বিজয়ের বৈজয়ন্তীর মাসে ‘বিডি ক্লিন’ মডেল, মেয়র আতিক-টিটুর কৃতজ্ঞতা
প্রকাশিতঃ 11:09 am | December 24, 2019

সাব্বির আহমেদ খান, নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন ওদের। সুনামগঞ্জ থেকে সুন্দরবন, কুতুবদিয়া থেকে তেতুলিয়ায় সক্রিয় ওদের প্রায় ১৮ হাজার সদস্য। বছরের ৩৬৫ দিনেই চলে ওদের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। কিন্তু বিজয়ের বৈজয়ন্তী ওড়ানোর মাসে গণসচেতনতামূলক অভিনব এক আয়োজনের ভাবনা-চিন্তা পেয়ে বসে ওদের।
আরও পড়ুন: ৩০ লাখ শহীদের স্মরণে বিডি ক্লিনের চমক, প্রশংসায় মেয়র আতিক
পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ উপহারের পথে অন্যতম বাঁধা প্লাস্টিক দূষণ ঠেকাতে দেশজুড়ে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল ও ঢাকনা সংগ্রহ করতে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমে পড়ে। রক্তলাল সূর্যোদয়ের জন্য প্রাণ দেওয়া ৩০ লাখ শহীদকে স্মরণ করতে এখানে সেখানে ফেলে দেওয়া ৩০ লাখ প্লাস্টিকের বোতল ও ঢাকনা সংগ্রহ করে ৯ দিনব্যাপী ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
রাজধানীর বনানী বিটিসিএল (টিন্ডটি) মাঠে চলা এ প্রদর্শনী শেষ হয়েছে সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায়। কী ছিল না সাড়া জাগানো এ প্রদর্শনীতে। ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বোতলের ছোট ছোট লাল-সবুজ ঢাকনা দিয়ে তৈরি বাংলাদেশের বিশাল মানচিত্র ও বাঙালির আজন্ম লালিত স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণ করা ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি দৃষ্টি কেড়েছে।
আরও পড়ুন: ফুটপাত দখলমুক্ত অভিযান থেকে সরবে না ডিএনসিসি, ঘোষণা মেয়র আতিকের

আবার একইভাবে তৈরি শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত স্মারক স্থাপনা জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও রয়েল বেঙ্গল টাইগার দর্শনার্থীদের হৃদয়ে অনুরণন তুলেছে। বোতলে বানানো গণতন্ত্র ও উন্নয়নের প্রতীক নৌকাও ছিল প্রদর্শনীর অন্যতম আকর্ষণ।
প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহারে জনসচেতনতা তৈরির কার্যকর এ উদ্যোগে শুরু থেকেই নিজেকে সামিল করেছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো.আতিকুল ইসলাম। রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে এ কর্মসূচি তিনি উদ্বোধন করেছিলেন।
আরও পড়ুন: ‘তারুণ্যের পছন্দ’ মেয়র আতিক, মঞ্চে বসালেন সেই অদম্য মাহাফুজুরকে!
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সমাপনী অনুষ্ঠানেও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির কর্মীদের বিশেষভাবে প্রাণিত করেছেন পরিবেশবান্ধব ও গতিময় ঢাকা গড়ার মিশন নেওয়া উত্তরের এ নগর পিতা।
পরিবেশকে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত করতে প্লাস্টিকের সামগ্রী ব্যবহারে সচেতনতার বার্তা ছড়ানো প্রদর্শনীর শেষ দিনে বিশেষ আলোচক হিসেবে এসেছিলেন নতুন মহানগরী ময়মনসিংহকে গড়ার দায়িত্ব কাঁধে নেওয়া সৃজনশীল নগর পিতা ইকরামুল হক টিটু।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) এর দুই মেয়রই প্লাস্টিক দূষণমুক্ত বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার স্বপ্ন স্বার্থক করতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিডি ক্লিনের সব রকমের উদ্যোগে পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন।
প্লাস্টিকদূষণ থেকে রক্ষার মাধ্যমে সবুজ-সুন্দর বাংলাদেশ নিশ্চিত করতেই বিডি ক্লিনের এ প্রয়াস বলে জানান সংগঠনটির আহ্বায়ক ফরিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে পরিচ্ছন্ন করার উদ্দেশ্যেই প্লাস্টিকের বোতলের তৈরি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল।’
আরও পড়ুন: নাগরিকের পছন্দের স্টাইলে মেয়র আতিক, নিজেই করছেন উচ্ছেদ অভিযান তদারকি! (ভিডিও)
এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে মানুষকে প্লাস্টিকের সামগ্রী ব্যবহারে সচেতন করে তোলার পাশাপাশি বিজয়ের মাসে জাতির সূর্য সন্তানদের ত্যাগের প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে বলেও মনে করেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা। প্লাস্টিকের বোতল ও ঢাকায় বানানো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ও জাতীয় স্মৃতিসৌধ বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেওয়ার আগ্রহের কথাও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো: নাসির।

কী বলেছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম?
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘একটি প্লাস্টিকের বোতলে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়, এ বিষয়ে যতবেশি জনসচেতনতা সৃষ্টি করা যাবে আমাদের শহরকে ততবেশি প্লাস্টিক দূষণমুক্ত করা সম্ভব হবে।
নিজের বছর দুয়েক আগের এ অভিজ্ঞতার সূত্র ধরে তিনি বলেন, ‘আমি বছর দুয়েক আগে দেখেছিলাম দামি একটা গাড়ি গ্লাস নামিয়ে একটা পানির বোতল ফেলে দিলো। আপনি কাকে বলবেন..? তার টাকা আছে, তার কড়ি আছে কিন্তু আমরা তাকে ধিক্কার জানাই। এই ধরনের টাকা যাদের কাছে থাকবে, তারা টাকাকে ব্যবহার করবে, শহরকে ব্যবহার করবে ময়লার ডাস্টবিন হিসেবে, সেই মানুষকে আমরা ধিক্কার জানাতে চাই।’
বিদেশে এবং নিজ দেশে দুই রকম মানসিকতার নজিরের বিষয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘যাদের টাকা আছে, গাড়ি আছে, বাড়ি আছে কিন্তু শহরকে পরিস্কার করবে না, যত্রতত্র ময়লা ফেলবে তাদের আমরা ধিক্কার জানাই। বিদেশে তারাই কিন্তু আবার ময়লা বাইরে ফেলে না।

তারা ময়লা ব্যাগের মধ্যে সুন্দর করে রেখে দেয়। তারপর নির্দিষ্ট জায়গা পেলে সেখানে ফেলে। আর বাংলাদেশে আসলেই তারা মনে করে আমার তো টাকা আছে, গাড়ি আছে, বাড়ি আছে….।’
‘আমি বিনয়ের সাথে বলি, আমরা ত্রিশ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে এই লাল সবুজের পতাকার দেশ পেয়েছি। এত রক্ত কোন জাতিকে দিতে হয়নাই; দেশ স্বাধীন করতে যে রক্ত দিয়েছে এই বাঙালী জাতি ও মুক্তিযোদ্ধারা।
যে রক্ত দিয়ে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে যে দেশে জাতির পিতা শুয়ে আছেন, সারাজীবন কারাভোগ করেছেন কিভাবে এই দেশকে সুন্দর সোনার বাংলা করা যায়। যেই দেশে ওনার পরিবারের সদস্যরা শুয়ে আছে সেই দেশে আমরা কিভাবে ময়লা আবর্জনা ফেলতে পারি?’ প্রশ্ন রাখেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।
নিজেদের মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি উল্লেখ করে বাস্তববাদী এ নগর পিতা বলেন, ‘আমি সাংবাদিক খাল উদ্ধারে গিয়েছিলাম। সেই খাল থেকে ৩৬টি জাজিম উদ্ধার করেছি। টেলিভিশন, ফ্রিজ, সোফা সব কালশি খালের মধ্যে। এটা কি ধরনের মানসিকতা?’

‘আজকে কথায় কথায় বলা হচ্ছে সিটি কর্পোরেশন করবে। অবশ্যই আমরা সিটি কর্পোরেশন করবো। আজকে বিজয়ের মাসে আমাদের প্রত্যেককে শিখতে হবে একজন নাগরিকের কি দায়িত্ব এবং একজন সুনাগরিকের কি দায়িত্ব? অথচ আমরা সবাই দেশের নাগরিক কিন্তু সুনাগরিকত কয়জন? যদি সুনাগরিক হতে পারি আমরা তাহলেই এই দেশ ও শহর পরিস্কার থাকবে। আসুন আমরা বিজয়ের মাসে সুনাগরিক হওয়ার প্রতিজ্ঞা করি।’
প্লাস্টিক বোতলে ক্ষতির বিষয়টি বিশ্লেষণ করে ডিএনসিসির মেয়র বলেন, ‘একটি বোতলকে ডি কম্পোস হতে গেলে চারশ ৫০ বছর লাগে। একটি বোতলের জন্যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, গ্রীন হাউজ এফেক্ট হয়। আমরা দেখেছি থাইল্যান্ডে একটি তিমি মাছের পেটে ১৬৮টি বোতল পাওয়া গিয়েছিলো, তিমি মাছটি মারা গিয়েছে। ২০৩০ সালে মাছের থেকে বোতলের সংখ্যা বেশি হবে।
আমাদের সারাবিশ্বে ৯.৬ বিলিয়ন টন প্লাস্টিক রয়ে গেছে। যারা মাত্র ১০ শতাংশ আমরা রিস্টোরেশন করতে পারবো। আর বাকিটা পারবো না। সেগুলো আমাদের ধুকে ধুকে মেরে ফেলবে। এগুলো ভয়ংকর পরিসংখ্যান। ফলে ‘বিজয় দিবসের অঙ্গিকার, সচেতনভাবে হোক এই প্লাস্টিকের ব্যবহার’, এ অঙ্গীকার করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতেই এই শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে বিডি ক্লিন যে সুশৃঙ্খলভাবে এগিয়ে আসছে। আমাদের মনে হয় আমরা পারবো ইনশাআল্লাহ্। বেশিদিন নেই জাতির পিতার সোনার বাংলার যে স্বপ্ন বাস্তবায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাজ করে যাচ্ছেন; সেই প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করার জন্য আমি মনে করি বিডি ক্লিনের মতো অনেকেই এগিয়ে আসবে।’
ডেঙ্গুর মতো কিউলেক্স মশাও চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের সিটি কর্পোরেশনের অনেক চ্যালেঞ্জ। ডেঙ্গু যে ধরনের চ্যালেঞ্জ তেমন আজকে কিউলেক্স মশাও চ্যালেঞ্জ। আজকে যার যার আঙিনা, খাল-বিল যদি পরিস্কার রাখে তাহলে এই শহর আমাদের জন্য পরিস্কার রাখা সহজ। আজকে ড্রেনে ময়লা ফেলে দিলাম, যত্রতত্র ময়লা ফেলে দিলাম…মশার কিন্তু জন্ম হবে।’
পরিবেশ দূষণের সংকট মোকাবেলায় গুরুত্ব মেয়র টিটুর
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের (মসিক) মেয়র মো.ইকরামুল হক টিটু বলেছেন, ‘আমি বিডি ক্লিনকে ধন্যবাদ দিতে চাই। ১৯৭১ সালে আমাদের এই দেশকে মুক্ত করার জন্য ৩০ লক্ষ ভাই বোনকে আমরা হারিয়েছি। যারা নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে আমাদের এই দেশ দিয়ে গেছেন।

তাদের স্মরণে আজকে সারা বাংলাদেশ থেকে ৩০ লাখ প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করে এই আয়োজনটি করা হয়েছে। নি:সন্দেহে আজকে হয়তো বাংলাদেশের রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আমরা এটি করেছি। কিন্তু আমি মনে করি এটির যে চেতনা, যে স্পৃহা তা সারা বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।’
আমরা অনেক ক্ষেত্রেই সফল, অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ, মন্তব্য করে মসিকের প্রথম নগর পিতা বলেন, ‘আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের সুমহান চেতনাকে ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। একবাক্যে বলতে চাই আমরা আমাদের মাতৃভূমিকে ভালোবাসি।
এই ভালোবাসার প্রতিদান হিসেবে আমাদের কর্মের মাধ্যমে তাদের আত্মহুতিকে স্বীকৃতি দিতে চাই। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত সারা বাংলাদেশের মাটিতে মিশে আছে। সুতরাং, সেই সারা বাংলা থেকে, বাংলাদেশের প্রত্যেকটি প্রান্তর থেকে বিডি ক্লিনের ভাইয়েরা এসব সংগ্রহ করে আজকে দেখিয়ে দিয়েছেন তারা করতে পারেন।
আমি বলবো যে, আমরা অনেক সময় একে অপরকে দোষারোপ করি, আসলে দেশটির জন্য আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে।’ শুধু সরকার বা সিটি কর্পোরেশন একার পক্ষে গোটা জীবন ব্যবস্থাকে পাল্টে দেওয়া কোনদিনই সম্ভব নয় বলেও মনে করেন মেয়র ইকরামুল হক।

তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক সময় উন্নত বিশ্বের কথা বলে থাকি। আমরা যখন উন্নত বিশ্বে যাই, তখন আমরা কি আমাদের ব্যবহার্য জিনিস, বর্জ্য, প্লাস্টিক যত্রতত্র ফেলি?
এই প্রশ্নটি করলে এর উত্তর আমরা নিশ্চয়ই পেয়ে যাবো। আমরা এই দেশের মানুষ যদি অন্যদেশে সেটা অনুসরণ করতে পারি, তাহলে বহু ত্যাগের বিনিময়ে যে দেশ অর্জন করেছি সেটিকে কেন আমরা নষ্ট করছি? কেন আমরা সেটিকে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলে আমরা আমাদের পরিবেশকে দুর্বিষহ করে তুলছি?’
ডেঙ্গু নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে এ মেয়র বলেন, ‘গত কয়েকমাস আগেও আমরা ডেঙ্গু নিয়ে কাজ করেছি। আমরা তখন লক্ষ করেছি পরস্পর পরস্পরকে দোষারোপ করা হয়েছে। এ বিষয়ে যারা কাজ করছেন আমরা তাদের থেকে ধারণা নিয়েছি কোন জায়গায় যদি ২০ থেকে ২৫ মিলিলিটার পানি থাকে, সেটি শত শত এডিস মশার উৎপত্তিস্থল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
আজকে ৩০ লক্ষ বোতল একত্র করা হয়েছে সেখানে আমরা গড়ে যদি ২৫০ মিলিলিটার করে পানি ধরি তাহলে প্রায় সাড়ে সাত লাখ লিটার পানি ধারণ করতে পারবে বোতলগুলো। তাহলে এই বোতলগুলো থেকে কয়কোটি এডিস মশার জন্ম হতে পারে? সেটি আমরা হিসেব করতে পারি? প্রশ্ন টিটুর।

‘এরকম যদি হয়ে থাকে তাহলে সরকার বা সিটি কর্পোরেশন একা চেষ্টা করে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কি না, এই প্রশ্নটিও আমাদের করতে হবে। আমাদের ঘরের ভেতর থেকে আমরা যদি যুদ্ধ ঘোষণা না করি তাহলে সিটি কর্পোরেশনের ওষুধ দ্বারা আমরা কতটা নিরাপদ থাকবো, এটাও আমাদের ভাবতে হবে।
সরকার আমাদের অর্থ সহায়তা দিবে বা উন্নয়ন করে দিবে। আমরা যদি সেগুলোতে সহায়তা না করি তাহলে এটি কতক্ষণ টেকসই হবে এটিও আমাদের ভাবনার মধ্যে রাখতে হবে’ বলছিলেন মেয়র।
তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকরা ডায়াবেটিসকে কোন রোগ হিসেবে বিবেচনা না করলেও তারা বলছে সকল রোগের উৎস ডায়াবেটিস। নগর ব্যবস্থাপনার সকল সমস্যার উৎস এই বর্জ্য বা ওয়েস্ট। প্রত্যেক বছর হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে আমরা রাস্তা করছি, ড্রেন নির্মাণ করছি। কিন্তু পরের বছর সেগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
যে রাস্তা ৫ বছর টেকার কথা সেটি পরের বছরই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন আসছে যে, সরকার বা সিটি কর্পোরেশন ঠিকমত কাজ করছে না। আমরা যদি ড্রেনে বোতল না ফেলতাম, পলিথিন না ফেলতাম তাহলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতো না। রাস্তাগুলোও ধ্বংস হতো না। আমরা যদি সচেতন থাকতাম তাহলে পরের বছর জনগণের ট্যাক্সের টাকায় খাল খননে শতশত কোটি টাকা ব্যয় করতে হতো না।’

মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতার ডাকে সবাই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলেন তারাও ছিলেন আজকের বিডি ক্লিনের টগবগে তরুণ ভাইবোনদের বয়সী। ঠিক তেমনি আজ আমাদের জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা যিনি বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
আজকে তার নেতৃত্বে আমাদের বিডি ক্লিনের ভাইবোনেরা মাঠে নেমে এই দেশকে জঞ্জালমুক্ত করার শপথ নিয়েছেন। সেজন্য আমি তাদের স্যালুট জানাই।’
‘বিডি ক্লিনের যেসব ভাইবোনদের নিয়ে আমি ময়মনসিংহে কাজ করছি। আমি তাদের প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, আমরা সকল সময় তাদেরকে পাশে পেয়েছি। বিশেষ করে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য আমরা যেসব কাজ করেছি তারা সক্রিয়ভাবে আমাদের সহায়তা করেছেন।
ডেঙ্গু মশা নিয়ে যখন আমরা সবাই চিন্তিত, তখন বিডি ক্লিনের সকলকে সাথে পেয়েছি। তখন আমরা একযোগে ৩৩টি ওয়ার্ডে একসময়ে ৭ দিন ব্যাপী কার্যক্রমের মাধ্যমে সেখানে লক্ষাধিক মানুষকে সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলাম। যেটির ফল আমরা পরবর্তীতে পেয়েছি’ যোগ করেন মেয়র ইকরামুল হক টিটু।
কালের আলো/এসএকে/এমএইচএ/এমএএএমকে