আইজিপির জবানীতে ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পুলিশ’, প্রধানমন্ত্রীর বাস্তবধর্মী পদক্ষেপে বেড়েছে সক্ষমতা!

প্রকাশিতঃ 2:56 am | January 05, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

৪৪ বছর আগে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে প্রথম পুলিশ সপ্তাহে দিক-নির্দেশনামূলক ভাষণ দিয়েছিলেন ইতিহাসের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর সেই উচ্চারণগুলোই পুলিশ বাহিনীর জন্য আজও অনুসরণীয়।

আরও পড়ুন: গণতন্ত্রের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় পুলিশ সাহসিকতার ভূমিকা পালন করেছে : প্রধানমন্ত্রী

মহান নেতার কন্ঠে মানুষকে ভালোবাসতে ও সেবা দিতে পুলিশের প্রতি নির্দেশনা, দায়িত্ব পালনে সৎ থাকতে পরামর্শ এখনও যেন সাম্প্রতিক। অমর, কালোত্তীর্ণ উচ্চারণে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই মহামানব বলেছিলেন ‘স্বাধীন দেশের পুলিশ শোষকদের নয়, জনগণের সেবক।’ বাঙালির অবিসংবাদিত নেতার চেতনায় উজ্জীবিত থেকেই দেশপ্রেমিক পুলিশ পার করেছে অনেক জটিল পথ।

বঙ্গবন্ধুর গণমুখী পুলিশ বাহিনীর স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে তাঁরই রক্তের উত্তরাধিকার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং জননিরাপত্তা বিধানে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানকে যুগোপযোগী ও সেবাধর্মী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জনবল বৃদ্ধি, পেশাগত মর্যাদা বৃদ্ধি, নতুন ইউনিট গঠন, কাঠামোগত উন্নয়ন ও আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন করেছেন।

আরও পড়ুন: পুলিশকে কতটা ভালবাসেন প্রধানমন্ত্রী?

এসবের ফলেই বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করেন পুলিশের আইজি ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার)। ‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’ স্লোগান নিয়ে রোববার (০৫ জানুয়ারি) থেকে শুরু হতে যাওয়া চলতি বছরের পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে এমন কথাই বলেছেন দেশপ্রেমিক বাহিনীটির এই সর্বোচ্চ কর্মকর্তা।

পুলিশ সপ্তাহ ২০২০ উপলক্ষে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে শনিবার (০৪ জানুয়ারি) রাত ৮ টার বাংলা সংবাদের পর একযোগে সম্প্রচারিত বাংলাদেশ পুলিশ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ পরিবেশিত ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘মিলেছি মেলবন্ধনে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতধরে বদলে যাওয়া পুলিশের গল্পই যেন বলে যান সততা ও কর্তব্যনিষ্ঠায় অনুকরণীয় উদাহরণ তৈরি করা এই পুলিশ মহাপরিদর্শক।

গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা ‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে ওঠে রণি… বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ’ গানটি দিয়ে শুরু হওয়া এই ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে পুলিশ প্রধানের শুভেচ্ছা বক্তব্য ছিল ৬ মিনিটের।

পুলিশকে জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধুই
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার) চলতি বছরের পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত সকল সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আমি প্রথমেই স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

যার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রাজারবাগের অকুতোভয় পুলিশ সদস্যরা প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তুলে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে স্মরণ করছি তার অমোঘ বাণী : ‘তোমরা জনগণের পুলিশ। তোমাদের কর্তব্য জনগণকে সেবা করা, জনগণকে ভালবাসা। দুর্দিনে জনগণকেই সাহায্য করা।’ স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুই তাঁর এই বক্তব্যের মাধ্যমে প্রথম পুলিশ সপ্তাহে রাজারবাগে পুলিশকে জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে উজ্জীবিত হয়ে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে বাংলাদেশ পুলিশ জনসেবা ও দেশের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আসছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ পুলিশকে যুগোপযোগী, সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে জনবল বৃদ্ধি, পেশাগত মর্যাদা বৃদ্ধি, নতুন ইউনিট গঠন, কাঠামোগত উন্নয়ন ও আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন করে বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি করেছেন।’

মামলার তদন্তে গতি, সুনিশ্চিত ন্যায়বিচার
আইজিপি বলেন, ‘বিজ্ঞানভিত্তিক তদন্তে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ইতোমধ্যে চালু করা হয়েছে ডিএনএ ল্যাব, অফিস, সিডিএমএস, সাইবার ও ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব। ফলে মামলার তদন্তে এসেছে গতিশীলতা ও সুনিশ্চিত হচ্ছে ন্যায়বিচার। জনসেবার পরিধি বিস্তৃত ও সহজ করার লক্ষে চালু করা হয়েছে অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, ই-ট্রাফিক প্রসিকিউশন সিস্টেম, অনলাইন পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন ও ইমিগ্রেশনসহ জনবান্ধব নানা কর্মসূচি।

এক্ষেত্রে সময় ও দুর্ভোগ হ্রাসের পাশাপাশি পুলিশ বিভাগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্মানিত নাগরিকবৃন্দ যাতে প্রয়োজনীয় মুহুর্তে পুলিশী সেবাগ্রহণ ও বিভিন্ন তথ্য জানাতে পারে এজন্য বিডি পুলিশ হেল্পলাইন, হ্যালো সিটি, রিপোর্ট টু র‌্যাব অ্যাপস চালু করা হয়েছে।’

৯৯৯ এ সেবা পেয়েছে ৫৮ লাখ সেবাগ্রহীতা
জরুরি সেবা ৯৯৯ এক ঐতিহাসিক দিগন্ত উন্মোচন করেছে বলে মন্তব্য করেন ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। এই পুলিশ প্রধান বলেন, ‘জনগণ এখন তার প্রয়োজনীয় মুহুর্তে পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স এবং ফায়ার সার্ভিসের জরুরি সেবা পেতে যে কোন নম্বর থেকে বিনা খরচে ৯৯৯ এ কল করতে পারেন। আমরা ইতোমধ্যে প্রায় দেড় কোটির মতো কলগ্রহণ করেছি। যার মধ্যে ৫৮ লক্ষ সেবাগ্রহীতা সেবা পেয়েছে।’

জঙ্গিবাদের কার্যক্রম প্রায় শুন্যের কোঠায়
আইজিপি বলেন, ‘২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত স্বাধীনতা বিরোধী জোট সারাদেশে অগ্নিসন্ত্রাস, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, ভাংচুর ও অবরোধের মাধ্যমে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে তারা অনেক নিরীহ মানুষ ও পুলিশকে পিটিয়ে এবং অগ্নিসংযোগে হত্যা করে। ২০১৬ সালে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ফলে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি ব্যক্তিবর্গের বাংলাদেশ সম্পর্কে পূর্বের ধারণা ম্লান করে দেয়।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি ইউনিটের সমন্বিত কার্যকরী ভূমিকার কারণে দ্রুত ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। হলি আর্টিজান ও পরবর্তী সময়ে জঙ্গি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ পুলিশের ৭ জন গর্বিত সদস্য আত্নোৎসর্গ করেছে। পুলিশের এই পেশাদারী, অগ্রণী ও আত্নোৎস্বর্গকারী ভূমিকার কারণে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কার্যক্রম প্রায় শুন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।

জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ পুলিশের গৃহীত কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ পুলিশ।’

মামলার তদন্তে পুলিশের সাফল্য
মামলার তদন্ত ও রহস্য উদঘাটনে বাংলাদেশ পুলিশে রয়েছে উল্লেখযোগ্য সাফল্য-এমনটিই উচ্চারণ করেন ঝানু এই পুলিশ প্রধান।

তিনি বলেন, ‘ফেনীর নুসরাত হত্যা মামলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস মামলা, বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা, রাজধানীর মালিবাগ-গুলিস্তান সায়েন্স ল্যাব এলাকায় পুলিশের ওপর বোমা হামলা মামলাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত কার্যক্রম বাংলাদেশ পুলিশ দক্ষতা, পেশাদারিত্ব ও আন্তরিকতার সঙ্গে দ্রুত সম্পন্ন করেছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশে নারীর ক্ষমতায়নের অংশ হিসেবে বিভিন্ন জেলায় পুলিশ সুপার ও বিভিন্ন কমান্ডিং পদে নারী সদস্যদের নিয়োগ প্রদান করা হচ্ছে। বাংলাদেশ পুলিশ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইভেন্টে অত্যন্ত দক্ষতা, পেশাদারিত্ব ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আসছে।’

বঙ্গবন্ধুর চেতনায় মানবিক পুলিশ
আইজিপি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগোপযোগী ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপে বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা পূর্বের তুলনায় বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কনস্টেবলসহ পুলিশের অন্যান্য নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়নে এসেছে প্রত্যাশিত স্বচ্ছতা।’

তিনি বলেন, ‘সাসটেইনেবল ডেভেলাপমেন্টের জন্য প্রয়োজন সাসটেইনেবল পিচ। সাসটেইনেবল পিচের জন্য প্রয়োজন হয় সাসটেইনেবল সিকিউরিটি। এবং এই সাসটেইনেবল সিকিউরিটির জন্য প্রয়োজন সাসটেইনেবল পুলিশিং। বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য এই সাসটেইনেবল পুলিশিং ব্যবস্থা কার্যকরের জন্য অহর্নিশ পরিশ্রম করে যাচ্ছে।’

পুলিশ প্রধান ড.জাবেদ বলেন, ‘জাতির পিতার সেই অমোঘ বাণী ‘তোমরা জনগণের পুলিশ।’ আমরা তার এই চেতনাকে ধারণ করে জনগণের পুলিশ, মানবিক পুলিশ হতে চাই। মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার।’

কালের আলো/এমএএএমকে