যুবলীগে নতুন নেতৃত্বের সমীকরণ, আলোচনায় উপাচার্য মীজানুর রহমান

প্রকাশিতঃ 9:46 am | October 19, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

ক্যাসিনো কেলেঙ্কারীতে বাঘা বাঘা নেতারা ধরা পড়েছেন। বহিস্কার হয়েছেন। চারদেয়ালে কাটছে তাদের জীবন। প্রতাপশালী চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীও কঠিন পরিস্থিতিতে ‘ডুব’ মেরেছেন। তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারেরও যবনিকাপাত ঘটেছে। নির্ধারিত হয়ে গেছে সপ্তম কংগ্রেসের দিনক্ষণ। ফলে এ কংগ্রেসের মাধ্যমে অনেক রথি-মহারথীরাই আসতে চাচ্ছেন যুবলীগের নেতৃত্বে।

দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে তাদের। কিন্তু কেন্দ্র থেকে প্রান্ত পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের সুসংগঠিত ও উজ্জ্বীবিত করার পাশাপাশি সংগঠনকে পূর্ণোদ্যমে চাঙ্গা করে হারিয়ে যাওয়া ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে পারবেন এমন একজন ‘চেয়ারম্যান’ অপরিহার্য হয়ে উঠেছেন বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির হাত ধরে পথচলা এ যুব সংগঠনটির।

আগামী ২৩ নভেম্বর যুবলীগের কংগ্রেসে শেষ পর্যন্ত কাদের ভাগ্যের শিকে ছিঁড়বে তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা। আর এতে সামনে আসছে নানা সমীকরণ। তবে হঠাৎ করেই সবাইকে ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন ওয়ান ইলেভেনের ‘অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ’ সংগঠনটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড.মীজানুর রহমান।

ওমর ফারুক চৌধুরী ও হারুন অর রশিদের নেতৃত্বাধীন কমিটির জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্যও তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাসিনো ঝড়ে যুবলীগের ডেরা লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ায় হৃদয়ে রক্তক্ষরণ তৈরি হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এ উপাচার্যের।

সংগঠনের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা থেকেই সংগঠনটির এ জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, ‘নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী) দায়িত্ব দিলে যুবলীগের হাল ধরবো। সংগঠনের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করার চ্যালেঞ্জ নিতে আমি প্রস্তুত।’

শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) রাতে জনপ্রিয় অনলাইন গণমাধ্যম কালের আলো’র সঙ্গে আলাপে এ কথা বলেন এ রাজনৈতিক বিশ্লেষক। মূলত একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে উপস্থাপকের প্রশ্নের জবাবে ড.মীজানুর রহমান বলেন, ‘এখন নেত্রী যদি মনে করেন যে যুবলীগের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্যে আমি উপযুক্ত এবং তিনি যদি আমাকে দায়িত্ব দেন, তখন আমি ভাইস চ্যান্সেলরের (ভিসি) দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে যুবলীগের দায়িত্ব নেব।’

ওই বক্তব্যকে ঘিরে দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে তাকে নিয়ে বেশ আগ্রহ তৈরি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, আগামী ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেসের মাধ্যমে সংগঠনের ইমেজ পুনরুদ্ধারের বিষয়টিই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাচ্ছে। ফলে ড.মীজানুর রহমানের মতো পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির মানুষদের মাধ্যমেই স্বাধীনতার সংগঠক শেখ ফজলুল হক মনির হাতে গড়া এ সংগঠনটি আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

দল ও নেত্রীর চরম দু:সময়েও ক্যারিশমেটিক নেতৃত্বের স্বাক্ষর রেখেছিলেন তিনি। এসব বিষয়ে কালের আলো’র সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন উপাচার্য ড.মীজানুর রহমান।

পালিয়ে যাননি ওয়ান ইলেভেনে
ওয়ান ইলেভেনে চরম নেতৃত্ব শুন্যতা তৈরি হয়েছিল যুবলীগে। সংগঠনটির ওই সময়কার চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম চলে গিয়েছিলেন ভারতে। ওই সময় বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের এ অঙ্গসংগঠনের হাল ধরেছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য় অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান।

নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে সংগঠনকে আন্দোলনমুখী করা, শেখ হাসিনা মুক্তি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। পালন করেছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব। এরপর ২০১৩ সালের ২০ মার্চ তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ উপাচার্য নিয়োগ পাওয়ার পর রাজনীতিতে নিজেকে নিষ্ক্রিয় করে রাখেন। এরপর ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ দ্বিতীয়বারের মতো উপাচার্য হিসেবে তিনি নিয়োগ পান।

দুই দায়িত্ব একসঙ্গে পালন সম্ভব নয়
ড.মীজানুর রহমান কালের আলোকে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের এখনও জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য, অর্থাৎ, এক নম্বর ভাইস চেয়ারম্যান। স্বাভাবিকভাবে চেয়ারম্যান না থাকলে তো, আমার ওপরেই দায়িত্ব এসে পরে।

উপাচার্য হওয়ার পরেও আমি যুবলীগ থেকে পদত্যাগও করিনি, অব্যাহতি নেইনি। অবশ্য আমি ভাইস চ্যান্সেলর’র দায়িত্ব গ্রহণ করার পর যুবলীগের সাথে কোন সংশ্লিষ্টতা রাখিনি। কেননা দুইটা কাজ একসাথে করা সম্ভব না। সুতরাং আমি ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্বটিই কন্টিনিউ করছি। যুবলীগের সাথে সেভাবে আর যোগাযোগ নেই।’

যুবলীগের সাবেক এ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘এখন যুবলীগ সংকটের মধ্যে আসছে। লক্ষ লক্ষ যুবক সবাই তো আর ক্যাসিনোর সাথে জড়িত না। এখন নেত্রী যদি মনে করেন যে, এটার নেতৃত্ব দেওয়ার জন্যে আমি উপযুক্ত, আমাকে দায়িত্ব দেন। তখন আমি ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে যুবলীগের দায়িত্ব নেব।’

জীবনে কখনও কোন পদ চেয়ে নেইনি
ড.মীজানুর রহমান বলেন, ‘আমাকে যদি বলা হয়, আমি জীবনে কখনও কোনদিন কোন পদ চেয়ে নেইনি। প্রেসিডিয়াম মেম্বার পদও আমি চেয়ে নেইনি, আমাকে দেওয়া হয়েছে। আমি ভাইস চ্যান্সেলর হয়ছি, এটা নিয়েও কারও কাছে যাওয়া লাগেনি। নেত্রী আমাকে যখন যে দায়িত্ব দিছে আমি চেষ্টা করেছি সেটা সাধ্যমত করার জন্য।

তিনি বলেন, ‘আমাকে যুবলীগের দায়িত্ব দেওয়া হয় তখন সংগঠন পরিচালনা ও উপাচার্য পদে দায়িত্ব তো আর একসঙ্গে করা যাবেনা। তখন ভাইস চ্যান্সেলরের পদটা ছেড়ে চলে আসব এবং যুবলীগের হাল ধরবো।’

ওয়ান ইলেভেনে যুবলীগ আগলে রেখেছি
ড.মীজানুর রহমান কালের আলোর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘যুবলীগের জন্য তো আমি আজীবনই করলাম। ওয়ান ইলেভেনে কেউ কেউ যখন দেশের বাইরে পালিয়ে গেছে তখন আমি ছিলাম। ওই সময় জিল্লুর রহমান সাহেব ছিলেন আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। আমি আর কয়েকজন মিলে সেই সময় পুরো যুবলীগটা আগলে রেখেছি। সব আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছি। এখন যুবলীগের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার জরুরি হয়ে পড়েছে। আর এজন্য আমি চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত।

সৎ ও পরিচ্ছন্ন নেতৃত্ব জরুরি
ড.মীজানুর রহমান মনে করেন, যুবলীগের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সৎ ও পরিচ্ছন্ন নেতৃত্ব জরুরি। তিনি বলেন, ‘সৎভাবে ব্যবসা বাণিজ্য ও জীবন যাপন করে, ইনকাম ট্যাক্স দেয়, আন্দোলন-সংগ্রামে অবদান রয়েছে এমন মানুষদের যুবলীগের নেতৃত্বে আসা উচিত। ক্যাসিনো কারবারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই, টেন্ডারবাজি বা চাঁদাবাজি করে না এমন লাখ লাখ নেতা-কর্মী রয়েছে যুবলীগের।

কালের আলো/আরইএ/এমএএএমকে