মান্দায় সুজন সখীর ঘাটে নদীর বাঁধ বালু দিয়ে নির্মাণ: এলাকাবাসীর মনে শঙ্কা
প্রকাশিতঃ 1:09 pm | April 24, 2018
নওগাঁ প্রতিনিধি, কালের আলো:
নওগাঁর মান্দা উপজেলার বুড়িদহ বাজারের পার্শ্বে সুজনসখী খেয়াঘাট নামক স্থানে আত্রাই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের রাস্তা ভেঙে যাওয়া অংশ বালু দিয়ে পুণ:নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে গ্রীষ্মের এক দিনের ঝড়ো বৃষ্টিতেই বাঁধের বালু ধসে গিয়ে ছোট-বড় অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বাঁধের পূর্ব পাশের নদীর অংশে ফাটল ধরে অনেকটা দেবে গেছে।
জরুরি ভিত্তিতে বাঁধটিতে সিসি ব্লক স্থাপন করা না হলে আগামী বর্ষায় ওই স্থানটি আবারও ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার কারণে বন্যার শঙ্কায় রয়েছে এ অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ।
গত বছরের আগস্টে প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার অন্তত ২০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রসাদপুর-জোতবাজার রাস্তার বুড়িদহ বাজারের অদূরে সুজনসখী খেয়াঘাটের বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় রক্ষা করা হয় ওই বাঁধের আরো অন্তত ১৫টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান।
বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় মান্দা উপজেলার ব্যারিল্যা, বটতলী,ন্যাড়াডাঙ্গী, নুরুল্যাবাদ, কুসুম্বা, কালিকাপুর, তেঁতুলিয়া, প্রসাদপুর ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম। এ ছাড়া রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বেশ কিছু গ্রাম বন্যাকবলিত হয়। নষ্ট হয়ে যায় হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল। ভেসে যায় অসংখ্য পুকুরের মাছ। পানিবন্দি হয়ে পড়ে অন্তত এক লাখ মানুষ।
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর চলাচলের জন্য নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড শুধু বালু দিয়ে ভাঙন স্থানে মেরামতের কাজ করে। দ্বিতীয় দফায় ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে দায়সারাভাবে অবশিষ্ট কাজ করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। দুই ধারের মাটি কেটে তুলে নেওয়ায় বাঁধটি আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বাঁধটি টিকিয়ে রাখার জন্য সিসি ব্ল¬কের ব্যবস্থা করা হয়নি। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও চরম হতাশা বিরাজ করছে।
বাঁধ মেরামতকাজের মান নিয়ে চরম ক্ষোভ জানিয়েছেন প্রসাদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন খাঁন ও কুসুম্বা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নওফেল আলী মন্ডল। তাঁরা জানান, বাঁধটি যেভাবে মেরামত করার দরকার ছিল সেটি করা হয়নি। চরম অবহেলা ও গাফিলতির মধ্য দিয়ে বাঁধটি নির্মাণ করা হয়েছে। মেরামতের কাজে এতটুকুও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
মান্দা উপজেলার বিএনবি আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম রাব্বানী রাজু, চককামদেব আদর্শ কলেজের প্রভাষক জোতবাজারের আব্দুল মজিদ স¤্রাট, নুরুল্যাবাদ গ্রামের রেজাউন নবী ও আব্দুল মতিন, নাড়াডাঙ্গা গ্রামের তৃপ্তিশ কুমার মন্ডল, শামুকখোল গ্রামের সঞ্জয়, শ্যামল কুমার সরকারসহ আরো অনেকে জানান, আত্রাই নদীর সুজনসখী ঘাটের এ বাঁধ পুরোটাই বালু দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রীষ্মের হঠাৎ এক দিনের বৃষ্টিতেই বাঁধের বালু ধসে গিয়ে ছোট-বড় অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। নদীর অংশে ফাটল ধরে দেবে গেছে। বর্ষা মৌসুমে ভারি বর্ষণ হলে বাঁধের বালু ধসে নদীর সঙ্গে মিশে যাবে। তাই বর্ষার আগেই ভাঙন স্থানে সিসি ব্লক স্থাপনের দাবি জানান তাঁরা।
স্থানীয়রা জানায়, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এ বাঁধটি প্রায় ৩২ বছর আগে নির্মিত। এখন পর্যন্ত সেটি আর সংস্কার করা হয়নি। বাঁধের নদীর অংশে তীর কেটে কেটে জমি তৈরি করায় তা অনেক সংকুচিত হয়ে গেছে। এ ছাড়া বাঁধের ধারে লাগানো গাছের নিচে ইঁদুরের গর্ত দিয়ে পানি সহজেই অন্য অংশে পার হয়ে যায়।
তবে বালু দিয়ে পুরো বাঁধ নির্মাণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার। তিনি বলেন, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বাঁধ নির্মাণে অল্প পরিমাণ বালু মেশানো হয়ে থাকতে পারে।
তিনি আরো জানান, বাঁধ মেরামতের জন্য এখনো কোনো বরাদ্দ মেলেনি। তবে ৪৯ কোটি টাকার চাহিদা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
কালের আলো/সুলতান/ওএইচ