নীতিমালা মেনেই যোগ্য প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত, চ্যালেঞ্জ শিক্ষামন্ত্রীর

প্রকাশিতঃ 7:01 am | October 28, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

প্রায় সাড়ে ৯ বছর পর ২ হাজার ৭৩০ টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করেছে সরকার। সরকার প্রধান শেখ হাসিনা একসঙ্গে রেকর্ডসংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে তৈরি করেছেন নতুন ইতিহাস।

আরও পড়ুন: শিক্ষকদের ‘সুদিনের নির্মাতা’ প্রধানমন্ত্রী

দেশের প্রথম নারী শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনির হাত ধরে এমপিও’র বন্ধ দরজা খুলে যাওয়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে আনন্দের ফল্গুধারা বইতে শুরু করেছে। তবে এরই মধ্যে আবার নানা অভিযোগও উঠতে শুরু করেছে।

এমপিওভুক্তির তালিকায় থাকা ২১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে ভুল ও অসঙ্গতির তথ্য প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে। তবে এ বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি। নীতিমালা অনুসরণ করে যোগ্য প্রতিষ্ঠানকেই এমপিওভুক্ত করা হয়েছে বলে স্পষ্ট ভাষায় তিনি জানিয়ে দিয়েছেন।

মন্ত্রী বলেছেন, ‘২১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু এর মধ্যে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও অযোগ্য নয়। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে নীতিমালা পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করা হয়েছে। এমনকি যোগ্য কোন প্রতিষ্ঠানও তালিকা থেকে বাদ যায়নি।

আরও পড়ুন: ৯ বছর পর দীপু মনি!

রোববার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর নীলক্ষেতে বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ভবনে এমপিওভুক্তি নিয়ে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বসেন শিক্ষামন্ত্রী। সেখানে অভিযোগ উঠা ২১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিষয়েই সোজাসাপ্টা কথা বলেন।

এমপিওভুক্তির বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এমপিও নীতিমালায় উল্লিখিত মানদণ্ড অনুসরণ করে আবেদন করা ৯ হাজার ৬১৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুই হাজার ৭৩০টি যোগ্য বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে সফটওয়ারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাছাই করা হয়।

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য অনলাইনে সাবমিট করে। এর মধ্যে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পাশের হার সংশ্লিষ্ট তথ্য বোর্ড থেকে গ্রহণ ও যাচাই করা হয়। এরূপ নানা প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠান বাছাই করা হয়েছে।

এমপিও পাওয়া ১৩ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যুদ্ধাপরাধীসহ বিতর্কিত ব্যক্তিদের নামে বলা হচ্ছে। যোগ্যতা বিবেচনাতেই এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেওয়া হয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে কোনো রকম রাজনৈতিক বিবেচনা করা হয়নি।

শুধু যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত করা হয়েছে। তবে যুদ্ধাপরাধী বা কুখ্যাত ব্যক্তিদের নামে প্রতিষ্ঠিত চিহ্নিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিবর্তন করে চলেছে।’

একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের পর এমপিওর তালিকায় স্থান পেল কিভাবে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয়করণকৃত একটি প্রতিষ্ঠান এমপিওর তালিকায় এসেছে, এটি সত্য। তবে দুই হাজার ৭৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে এই একটি মাত্র ভুল, এটি শতাংশের হিসেবেই আসে না।’

তিনি বলেন, ‘ওই প্রতিষ্ঠানটি সরকারিকরণের আগে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করা হয় এবং চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়। এ বিষয়ে কেউ রিপোর্ট না করায় এ বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তবে এটি এমপিভুক্তির বিষয়ে কোন অনিয়ম নয়।

সরকারিকরণের কারণে স্বাভাবিকভাবে এ প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির কোন প্রয়োজন না থাকায় এ আদেশ ওই প্রতিষ্ঠানের জন্য স্বাভাবিকভাবেই কার্যকর হবে না।’

এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘যেসব তথ্যের ভিত্তিতে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে, যাচাইয়ে যদি তা ভুল বা অসত্য প্রমাণ হয়, তাহলে ওইসব প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মন্ত্রী জানান, ৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অযোগ্য বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার ঝলইশাল শিরি ইউনিয়নের নতুন হাট টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই বলে অভিযোগ করা হলেও এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী, শিক্ষক থেকে শুরু করে সব রকমের অস্তিত্ব রয়েছে বলে রোববার (২৭ অক্টোবর) সংশ্লিষ্ট জেলা শিক্ষা অফিসার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এমপিওর সব রকমের শর্ত মেনেছে এ প্রতিষ্ঠানটি। আগে ভাঙাচোরা, জরাজীর্ণ ঘরে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতো। এমপিও হওয়ার পর তাঁরা নতুন করে দালান নির্মাণ করছে। এ প্রতিষ্ঠানের পাসের হারের তথ্য সংশ্লিষ্ট বোর্ড থেকে নেওয়া হয়েছে।’  

নরসিংদী আইডিয়াল কলেজ ও নরসিংদী বিজ্ঞান কলেজ ভাড়া বাড়িতে চললেও এ সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, ‘এমপিওভুক্তির জন্য স্বীকৃতি একটি অন্যতম শর্ত। কোন কোন ক্ষেত্রে নিজস্ব ভবন না থাকলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিক্ষাক্রম নিজস্ব ভবনের মধ্যে পরিচালনা করা হবে বলে শর্ত আরোপ করা হয়।

কেউ যদি এ শর্ত পালন করে না থাকে এবং এ আদেশে এমপিওভুক্ত হয়ে থাকে তাহলে পরবর্তীতে পরীক্ষাকালে উল্লেখিত শর্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। স্বীকৃতির ক্ষেত্রে নিজস্ব ভবনের কোন শর্ত দেওয়া না থাকায় এর এমপিভুক্তি ঠিক আছে।’

পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার সন্দেশ দীঘি নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে বসার স্থানও নেই। এমনকি ফলাফলও ভালো নয় এমন অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বিশেষ বিবেচনায় এমপিওভুক্ত করা হয়েছে।

এ উপজেলা থেকে আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়নি। ফলে এ বিবেচনাতে নীতিমালা শিথিল করে সবচেয়ে ভালো ফলাফল হিসেবেই এ প্রতিষ্ঠানটিকে এমপিওভুক্তির তালিকায় রাখা হয়েছে।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যে ৮৯ টি উপজেলায় কোন প্রতিষ্ঠান যোগ্য বিবেচিত হয়নি সে সকল উপজেলায় নীতিমালার বিশেষ বিবেচনার ধারা প্রয়োগ করে যোগ্যতার মানদন্ড কিছুটা শিথিল করে যোগ্য বিবেচিত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। এর পরও ৩১ টি উপজেলায় কোন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়নি। তবে এর মধ্যে ২৩ টি উপজেলার কোন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য আবেদনই করেনি। অর্থাৎ যেসকল উপজেলা থেকে এমপিওভুক্তির জন্য আাবেদন করা হয়েছে তার মধ্যে ৮ টি উপজেলায় কোন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বিশেষ বিবেচনার ধারা প্রয়োগ করার পরও যোগ্য বিবেচিত না হওয়ায় এমপিওভুক্ত হয়নি।

ডা.দীপু মনি এমপি বলেন, এত যাচাই বাছাইয়ের পরও যদি নীতিমালা অনুযায়ী কোন অযোগ্য প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে তবে অবশ্যই সঠিক তথ্য প্রাপ্তির সাথে সাথে তার এমপিওভুক্তি বাতিল করা হবে এবং অসত্য বা ভুল তথ্য প্রদানের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

দেশের প্রথম এ নারী শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এমপিওভুক্তির শর্ত রয়েছে, এমপিওভুক্তির আদেশ জারির পরে যে কোন পর্যায়ে যদি প্রমাণিত হয় যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটি কোন শর্ত ভঙ্গ করেছে বা অসত্য তথ্য প্রদান করে এমপিওভুক্ত হয়েছে, সে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির আদেশ কার্যকর হবে না এবং অসত্য তথ্য প্রদানকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’  

কালের আলো/এমএইচএ/এমএএএমকে