‘আইওয়াশ’ হরতাল মানেননি ফখরুল; আলোচনার খোরাক রিজভী

প্রকাশিতঃ 7:43 pm | February 02, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

দুই সিটির ভোটে হারলেই হরতাল দেবে বিএনপি, এমন কথাবার্তা শোনা যাচ্ছিল আগেই। ৫ বছর পর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক ভরাডুবি মানতে না পেরে রোববার (০২ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত হরতাল ডেকেছিল ভঙ্গুর রাজনৈতিক দলটি। কিন্তু রাজধানীর রাজপথে হরতাল বোঝার কোন উপায়ই তো ছিল না।

আরও পড়ুন: দুই সিটিতে আ.লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই পুরনো পথে বিএনপি?

হরতালের ভেতরেও রাজধানীতে যানবাহন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। সকাল থেকেই অন্য দিনগুলোর মতোই কর্মস্থলে ছুটেছেন সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি ‘আইওয়াশ হরতাল। বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজেই হরতাল মানেননি।

সকাল সাড়ে ৯টায় উত্তরার বাসা থেকে মোটরসাইকেলে করে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন। গণমাধ্যমকর্মীদের অনুরোধে ১০ মিনিটের মতো বসেছিলেন কার্যালয়ের সামনে। এরপর তিনিও উধাও। তবে নামকাওয়াস্তের হরতালে রীতিমতো আলোচনার খোরাক হয়েছেন বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

সব সময় দলীয় কর্মসূচি পালনে সিদ্ধহস্ত রিজভী ভোরের আলো ফুটার আগেই মিছিল করে রাজপথ কাঁপান। ব্যতিক্রম ছিলেন না নিজেদের ডাকা ১২ ঘন্টার হরতালেও। রাজধানীর ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। নিরাপদ জায়গা দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে চেয়ারে বসে আয়েশী মুডে পিকেটিং করেছেন। সঙ্গী ছিলেন হাতেগোনা জনাদশেক নেতা-কর্মী। ব্যাস এটুকুই।

রাজধানীর উত্তরে বা দক্ষিণে আর কোথাও বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের দেখা মেলেনি। এক মিনিটের জন্যও তারা রাজপথ মাড়াননি। নুন্যতম মূল্যহীন এই হরতালের বিষয়ে কথা হয় রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার সিনজি চালক আব্দুল মোমেনের সঙ্গে। কালের আলোকে তিনি বলেন, ‘মানুষ এখন হরতাল রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। ভোটে হারলেই হরতাল এটা মগের মুল্লুক নাকি?’

রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার দিশারি পরিবহন বাসের চালক হানিফ মিয়া কালের আলোকে বলেন, ‘হরতালের দিন অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এর আগে বিএনপি মাসব্যাপী হরতাল-অবরোধ দিয়েছিল। পাবলিক মানেনি। আর কোনদিন হরতাল মানবেও না। হরতালের দিন শেষ।’

নিজেদের যে দুই প্রার্থীর জন্য বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছিলেন সেই দুই মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেনও যেন রীতিমতো হতাশ করেছেন দলকে। ভোর ৬ টা থেকে হরতাল শুরু হলেও তাদের দেখা মেলেনি দুপুরের আগে।

দুপুর ২ টার পরে তাবিথ ও ইশরাক বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ফুটপাতে অবস্থান নিয়েছেন। গুটিকয়েক নেতা-কর্মীকে নিয়ে মিছিল করেছেন। তাবিথ গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বললেও ইশরাক সঙ্গী প্রায় অর্ধ শতাধিক নেতা-কর্মীকে চাঙ্গা করতে স্লোগান দিয়ে গলা ফাটিয়েছেন।

জনগণের চাপে বিএনপি হরতাল দিয়েছে, এমনটি তাবিথ দাবি করলেও তার সেই কথা বুমেরাং হয়েছে হরতালের দিনে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়।

হরতালের দিন রোববার (০২ ফেব্রুয়ারি) নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের ফুটপাতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে দলটির কিছুসংখ্যক নেতাকর্মী অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে দলের নেতাকর্মীদের আধা ঘণ্টার মধ্যে সেখান থেকে সরে যেতে নির্দেশ দেন মতিঝিল জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) জাহিদুল ইসলাম।

তখন রিজভী পুলিশের কাছ থেকে ১০ মিনিট সময় চান। কিন্তু দুপুরে খাবার ও নামাজের কথা বলে ৭ মিনিটের মধ্যে কর্মসূচি শেষ করেন তিনি। রিজভীর এমন আচরণে দলের নেতাকর্মী, উপস্থিত পুলিশ ও সাংবাদিকদের মধ্যে হাসির রোল পড়ে যায়।

উপস্থিত বিএনপির নেতাকর্মীরা বলেন, দলের সিনিয়র হয়ে রিজভীর এমন আচরণ দুঃখজনক। যেখানে পুলিশ আধা ঘণ্টা সময় দিচ্ছে, তখন তার ১০ মিনিট সময় চাওয়ার কারণ কী? আবার ১০ মিনিট সময় নিয়ে ৭ মিনিটে কেন কর্মসূচি শেষ করতে হবে? তার কোনও সমস্যা থাকলে চলে যেতে পারতেন।

নাম প্রকাশে আপত্তি জানিয়ে বিএনপি’র একজন নেতা কালের আলোকে বলেন, ‘যাদের জন্য হরতাল ডাকা হয়েছে সেই দুই মেয়র প্রার্থীই এসেছেন বেলা উঠার পর। দলের সিনিয়র নেতা-কর্মীদের মাঝেও গা ছাড়া ভাব। এমন লোকদেখানো হরতালের মাঝে রিজভী সাহেব আবারও লোক হাসিয়েছেন। এভাবে এক সময় দলটির অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে যাবে।’

তাবিথ-ইশরাককে নিয়ে হাসালেন ফখরুলও
নিজে বাইকে চড়ে হরতাল ভেঙেছিলেন মির্জা ফখরুল। সারাদিন বসেছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তৃতীয় তলায়। বিকেলে দুই সিটি নির্বাচনের ফল বাতিলের দাবিতে মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগরীতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এ সময় ফখরুলের ডানে-বামে বসেছিলেন হেরে যাওয়া দুই মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন। ফখরুল ‘হরতাল সফলভাবে’ পালনের জন্য ঢাকাবাসীকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘স্বল্প সময়ের নোটিশে হরতাল সফলভাবে পালনের জন্য ঢাকাবাসীকে অভিনন্দন জানাই।’

ফখরুলের এমন বক্তব্যের সময় উপস্থিত নেতা-কর্মীরা মৃদু হাসেন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এসএ/এমএ