মায়ের কাছ থেকেই ‘মিতব্যয়ী’ হওয়ার শিক্ষা পেয়েছেন সাবেক মেয়র আতিকুল

প্রকাশিতঃ 8:50 pm | January 04, 2020

কালের আলো টিম:

বাবা ছিলেন সৎ পুলিশ কর্মকর্তা। তার সন্তান ছিলেন ১১ জন। তাদের একজন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সদ্য বিদায়ী মেয়র ও আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। কঠোর পরিশ্রমই ওই পুলিশ কর্মকর্তার সন্তানদের জীবনে এনে দিয়েছে সফলতা।

আরও পড়ুন: শুন্য থেকে কীভাবে শিখরে পৌঁছেছেন, জানালেন মেয়র আতিকুল ইসলাম

সঠিক লক্ষ্য, সততা, স্পৃহা আর কঠোর পরিশ্রমের সমন্বয়ে সাফল্যগাঁথার মাইলফলক স্পর্শ করেছেন প্রত্যেকে। জীবনের স্বর্ণশিখরে এসে উদ্যমী তরুণদের সফলতার গল্প বলেছেন আতিকুল ইসলাম। জানিয়েছেন, সফলতার পেছনে মিতব্যয়ী হওয়ার শিক্ষা পেয়েছেন নিজের রত্নগর্ভা, মমতাময়ী মায়ের কাছ থেকে।

মায়ের কাছ থেকে পাওয়া মাত্র ২০ পয়সা ছিল শৈশবের স্কুলের পরিবহন খরচ। সেই পয়সাতেই কখনও হেঁটে আবার কখনও গণপরিবহনে চড়ে গন্তব্যে পৌঁছতেন। কঠিন সংগ্রামী নিজের পারিবারিক জীবন, ভাঙা-গড়ার সফল জীবনের এমন গল্পই উচ্চারণ করেছেন শনিবার (৪ জানুয়ারি) মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামে।

আরও পড়ুন: আতিকুল সমাজবদলে পাশে চান তরুণদের, জানালেন সততা-নিষ্ঠার গুরুত্ব

নিজের বলার মতো একটি গল্প ফাউন্ডেশনের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও উদ্যোক্তা সম্মেলনে উদ্বোধনকালে স্মৃতির প্রকোষ্ঠে জমানো আশা জাগানিয়া এমন গল্পই বলে গেলেন আতিকুল ইসলাম।

দেশের উদ্যোক্তা বিষয়ক অনলাইন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নিজের বলার মতো একটি গল্প’র তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ ও দুই লাখ তরুণ-তরুণীকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ প্রদান উপলক্ষে ৪ হাজার শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এই উদ্যোক্তা সম্মেলনের আয়োজক ইকবাল বাহার বলেন, ‘এখান থেকে দুই হাজার উদ্যোক্তা বের হয়েছে। তার মধ্যে ২০০ জন হয়েছেন নারী উদ্যোক্তা।’

আগামী ৩০ জানুয়ারির ডিএনসিসি’র ভোটে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম সহজ-সরল, বিনয়ী ও মিষ্টভাষী এবং তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা একজন সৎ পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। তার ১১ সন্তানের মধ্যে আমি সবার ছোট। আমরা ৫ ভাই, ৬ বোন।

আমার মা সবসময় চিন্তা করেছেন ১১ ছেলে-মেয়ে হয়েছে এদের মানুষ করবো কীভাবে? এটি আমার মায়ের জন্যে ছিল রীতিমতো একটি চ্যালেঞ্জ। আমার বড় ভাই ও আমার বয়সের ডিফারেন্স ২৯ বছরের। আমার বড় ভাই যখন ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছে তখন আমার জন্মই হয়নি।

আমার বড় ভাই সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, মেঝো ভাইকে মা বিদেশ পাঠিয়ে ব্যারিস্টারি পড়িয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ সেই মেজো ভাই তোফাজ্জল ইসলাম পরে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হয়েছেন।

এই দুই ভাইয়ের পরে আমাদের ৬ বোন। তাদের স্বামীরা সবাই সরকারি চাকরিজীবি। এরপর আমার আরেক ভাই লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইনুল ইসলাম সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সাবেক প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) ও চীফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) ছিলেন। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) মহাপরিচালক হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।’

উত্তরের সাবেক এ নগর পিতা বলতে থাকেন, ‘আমার আরেক ভাই ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। আমি ভাইবোনদের মধ্যে সবার ছোট। আমি বেশি দুষ্টুমি করি দেখে আমার মা আমাকে প্রথমে আইডিয়াল স্কুলে ভর্তি করেন।

কিন্তু ডানপিটে আমি কপাল ফাঁটিয়ে ফেলেছি। এরপর মা আমাকে জোর করে শাহীন স্কুলে ভর্তি করান। রেগে অগ্নিশর্মা মা বললো ওকে বেতায়ে ঠিক করতে হবে। শাহীন স্কুলে ডিসিপ্লিন বেশি ছিলো। সেই শাহীন স্কুলে আমি যাই। আমি থাকতাম শান্তিনগরে।

আমার মা আমাকে ২০ পয়সা দিতেন। শান্তিনগর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের সামনে আমাদের বাসা। সেখান থেকে হেঁটে হেঁটে আমি যেতাম মালিবাগ মোড়ে। সেখান থেকে হাশেম পরিবহনে পুরান এয়ারপোর্টের সামনে যেতাম। তারপর আবার হেটে হেঁটে যেতে হতো তেজগাঁও শাহীন স্কুলে। এই হলো আমার জীবনের যাত্রা শুরু। আমার মা আমাকে ২০ পয়সা দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন।’

নানা ঘাঁটে বাঁক নেওয়া জীবন সংগ্রামের গল্প বলতে আবারও স্মৃতিকাতর হয়ে উঠেন আতিকুল ইসলাম। নিজের মায়ের জন্য দোয়া চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্নেহভাজন এই প্রার্থী বলেন, ‘আমি অনেক রাগ করতাম। আমার অন্যান্য বন্ধুরা দেখতাম অনেক টাকা নিয়ে স্কুলে আসে। আমার বন্ধুরা আমাকে বলতো তোর মা এত কম টাকা দেয় কেন?

আমি মা’কে এসে বলেছি মা, আমার বন্ধুরা তো বলে তুমি এত কম টাকা দাও কেনো? মা বলেছেন- বাবা তোমরা এগারো ভাই বোনের সংসার। তোমাদের সবাইকে মানুষ করতে হবে আগে। যতটুক আমার দায়িত্ব, যতটুকু পারবো ততটুকুই করবো। মূলত আমার মায়ের কাছ থেকেই মিতব্যয়ী হওয়ার শিক্ষা পেয়েছি। মায়ের জন্যেই আজকে আমি এখানে দাঁড়াতে পেরেছি।’

কালের আলো/সিএইচ/এমএইচ/এমএএএমকে