আইজিপির সঙ্গে আলোড়িত-উজ্জীবিত শিশুদের দেড় ঘন্টা

প্রকাশিতঃ 10:23 pm | October 10, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

কেবল আবেগ নয়, যুক্তি-বুদ্ধির যুগপৎ সম্মিলন ঘটিয়েই প্রশ্ন করছে শিশুরা। অর্থবোধক শব্দ প্রয়োগের মাধ্যমেই সহজ-সরলভাবেই করা হচ্ছে প্রতিটি প্রশ্ন। শিশু পাচার থেকে শুরু করে, ছেলেধরা আতঙ্ক, জোরপূর্বক ভিক্ষাবৃত্তি করানো, যানজট বা শিশু হত্যা, যেন নিজেদের মনের ভেতর উঁকি দেওয়া প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরের জন্যই ওদের অধীর অপেক্ষা!

আবার জননিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা পুলিশকে কীভাবে নিজেদের বন্ধু ভাবা যায়, ইস্পাতের ফলার মতোই শিশুরা জানতে চাইলো এমন প্রশ্নের উত্তরও। কচিকাঁচাদের মাঝখানে বসে ওদের জ্ঞান, চিন্তা, প্রয়োগ, বিশ্লেষণ, সংশ্লেষণ ও মূল্যায়নের জবাব দিলেন একজন।

তিনি ‘শৃঙ্খলা নিরাপত্তা প্রগতি’ মন্ত্রে দীক্ষিত রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাহিনীর প্রধান। সার্বজনীনতা আর মানবিকতায় শাণিত পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর বিপিএম (বার) ছোট্ট সোনামণিদের আগ্রহ, আবেগ এবং অনুভূতির প্রশ্নসমূহের পুঙ্খানুপুঙ্খ উত্তর দিলেন।

পুলিশকে নিজেদের বন্ধু ভাবার মন্ত্র গেঁথে দিলেন ওদের মস্তিষ্কে। শিশুদের অসীম সৃজনশীলতা ও স্বপ্নের কথা স্পষ্ট হয়ে উঠলো আলোচনায়। দেশের পুলিশের সর্বোচ্চ কর্মকর্তার সঙ্গে কাঙ্খিত স্বপ্নের পরিপূর্ণতায় আলোড়িত-আন্দোলিত এবং উজ্জীবিত এমন দেড় ঘন্টা সময় কাটালেন এক ঝাঁক কচিকাঁচা। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) বিকেলে শিশুদের এমনই এক সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি।

বৈচিত্র্যপূর্ণ ও ভিন্নধর্মী এ আয়োজনে বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির পরিচালক আনজীর লিটন।

বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট একাডেমির মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সপ্তাহব্যাপী ‘ছোটরা বলবে, বড়রা শুনবেন’ শীর্ষক ‘আমার কথা শোনো’ অনুষ্ঠানে ‘পুলিশ আমার বন্ধু’ আলোচনায় আইজিপি শিশুদের সমৃদ্ধ ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে সরকারের অঙ্গীকার এবং শিশুদের নিরাপত্তা ও বিকাশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই পুলিশী সেবাকে আরো জনবান্ধব করার কর্মপ্রয়াসের কথা জানান।

ঔপনিবেশিক আমলের ধ্যানধারণার পরিবর্তে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে একাত্ম হয়ে পুলিশের অবিরাম পথচলার সত্য-সুন্দর ধ্বনি উচ্চকিত করেন। ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে পুলিশকে জনবান্ধব পুলিশে পরিণত করা হচ্ছে।

পুলিশের কাজে জনগণকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। সমাজের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে নিয়েই পুলিশ কাজ করছে। আমরা জনগণের বন্ধু হতে চাই, জনগণের বন্ধু হিসেবে কাজ করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য এ দেশকে সবার জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে তোলা। দেশকে সমৃদ্ধশালী ও উন্নত দেশে পরিণত করা।’

আইজিপির কাছে শিশুদের প্রশ্ন
শিশুরা প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে শিশু পাচার, ছেলে ধরা আতঙ্ক, পুলিশকে কীভাবে বন্ধু ভাবা যায়, ফুটওভার ব্রিজ, শিশুদের দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করানো, শিশু হত্যা,যানজট ইত্যাদি বিষয় আইজিপির কাছে জানতে চান। আইজিপি ধৈর্য্য ধরেই গভীর মনোযোগের সাথে শিশুদের প্রতিটি প্রশ্ন শোনেন এবং তাদের উপযোগী করে জবাব দেন।

‘পুলিশ তোমাদের সাহায্য করবে’
তারুণ্য ও প্রাজ্ঞতায় রজতশুভ্র এক উজ্জ্বল মানুষ আইজিপি ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। তিনি বিশ্বাস করেন শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক। একদিন তাঁরাই নেতৃত্ব দেবে জাতিকে। ফলত ভালোবাসা, সহানুভূতি ও সুশিক্ষার মাধ্যমে শিশুদের গড়ে তোলাটা জরুরি।

আর এজন্য শিশুদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হলেই শিশুরা অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বে ইতিবাচক ভূমিকায় নিজেদের নিয়োজিত করতে পারবে। শান্তি, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রতীক পুলিশের এ আইজি নিজেকে চেতনা ও বিবেকের পাটাতনে উপস্থাপন করেন সব সময়।

পুলিশের এ সর্বোচ্চ কর্মকর্তার কাছে শিশুরা জানতে চান ‘শিশু হত্যার মতো ঘটনায় পুলিশ কি ব্যবস্থা নেয়’? উত্তরে আইজিপি বলেন, ‘যে কোনো হত্যাই জঘন্য অপরাধ। শুধু শিশু হত্যা নয়, বাংলাদেশ পুলিশ যে কোনো হত্যার ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির নিশ্চয়তা বিধান করে থাকে।

পুলিশকে কীভাবে বন্ধু হিসেবে পাওয়া যায়, অপর এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ‘তোমরা যদি কখনো পথ হারিয়ে ফেলো, অথবা হারিয়ে যাও বা কোনো বিপদে পড়ো তাহলে আশেপাশে পুলিশকে খুঁজবে। পুলিশ তোমাদেরকে সাহায্য করবে।

পুলিশ সবসময়ই তোমাদের একজন কাছের মানুষ, একজন কাছের বন্ধু। তোমরা পুলিশের সাহায্যের জন্য ৯৯৯ নম্বরেও টেলিফোন করতে পারো। তিনি কখনো কোনো অপরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে খাবার, চকলেট, পানীয় ইত্যাদি গ্রহণ না করার জন্য শিশুদের পরামর্শ দেন। কাউকে সন্দেহ হলে আশেপাশের পুলিশকে জানানোর উপদেশ দেন আইজিপি।

এদিকে, অনুষ্ঠানের শুরুতে শিশুরা নাচ ও গান পরিবেশন করে। পরে বাংলাদেশ পুলিশ সাংস্কৃতিক পরিষদের শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

কালের আলো/এএম/এমএএএমকে