নতুন বর্ষ ওই এলো
প্রকাশিতঃ 1:01 am | April 14, 2018
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
‘নববর্ষের আশির্বাদ’ কবিতায় কবি গোলাম মোস্তফা লিখেছেন- ‘‘ওই এলোরে ওই এলো, নতুন বর্ষ ওই এলো, তরুণ তপন উঠলোরে, ধ্বস্ত তিমির ছুটলোরে, নওরোজের এই উৎসবে, ওঠ জেগে আজ ওঠ সবে।’’ কবির কবিতার মতোই আজ আজ পহেলা বৈশাখ। বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন।
বাঙালির চিরন্তন ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় বর্ষবরণের আনন্দে, হালখাতার নবায়নে আজ জীবনে নতুন স্বপ্ন সাজানোর দিন। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক এ সর্বজনীন উৎসবের দিন।
গ্রীষ্মের তীব্র খরতাপ উপেক্ষা করে দেশের প্রতিটি পথে, মেলায়, অনুষ্ঠানে থাকবে আজ লাখো কোটি মানুষের প্রাণচাঞ্চল্য, উৎসব মুখরতার বিহ্বলতা। নতুন বছর মানেই এক নতুন সম্ভাবনা, নতুন আশায় পথচলা। সব অপ্রাপ্তি ভুলে গিয়ে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনের লগ্নে একটি আত্মমর্যাদাসম্পন্ন গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়েই বাঙালি পালন করবে বৈশাখী উৎসব।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের আকাঙ্খার সঙ্গে একাকার আজ নববর্ষে আমাদেরও প্রত্যাশা : ‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ/তাপস নিঃশ্বাস বায়ে… মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক…/মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’
শাশ্বত সেই শুচিশুভ্রতার স্বপ্নে বিগত বছরের জীর্ণ মালিন্যকে পেছনে ফেলে আজ নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার দিন। নতুন স্বপ্নের পাশাপাশি একটি বছরের জন্য হালখাতা খোলার দিন পহেলা বৈশাখ। তাই নববর্ষ বাঙালি ঐতিহ্যের অহঙ্কার।
রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ নববর্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
নববর্ষ উদযাপনে ময়মনসিংহসহ সারাদেশ এখন উৎসবে মাতোয়ারা। সবার প্রাণে আজ যেন বেজে উঠেছে বিদ্রোহী কবির সেই দৃপ্ত আকাঙ্খাও : ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর/তোরা সব জয়ধ্বনি কর/ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড় … তোরা সব জয়ধ্বনি কর।’
এই সুরধ্বনির ভেতর দিয়েই নতুন বছরে দৃপ্ত আশায় উচ্চকিত হয়ে দেশজুড়ে উদযাপিত হবে নববর্ষ। চৈত্রের শেষ দিনে গ্রাম ও শহরে ব্যবসায়ীরা গত বছরের বিকিকিনির হিসাব-নিকাশ চুকিয়ে দিয়েছেন। আজ খুলবেন তারা হালখাতা। রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে বসেছে বৈশাখী মেলা।
আধুনিক জীবনে নানা উপাচারের সমারোহে খেরোখাতায় হিসাব রাখার প্রচলন এখন উঠেই গেছে। তবু বাঙালির চিরায়ত উৎসবের দিন পহেলা বৈশাখে আজ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হবে হালখাতা। মিষ্টিমুখ করানো হবে ক্রেতাদের। বিশেষ করে পুরান ঢাকায় হালখাতা চলবে পঞ্জিকার নববর্ষ হিসাবে আগামীকালও।
রাজধানী ছাড়া গ্রামাঞ্চলেও বৈশাখকে বরণ করে নিতে যথারীতি বসেছে বৈশাখী মেলা, চলবে লোকগানের আসর, যাত্রাপালা। এসব আয়োজনে গ্রামের সহজ-সরল মানুষ রাতভর মেতে থাকে নির্মল আনন্দে। বৈশাখের ঐতিহ্যবাহী খাবার ইলিশ-পান্তা ছাড়াও আজ ঘরে ঘরে তৈরি হবে মুখরোচক পিঠা, পায়েস, ভিন্ন ও দেশীয় নানা ধরনের পিঠা।
কালের আলো/এসএইচ