যে চেহারায় আর কখনও দেখা যায়নি তাবিথ আউয়ালকে

প্রকাশিতঃ 9:10 am | January 31, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

‘সমস্যা চিহ্নিত এবার সমাধান যাত্রা’ স্লোগান নিয়ে প্রচারে অভিনব সব মাত্রা যোগ করেছিলেন প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিলের নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ঘটনাচক্রে বিএনপি’র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাওয়া তাবিথ আউয়াল।

ওই সময় সাইকেল চালানো এবং দুই কিলোমিটার দৌড়ে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা আনিসুলের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে না পেরে সেই বছরের ২১ এপ্রিল ঝাড়ু হাতে রাস্তা পরিস্কারে নেমেছিলেন তাবিথ। কথা দিয়েছিলেন মেয়র নির্বাচিত না হলেও এসব কাজ চালিয়ে যাওয়ার। কিন্তু সেই কথা রাখেননি বিতর্কিত আউয়াল পরিবারের এ জ্যেষ্ঠ সন্তান। এরপর কেটে গেছে ৫ বছর।

আর কখনই ২০১৫ সালের ভোটের চেহারায় দেখা যায়নি ‘সোনার চামচ’ মুখে দিয়ে রাজনীতিতে পা রাখা তাবিথকে। অভিজাত শ্রেণির রাজনীতিকদের এই প্রতিনিধি নিজের কথা থেকেও সরে এসেছেন। ফলে পুরনো সেই ছবি নিয়ে তাবিথের বিষয়ে চলছে সমালোচনার ধুম।

শুদ্ধ উচ্চারণে নির্ভুল বাংলা বলতে না পারা এই প্রার্থী গতবার সস্তা জনমত পেতেই ঝাড়ু হাতে ক্যামেরাবন্দি হয়েছিলেন এমনটিই মনে করছেন কেউ কেউ। ৬২ হাজার ভোট পেয়ে হেরে গিয়ে মেয়র নির্বাচিত হতে না পারায় ভোটের প্রচারণায় ভোটারদের দেওয়া সেই কথাও হয়তো ভুলেই গেছেন!

জানা যায়, ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন আলোচিত-সমালোচিত ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল মিন্টু। ওই সময় তাঁর সঙ্গে মনোনয়ন ফরম কিনেন তার জ্যেষ্ঠ সন্তান তাবিথ আউয়ালও। নিজের ভুলে মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেলে তাবিথকেই প্রার্থী হিসেবে মেনে নেয় বিএনপি।

ওই সময় দলটির অনেক ত্যাগ-পরীক্ষিত এবং নিবেদিতপ্রাণ নেতা থাকলেও তাবিথই দলের প্রার্থী হন। ওই সময়ও আনিসুল হকের বিপক্ষে বারবার ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নেই বলে মন্তব্য করছিলেন আর একের পর এক অভিযোগ দিচ্ছিলেন তাবিথ।

২০১৫ সালের মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) মিরপুরের হারম্যান মাইনার স্কুলের সামনে জনসংযোগকালে পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ঝাড়ু হাতে নামার পাশাপাশি রাস্তার আইল্যান্ডে লাগানো গাছের গোড়ায় পানিও দিয়েছিলেন। অনুরোধ করেছিলেন সবাইকে সামাজিক কাজে অংশ নিতে।

সেই সময় তাবিথ আউয়াল বলেছিলেন, ‘আমি আগে থেকেই এসব করি। সামাজিক নানা কাজে আমার অংশগ্রহণ রয়েছে।’ সবাইকে কথা দিয়ে বলেছিলেন, ‘নির্বাচনে মেয়র যদি না-ও নির্বাচিত হই, তবু এসব কাজ চালিয়ে যাব।’

কিন্তু ভোটে আনিসুল হকের কাছে ধরাশায়ী হয়ে আবারও ব্যবসাতেই মন দেন তাবিথ। জনসম্পৃক্ততাও ছিল না তার। বিএনপি’র রাজনীতিতে তৃণমূলের কর্মী না হলেও শুধুমাত্র বাবার টাকার জোরে এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলামের সঙ্গে বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম কখনও চা বানিয়ে, সাইকেল চালিয়ে বা ক্রিকেট খেলে জনসংযোগ করলেও তাবিথ রুটিন ওয়ার্কেই নিজেকেই ব্যস্ত রেখেছিলেন। আনিসুল হকের বিরুদ্ধেও যেমন অব্যাহত অভিযোগ দিতেন সেই ধারাবাহিকতা আতিকুলের বিপরীতেও ধরে রেখেছিলেন। প্রায় সব অভিযোগ থেকেই আতিকুলকে ইতোমধ্যেই অব্যাহতি দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা।

অনেকেই বলছেন, আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ ড্রইং রুম রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কখনই তার যোগাযোগ নেই। ভোটের প্রচারণায় গতবারের মতো এবারও অনেক নীতি কথা শুনিয়েছেন। আশ্বাস-প্রতিশ্রুতির প্লাবন সৃষ্টি করেছেন।

এবারও যদি মেয়র হতে না পারেন তবে ঠিকই ব্যবসা বাণিজ্যেই মজে যাবেন। মেয়র হতে না পারলেও পাশে থাকবেন, গত ৫ বছরের অভিজ্ঞতায় এমন কথা আর তার মুখে মানায় না।

কালের আলো/এসএ/এমএ