিঝিল, ধানমন্ডি, মিরপুর, গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকায় এ নিয়ে নাগরিকদের ইতিবাচক আড্ডা-আলোচনা হয়েছে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় আত্মত্যাগ, কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে দেশের জন্য সম্মান ও মর্যাদা বয়ে আনা বাহিনীটির নাম ব্যবহার করে অপকর্ম করা অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক ক্লাবের বিরুদ্ধেও নিজের কঠোর মনোভাবের কথাও জানিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
ফলে ওই সংগঠনগুলোর যারা নেতৃত্ব দেন তাঁরাও পেয়ে গেছেন মহাবিপদসংকেত। তাদের কপালেও এখন দুশ্চিন্তার বলিরেখা। যথাযথ প্রতিকারই একমাত্র প্রতিবিধান এমন গুরুত্ববহ ইঙ্গিতও রয়েছে তাঁর কন্ঠে।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে সাভার সেনানিবাসের মিলিটারি ফার্মে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন দেশের প্রথম ‘মিল্কিং পার্লার’ উদ্বোধনে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, ‘সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্তদের সৈনিক ক্লাব বা এই ধরনের আরও দু’য়েকটি ক্লাবে আমাদের নজর আছে।
আমাদের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থাকে এগুলোর ব্যাপারে খোঁজ নিতে বলেছি। অবশ্যই এগুলোর ব্যাপারে যা করণীয়, আমরা করবো।’
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার সেনানিবাসস্থ শ্যুটিং ক্লাব পয়েন্টে আন্ডারপাস নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজেও সেনাপ্রধানের বক্তব্যের প্রশংসা করেছেন।
বলেছেন, ‘এ অভিযানকে সেনাপ্রধান স্বাগত ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। কাজেই এখানে চুনোপুঁটি আর রাঘব বোয়াল বলে কথা নয়। আপনি হয়তো দেখতে চুনোপুঁটি কিন্তু কাজটা করেছেন রাঘব বোয়ালের মতো।
যাদেরকে ধরা হচ্ছে, সত্যিকার অর্থেই তারা অপকর্মকারী। সত্যিকার অর্থেই তারা অভিযানের মূল টার্গেট।’
অবৈধভাবে পরিচালিত ক্যাসিনো ও ক্লাবসহ বিভিন্ন জায়গায় জুয়ার রমরমা বাণিজ্য বন্ধের পাশাপাশি দলমতের উর্ধ্বে উঠে সপ্তাহখানেক আগে শুদ্ধি অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এতে নিজ দলের অসৎ নেতাদের মেরুদন্ড ভেঙে দেওয়ার নজির স্থাপন হওয়ায় উজ্জ্বল হয়েছে সরকারের ভাবমূর্তিও।
জানতে চাইলে বিশ্লেষক ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান কালের আলোকে বলেন, ‘ক্লাবভিত্তিক জুয়ার আসর বন্ধসহ সমাজ বিরোধী কর্মকান্ডের শিকড় উৎপাটনে বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যয় দৃঢ়তা সর্বস্তরে প্রশংসা কুড়িয়েছে।
এতে অপরাধীরা আর অপরাধ করার সাহস করবে না। সততার ব্রত নিয়ে কাজ করেই প্রধানমন্ত্রী দেশের সাধারণ মানুষের মাথার তাজ হয়ে থাকবেন।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেদের ইশতেহারেও দুর্নীতি নির্মুলের অঙ্গীকার করেছিল আওয়ামী লীগ। টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের প্রায় ৯ মাসের মাথায় জঙ্গি ও মাদকের মতোই দুর্নীতিকে কার্যকরভাবে নির্মূল করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে মুজিব কন্যা জনমনে আস্থা ও স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন।
বিশ্বনন্দিত রাজনীতিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আবারো নতুন করে মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বেড়েছে বহুগুণে। চলমান এ অভিযান দেশবাসীর কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।
তাঁরা মনে করেন, ‘দলীয় পরিচয় ভাঙিয়ে অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করে টাকার কুমির হয়ে ক্ষমতার দাপট দেখানো দুর্বৃত্তদের ছেঁটে ফেলে সুশাসন নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীকেই নেতৃত্ব দিতে হচ্ছে। দুর্নীতির বিষয়ে তিনি কাউকে প্রশ্রয় দেন না এটিও প্রমাণিত সত্য।’
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ কালের আলোকে বলেন, ‘দেশ ও জনগণের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর সাহসী পদক্ষেপ দেশের সাধারণ মানুষকে আশান্বিত করেছে। এতে দেশের সাধারণ মানুষের স্বত:স্ফূর্ত সমর্থন রয়েছে।
আমরা প্রবলভাবে আশাবাদী দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর এ পদক্ষেপ পূর্ণ সাফল্য লাভ করবে। ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী।’
কালের আলো/কেএএই/এমএএএমকে