বাস্তবায়নের পথে মহাপরিকল্পনা; বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পুলিশ মুজিববর্ষেই

প্রকাশিতঃ 11:12 am | February 10, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

জনগণের পুলিশের স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির চির আরাধ্য পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশ গঠনে মাত্র তিন বছর সময় পেয়েছিলেন; পুলিশকে অনুপ্রাণিত করেছেন বারবার। বাঙালির অবিসংবাদিত এই নেতার চেতনায় উজ্জীবিত থেকেই তারা পার করেছে অনেক জটিল পথ। ইতিহাসের মহানায়কের সেই স্বপ্ন উজ্জ্বলতর আলোকে এখনও উদ্ভাসিত জাতির মানসে।

বাবার স্বপ্নপূরণে প্রায় সোয়া দুই লাখ সদস্যের এই বাহিনীর আধুনিকায়নে সবিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের সাধারণ মানুষ পুলিশ বাহিনী থেকে কাঙ্খিত সেবা পাবে, জনবান্ধব পুলিশ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করবে- এমন আশাই বঙ্গবন্ধু কন্যার।

পঞ্চাশ হাজার বর্গমাইলের ক্যানভাসজুড়ে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত পথে বাংলাদেশ পুলিশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার)। সামাজিক জীবনের প্রবাহমান ভাব ও চিন্তার তরঙ্গে স্মৃতিতর্পণে আবেগের ফেনা সরিয়ে চিরায়ত অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে হয়েছেন কঠোর।

থানাকেই সেবার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস নিয়েছেন। অঙ্গীকার করেছেন মুজিববর্ষেই পুলিশ হবে জনতার। শাণিত বুদ্ধির ঝলকে গাম্ভীর্যময় দীপ্ত উচ্চারণ করেছেন মানবিক পুলিশের।

‘জাতির পিতার সেই অমোঘ বাণী ‘তোমরা জনগণের পুলিশ’ আমরা তার এই চেতনাকে ধারণ করে জনগণের পুলিশ, মানবিক পুলিশ হতে চাই জানিয়ে পুলিশ প্রধান স্পষ্ট বলেছেন, ‘সকল পুলিশ সদস্যকে জনবান্ধব হয়ে কাজ করতে হবে। যাতে উন্নত দেশের পুলিশের চেয়ে আমরা আরও এগিয়ে যেতে পারি। উন্নত দেশের মানুষ বলতে পারে ‘উন্নত বাংলাদেশের-উন্নত পুলিশ’।

গুটিকয়েক সদস্যের মাদক, ঘুষ বাণিজ্য ও অনৈতিক কর্মকান্ডে নিজ বাহিনীর ভেতরকার অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নিজের অনড় অবস্থানের প্রেক্ষাপটে মিলতে শুরু করেছে ইতিবাচক ফল। জবাবদিহিতা ও আভ্যন্তরীণ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

মন্দ কাজ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ভালো কাজে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। নানা কর্মপরিকল্পনা ও কৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমে অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় কমে আসছে পুলিশ সদস্যদের অপরাধ প্রবণতা; পুলিশ-জনগণ দূরত্ব রেখা। উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় পুলিশের মানবিক দৃষ্টান্ত সমাজ জীবনে ঘটিয়েছে আলোর বিচ্ছুরণও।

বঙ্গবন্ধুর গণমুখী পুলিশ বাহিনীর স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং জননিরাপত্তা বিধানে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানকে যুগোপযোগী ও সেবাধর্মী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জনবল বৃদ্ধি, পেশাগত মর্যাদা বৃদ্ধি, নতুন ইউনিট গঠন, কাঠামোগত উন্নয়ন ও আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীকে পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) দায়িত্ব দেওয়ার পর পরই পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে গ্রহণ করা হয় মহাপরিকল্পনা। পুলিশের দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিটি শাখার ওপর আইজিপি কঠোর নজরদারি শুরুর পর চিহ্নিত ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

নিজের নেতৃত্বগুণ, বিচক্ষণতা ও ধৈর্যশীলতায় পুলিশ সম্পর্কে জনমনে ইতিবাচক ধারণা ছড়িয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘জনবান্ধব’ পুলিশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ‘রাউন্ড দ্যা ক্লক’ নিজেকে সক্রিয় রেখেছেন পুলিশের এই কান্ডারী।

আর এজন্য গত দুই বছরে তিনি ছুটেছেন সুনামগঞ্জ থেকে সুন্দরবন; কুতুবদিয়া থেকে তেতুলিয়া। প্রতিটি জেলা বা মেট্টোপলিটনের অনুষ্ঠানে থানাকে আরও জনবান্ধব করার নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, ‘আমরা থানাকে করতে চাই মানুষের আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক।

আমরা জানি, অসহায় ও নিপীড়িত মানুষ প্রথমে থানায় আসে। থানা হলো পুলিশের সেবার কেন্দ্রবিন্দু। সুতরাং থানাকে হতে হবে সেবার রোল মডেল। আমরা আশা করি ওসিরা হবেন মানুষের সেবা ও নির্ভরতার প্রতীক।’

চলতি বছরের রোববার (২৬ জানুয়ারি) সিলেট মহানগর ও জেলা পুলিশের বার্ষিক পুলিশ সমাবেশ ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে পুলিশ প্রধান ড.জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘শুধু পুলিশের আচরণগত দিক বদলালে হবে না। সকল থানার পরিবেশ বদলাতে হবে।

প্রত্যেকটি থানাকে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে। মানুষ থানায় গেলে রিসিভ করে নিতে হবে। পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ সহ্য করা হবে না।’

মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়া পুলিশ বাহিনী ২০১৯ সালে কোন রকম অর্থ লেনদেন, দুর্নীতি, অনিয়ম ও তদবির ছাড়াই স্বচ্ছতা এবং মেধার ভিত্তিতে প্রায় ১০ হাজার কনস্টেবল নিয়োগ দিতে সক্ষম হয়েছে। পুলিশ নিয়োগে স্বচ্ছতার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারীকে থ্যাংকস লেটার (ধন্যবাদপত্র) পাঠিয়েছেন।

অতীতে কোন সময়েই পুলিশে নিয়োগ পরীক্ষার পর কোনো সংস্থা আইজিপিকে থ্যাংকস লেটার পাঠায়নি। পুলিশের এই ‘বিরল নিয়োগ’ নিয়ে কমপক্ষে তিনবার নিজের ভাষণে স্বীকৃতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সিলেটে আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, ‘পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শতভাগ স্বচ্ছতা এসেছে। বিগত সময়ে ১০ হাজার পুলিশ সদস্য নিয়োগ করে আমরা প্রমাণ করেছি পুলিশ শতভাগ স্বচ্ছ। গার্মেন্টকর্মী ও দিনমজুরের সন্তানরা এখন অমাদের পরিবারের সদস্য। বিগত সময়ের তুলনায় বর্তমানে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। এখন জনসেবায় মনযোগী হতে হবে। মনে রাখতে হবে সেবাই আমাদের ধর্ম।’

অতীতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) পুলিশের দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে মুখর হলেও সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ সম্পর্কে তাদের নেতিবাচক কোন মন্তব্য শোনা যায়নি। ইতোমধ্যেই জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করে সফলতা পেয়েছে পুলিশ।

নিজেদের প্রচেষ্টাতেই জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের বিচক্ষণতা, দূরদৃষ্টি ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার মাধ্যমেই জঙ্গিবাদের ভয়াল থাবা থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় এখন পুলিশ-জনগণের সম্পর্কের মেলবন্ধনে উচ্চকিত হচ্ছে ইতিবাচক, সত্য-সুন্দর ধ্বনি।

পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী প্রায় সময়েই বলেন, ‘সাসটেইনেবল ডেভেলাপমেন্টের জন্য প্রয়োজন সাসটেইনেবল পিচ। সাসটেইনেবল পিচের জন্য প্রয়োজন হয় সাসটেইনেবল সিকিউরিটি। এবং এই সাসটেইনেবল সিকিউরিটির জন্য প্রয়োজন সাসটেইনেবল পুলিশিং। বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য এই সাসটেইনেবল পুলিশিং ব্যবস্থা কার্যকরের জন্য অহর্নিশ পরিশ্রম করে যাচ্ছে।’

দুইদিন আগে ডিএমপির ৪৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে পুলিশ প্রধান বলেন, ‘ডিএমপি সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা সাত দিন কাজ করে যাচ্ছে ঢাকা শহরকে নিরাপদ রাখতে। আমরা চেষ্টা করছি ঢাকার প্রত্যেকটি থানাকে বিশ্বাস ও আস্থার কেন্দ্রস্থল হিসেবে গড়ে তুলতে। আমরা চাই মানুষ সেবার জন্য থানায় আসবে, ফেরার সময় যেন হাসিমুখে ফিরে যায়।’

কালের আলো/এমএএএমকে