মুক্তিযুদ্ধে স্বর্ণোজ্জ্বল সেনাবাহিনীর সেই ৪৫ বীর শহীদের স্মরণে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী ৭১’
প্রকাশিতঃ 8:30 pm | December 30, 2019
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
বিশ্বের বুকে লাল সবুজের পতাকা ওড়াতেই জীবনবাজি রেখেছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অর্ডন্যান্স কোরের ৪৫ বীর শহীদ। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল তারা ভাঙতে চেয়েছিলেন। ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে মহান স্বাধীনতার জন্য জীবনবাজি রেখেছিলেন।
আরও পড়ুন: সেনাপ্রধানের অনন্য প্রয়াস : দৃষ্টিনন্দন শিল্পকর্ম ‘ইতিহাস আমার অহংকার’
ইতিহাসের পৃষ্ঠা রক্তে রাঙিয়েছিলেন। আত্মত্যাগের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। এনে দিয়েছিলেন মহার্ঘ্য স্বাধীনতা। বাঙালি জাতির জীবনের প্রেরণায় উজ্জীবিত দেদীপ্যমান, প্রসন্ন ও আলোকিত বিজয়ের মাসেই স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করা অকুতোভয় বীর সন্তানদের অনন্য এক উদ্যোগের মাধ্যমেই কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করা হয়েছে। তাদের স্মরণে মেমোরিয়াল ওয়াল ‘মৃত্যৃঞ্জয়ী-৭১’ নির্মিত হয়েছে।
একাত্তরের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে স্বর্ণোজ্জ্বল সেই অধ্যায়ের স্বাক্ষী ৪৫ বীর শহীদের নাম লেখা হয়েছে। বর্বর হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা নামফলক সম্বলিত এই দেয়ালটি সেই প্রতিরোধেরই প্রতীকী এক প্রকাশ বলে মনে করছে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
জাতির সূর্য সন্তান বীর শহীদের রক্তচিহ্ন স্মরণ ও ধারণ করে দাঁড়িয়ে থাকা নামফলক সম্বলিত অবিস্মরণীয় এ দেয়ালটি একাত্তরের সেই রক্তিম দিনগুলোর কথাও যেন মাথা উঁচু করে জানান দিবে।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকা সেনানিবাসস্থ সেন্ট্রাল অর্ডন্যান্স ডেপো (সিওডি) এর মেইন গেইট সংলগ্ন স্থানটিতে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী-৭১’ মেমোরিয়াল ওয়ালের উদ্বোধন করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
আরও পড়ুন: সেনাপ্রধানের সঙ্গে কুয়েত সশস্ত্র বাহিনীর সহকারী চিফ অব স্টাফের সাক্ষাৎ
ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগের মাধ্যমে একদিকে যেমন শহীদদের পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হয়েছে তেমনি বাঙালির গৌরবের, অহংকারের, আনন্দের, আত্নমর্যাদা ও আত্নোপলব্ধির এ মাসটিতে বাঙালি জাতির জীবনের প্রেরণায় উজ্জীবিত হতে যেন নতুন বার্তাও দেওয়া হয়েছে।
একাত্তরের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানী হিংস্র শ্বাপদের গণহত্যার বিরুদ্ধে বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। শত্রুসনাকে বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করার বঙ্গবন্ধুর ডাকে জীবনপণ সশস্ত্র লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বীর বাঙালী।
মুক্তির জয়গানে জীবনবাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়ে অকুতোভয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অর্ডন্যান্স কোরের সদস্যরা। এ কোরের ৪৫ বীর শহীদের পাশাপাশি লাখো শহীদের আত্নত্যাগের বিনিময়ে আসে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম অর্জন; মহান স্বাধীনতা।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের একেবারে শুরু থেকেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অর্ডন্যান্স কোরের ৪৫ বীর শহীদ বিভিন্ন স্থানে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে শহীদ হন। বীর শহীদদের মূল্যবান জীবন বিসর্জনের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে মহান স্বাধীনতা।
তারা আরও জানায়, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে সঠিক ইতিহাস জানতে ও অনুসরণ করতে পারে তারই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বীর এই শহীদদের স্মরনে সেন্ট্রাল অর্ডন্যান্স ডেপো (সিওডি) এর মেইন গেইট সংলগ্ন স্থানে (বিমান বন্দর সড়কের পাশে) ১৯৭৫ সালে তৎকালীন সিওডি কমান্ড্যান্ট পরবর্তীতে জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পীকার কর্নেল শওকত আলী (অব:) একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেন।
এ স্মৃতিস্তম্ভটি স্থানান্তর করে সবার জন্য দর্শনের উপযুক্ত স্থান হিসেবে বর্তমান অবস্থানে পুন:নির্মাণ করা হয়েছে। এবং এর নামকরণ করা হয়েছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী-৭১’।
অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল শামসুল হক, চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল শফিকুর রহমানসহ ঢাকা সেনানিবাসস্থ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ফরমেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সিওডির অর্ডন্যান্স কোরের সকল শহীদ পরিবারের সদস্য, সিওডির সকল কর্মকর্তা ও বিভিন্ন পদবির জেসিওরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে চলতি বছরের ১৪ আগস্ট আর্মি গলফ ক্লাবের গলফ গার্ডেনের দক্ষিণ পূর্ব পাশের দেয়ালে নির্মিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি সন্বলিত টেরাকোটার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
এ টেরাকোটায় বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের অবিস্মরণীয় সেই দিন মহান ৭ মার্চের ভরাট কন্ঠে বাঙালির প্রাণপুরুষের উচ্চারণ করা ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’- পাকিদের নিষ্পেষণ থেকে বাঙালির মুক্তির মূলমন্ত্র ঘোষণার মুহুর্তটিকেও তুলে আনা হয়েছে অসাধারণ শিল্পকর্মটিতে।
কালের আলো/আরআই/এমএএএমকে