‘তারুণ্যের পছন্দ’ মেয়র আতিক, মঞ্চে বসালেন সেই অদম্য মাহাফুজুরকে!

প্রকাশিতঃ 11:26 am | December 24, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

তরুণদের সঙ্গে মিশতে পারেন বয়স ভুলে। অনুষ্ঠান মঞ্চে সরাসরি না ওঠে থিম সং’র সঙ্গে কন্ঠ মেলাতে দর্শকসারি ধরে হাঁটতে হাঁটতে তালি দিতে পারেন। পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে একাকার করে বন্ধুসুলভ প্রাণবন্ত হয়েই নিজেকে উপস্থাপন করতে পারেন। নিজের পদের কথা চিন্তা না করে হৃদয়ের উষ্ণতায় বুকে টেনে নিতে দ্বিধা করেন না সামান্য পরিচ্ছন্নতা কর্মীকেও।

আরও পড়ুন: বিজয়ের বৈজয়ন্তীর মাসে ‘বিডি ক্লিন’ মডেল, মেয়র আতিক-টিটুর কৃতজ্ঞতা

নিজের কক্ষের নগর পিতার চেয়ার ছেড়ে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে মেঝেতে হাঁটু গেড়ে ছবি তুলতে পারেন অনায়েসেই। কিংবা সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আদাজল খেয়ে নিজেই মাঠে নামতে পারেন। সচেতন করতে পারেন পথচারী ও যানবাহনের চালকদের।

একজন আবেগ অনুভূতিপ্রবণ মানুষ হিসেবেই নিজেকে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন। প্রাণশক্তিতে বলীয়ান হয়ে কঠোর পরিশ্রমে স্বপ্ন আর পরিকল্পনার সঙ্গে বাস্তবতার সমন্বয় ঘটাতে পারেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।

আরও পড়ুন: ৩০ লাখ শহীদের স্মরণে বিডি ক্লিনের চমক, প্রশংসায় মেয়র আতিক

আরও পড়ুন: নাগরিকের পছন্দের স্টাইলে মেয়র আতিক, নিজেই করছেন উচ্ছেদ অভিযান তদারকি! (ভিডিও)

রাজনীতির মঞ্চের গতানুগতিক ‘নগর পিতা’ হিসেবে নিজেকে অভিষিক্ত না করে গণমুখী কর্মঠ মেয়র হয়ে বদলে দিতে চান ডিএনসিসিকে। তবে নিজের ‘রোডম্যাপ’ বাস্তবায়নে অবশ্যই পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশ বান্ধব ঢাকা অপরিহার্য হওয়ায় কেবলমাত্র রুটিন ওয়ার্কে নিজেদের সীমাবদ্ধ না করে পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশের স্বপ্নে বিভোর বিডি ক্লিনকেও কাজে লাগাতে চান। নিজেও পাশে থাকতে চান। শিখতে চান কীভাবে শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়!

আরও পড়ুন: ফুটপাত দখলমুক্ত অভিযান থেকে সরবে না ডিএনসিসি, ঘোষণা মেয়র আতিকের

উদাহরণ হিসেবে দাঁড় করাতে চান শারীরিক প্রতিবন্ধত্বকে জয় করে পরিচ্ছন্নতার কাজে অদম্য মনোবলের অধিকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিডি ক্লিনের নাটোরের সদস্য মাহফুজুর রহমানকে।

রাজধানীর বনানী বিটিসিএল (টিন্ডটি) মাঠে বিডি ক্লিনের আয়োজনে ৩০ লাখ প্লাস্টিকের বোতল ও ঢাকনা সংগ্রহ করে ৬ দিনব্যাপী ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনীর সমাপনী অনুষ্ঠানে সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) এমন স্বপ্নের আগুন জ্বালিয়েছেন ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম।

অনেকেই বলেন, বিজিএমইএ’র সভাপতি থাকাকালীন সময়েই আতিকুল ইসলামের শিল্পবোধ, মেধা ও সৃজনশীলতার পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল। এরপর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়ে স্মার্ট ও গতিময় ঢাকা গড়ার অঙ্গীকার করেন। নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রমাণে মাত্র ৩৬৫ দিন সময় পেয়েছেন। কিন্তু এরই মধ্যে আবার দূয়ারে কড়া নেড়েছে আরেকটি ভোট।

পুনরায় মেয়র আতিকুল ইসলাম ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নগর পিতার চেয়ারে বসতে যাচ্ছেন এমনটিই ধরে নিয়েছেন রাজধানীর উদ্দীপ্ত তারুণ্য। মনের মতো নগর পিতা হিসেবে তাকেই মনে করেন রাজধানীর বেশিরভাগ তরুণ।

বিডি ক্লিনের অনুষ্ঠান শেষেও অনেক তরুণ কালের আলো’র সঙ্গে আলাপে একই রকম মন্তব্য করলেন। তাদের ভাষ্য- ‘মেয়র আতিকুল ইসলাম স্বপ্নের ঢাকা গড়ার মিছিলের নেতৃত্বে সফল হবেন। তিনি যেমন প্রতিশ্রুতিশীল তেমনি কাজ পাগল মানুষও।

কিছু কাণ্ডকীর্তিতে রাজনীতির প্রতি শ্রদ্ধা যখন তলানিতে গিয়ে ঠেকছে সেই কঠিন সময়ে মানবিক হৃদয় নিয়ে গতিশীল প্রাণবন্ত মানুষের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছেন। নগর পিতা হিসেবে তাই তারুণ্যের ‘ওয়ান এন্ড অনলি’ চয়েজ মেয়র আতিকুল ইসলাম।’

বিডি ক্লিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত কালের আলো টিমের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে- মেয়র আতিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানস্থলে এসে সোজা দর্শক সারিতে আসন গ্রহণ না করে উপস্থিত তারুণ্যের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ে ছুটে গেছেন। আর এ সময়ই তার দৃষ্টিতে আসে শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও নাটোরের মাহাফুজুর রহমানের পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে অদম্য মানসিকতা।

নিজের বক্তব্যের শুরুতেই মেয়র মাহাফুজুরকে উৎসাহিত করেছেন। আবার মঞ্চের অতিথি আসনে বসিয়ে তার কর্মের প্রতি প্রকারান্তরে সম্মান প্রদর্শন করেছেন। এমন মানবিক হৃদয়ের নগর পিতা তিনি ছাড়া আর কেউ হতে পারবেন না। এ কারণেই তারুণ্যের আস্থা মেয়র আতিকুল।

সম্প্রতি যাত্রা শুরু করা ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের (মসিক) প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন স্থানীয় মহানগর আওয়ামী লীগের অন্যতম শীর্ষ নেতা মো.ইকরামুল হক টিটু। অনুন্নয়নের বৃত্তেবন্দি ময়মনসিংহকে পৌরসভার মেয়র হিসেবেই বের করে আনার কর্মযজ্ঞে সফল হয়েছিলেন তিনি।

পুরস্কার হিসেবে জনবান্ধব এ রাজনীতিককেই ময়মনসিংহ মহানগর গড়ার দায়িত্ব দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বিডি ক্লিনের অভিনব এ কর্মসূচির সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ আলোচক হিসেবে নিজের বক্তব্যের শুরুতেই মসিকের মেয়র প্রশংসা করেছেন উত্তরের নগর পিতা আতিকুল ইসলামের। বলেছেন, ‘ডিএনসিসির মেয়র এক বছরেই একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের ধারা সূচিত করেছেন।’

অদম্য মাহাফুজুরে পঞ্চমুখ মেয়র আতিক
শারীরিক প্রতিবন্ধী মাহাফুজুর রহমানের সঙ্গে নিজের পরিচয়ের সূত্রপাতের ঘটনাপ্রবাহ নিজের বক্তব্যে উপস্থাপন করলেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। বললেন, ‘যখন এই মাঠে হাটছিলাম তখন দেখি আমাদের এক ভাই মাহাফুজ হাতে লাঠি নিয়ে বসে আছে। আমি বুঝতে পারিনাই, সে কেনো লাঠি নিয়ে বসে আছে? মাহাফুজ বললো, স্যার আমি তো ঠিকমত চলতে পারি না।’

মেয়র মাহাফুজুরকে মঞ্চে ডেকে নিয়ে বসান। বলেন, মাহাফুজ শারীরিক প্রতিবন্ধী। যে বিডি ক্লিনের একজন নিয়মিত সদস্য। আমি মনে করি এরাই বিডি ক্লিনকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। দেখুন এই মাহফুজের অদম্য ইচ্ছা, সে ক্লিন করবে এ শহরকে এবং আমি যখন তাকে ধরতে গেলাম, সে বললো স্যার আমাকে ধরবেন না আমি নিজেই আসবো।

এই মাহফুজ থেকেই শেখা দরকার আমরা পারবো ইনশাআল্লাহ। আমারা না পারলে এই মাহফুজই পারবে একলাই….। ইনশাআল্লাহ হি ইজ এনাফ টু ক্লিন দ্যা হোল বাংলাদেশ। হি ইজ এনাফ টু ক্লিন দ্যা সিটি, হি ইজ এনাফ টু ক্লিন অল ডিস্ট্রিক্ট। আমি মনে করি এই মাহাফুজুররাই আমাকে শিখিয়ে দিবে কীভাবে শহরকে পরিস্কার করতে হয়।’

মেয়র বলেন, ‘আমি যেটা বলতে চাই, আজকে বিডি ক্লিন আছে, আজকে এরকম মাহাফুজরা আছে, আজকে আমরা যারা অট্রালিকায় থাকি, যারা ব্রান্ডের গাড়ি চালাই। গাড়ির গ্লাসটা নামিয়েই কিন্তু আমরা ময়লাটা ফেলে দেই। কত বড় নির্লজ্জ হতে পারি আমরা, আমাদের লজ্জা শরম হারিয়ে ফেলেছি।’

কালের আলো/এপিএস/এমএএএমকে