যৌবন-লাবণ্য ফিরে পাচ্ছে ব্রহ্মপুত্র : ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকার প্রকল্প

প্রকাশিতঃ 11:32 pm | April 05, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:

ব্রহ্মপুত্র নদের বিস্তীর্ণ বুকজুড়ে মাইলের পর মাইল বালুচর। গভীরতাহীন এ নদের পানিও শুন্যের কোঠায়। নদের তলদেশ শুকিয়ে রীতিমতো যেন মরুভূমি। কোথাও কোথাও আবার নদের বুকে চলছে চাষবাস। চরম নাব্যতা সঙ্কটের মুখে থাকা এক সময়ের স্রোতস্বিনী ব্রহ্মপুত্র নদের বর্তমান অবস্থা বলতে এমনই।

মরা গাঙে রূপ নেয়া ব্রহ্মপুত্রের এমন দৃশ্য এবার বদলে যাচ্ছে। আবারো রূপ-যৌবন আর লাবণ্য ফিরে পেতে যাচ্ছে এ নদ। ব্রহ্মপুত্র নদের হারানো গতিপথ ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) অবশেষে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

ব্রহ্মপুত্রসহ দেশের ৭টি নদ-নদী খননে ৫ হাজার ৯’শ কোটি টাকার ডিপিপি চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী জুনে এটি একনেকে অনুমোদন পেতে পারে বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউনুস আলী। এ প্রকল্পের আওতায় ২৮৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদটি খনন করা হবে।

ময়মনসিংহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ, জামালপুর ও শেরপুর জেলার ২৪০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। এ নদের বুকে গত ৩৬ বছরে ৭২০ বর্গকিলোমিটারের বেশি নতুন চর জেগেছে। ইতোমধ্যেই নদটির তলদেশ ভরাট হয়েছে প্রায় ২২ ফুট। অথচ আদি অবস্থায় পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের গড়ে প্রশস্থতা ছিল প্রায় ১১ কিলোমিটার।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদের ময়মনসিংহ পয়েন্টে কোথাও গভীরতা এক ফুট আবার কোথাও দুই ফুট। কোথাও আবার অনায়েসেই হেঁটে পার হওয়া যায়। কোথাও কোথাও ফসল ফলাচ্ছে চাষীরা। নদের তলদেশ দেখতে অনেকটাই বিস্তীর্ণ মাঠের মতো। আর এখানে খেলাধূলায় মেতে উঠে দুরন্ত শিশু-কিশোরের দল।

ময়মনসিংহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মো: ইউনুস আলী কালের আলোকে জানান, ব্র্রহ্মপুত্র নদ খননে আমরা একটি প্রকল্পের স্টাডি চালিয়ে যাচ্ছি। জামালপুর থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত স্টাডিতে কতটুকু নদ খনন করা যাবে, খননের পর কী হবে এসব বিষয় নিয়ে কনসালটেন্ট টিম কাজ করছে।

তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে ব্র্রহ্মপুত্র নদ খনন কাজ করবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। তাদের কাজ শেষ হলে আমরা নদ খনন কাজ শুরু করবো।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো: সাইদুল ইসলাম জানান, ব্রক্ষপুত্রসহ দেশের সাতটি নদ-নদী পুরোপুরি খনন করা হবে।

এ লক্ষে আমরা ৫ হাজার ৯শ কোটি টাকার ডিপিপি চূড়ান্ত করেছি। এর মধ্যে শুধুমাত্র ব্র্রহ্মপুত্র নদ খননেই কমপক্ষে ৩ হাজার ৩শ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। একনেকে এ প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

সূত্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র নদ খননের মধ্যে দিয়ে সরকার নিজেদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও পূরণ করতে যাচ্ছে। শিগগির প্র্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ময়মনসিংহ সফরে আসছেন। তিনি ব্রক্ষপুত্র নদ খনন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।

মূলত প্রধানমন্ত্রীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর পরই একনেকে ব্রক্ষপুত্রসহ ৭ টি নদ খননের ডিপিপি উত্থাপন হবে। পরে সেটি একনেকে অনুমোদন হবে।

সূত্র মতে, জামালপুরে ব্রক্ষপুত্রের উৎসমুখের ৬ কিলোমিটার পুরোপুরি ভরাট হয়ে যাওয়ায় ব্রক্ষপুত্র নদে ভয়াবহ নাব্যতা সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে। এ সঙ্কট কাটিয়ে তুলতে চলতি বছরের ১৬ মার্চ নৌপরিবহন সচিব মো. আবদুুস সামাদ জামালপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের উৎসমুখ পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি এ ৬ কিলোমিটার সবার আগে খনন করার প্রস্তাব করেন।

কালের আলো/আরএস/এএ