প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় অবহেলার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসছে আনসার বাহিনী
প্রকাশিতঃ 8:39 pm | February 13, 2020
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
৬১ লাখ সদস্যের বিশাল বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। এক সময় দেশের সবচেয়ে বড় এ স্বেচ্ছাসেবী বাহিনীর নামের পাশে ‘অবহেলিত’ শব্দটি জ্বলজ্বল করলেও সময়ের পরিক্রমায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক পর্বে গৌরবময় অবদান রাখা এই বাহিনীটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: নিখাদ আনন্দে প্রধানমন্ত্রী, ‘সাহসের বাতিঘর’ উজ্জীবিত করলেন আনসার বাহিনীকে
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেমন আধুনিকায়ন হচ্ছে ঠিক তেমনি ক্রমশ অর্জন করেছে দেশের ষোল কোটি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস। প্রত্যন্ত পল্লী থেকে শুরু করে মন্ত্রীদের বাসাবাড়ি, হাসপাতাল, বিদ্যুৎকেন্দ্র, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাসহ সারা দেশেই অতন্ত্র প্রহরীর ভূমিকা নিয়ে কাজ করছে আনসার ও ভিডিপির সদস্যরা।
শুধু কী তাই? দেশের প্রতিটি নির্বাচনে সরকারের হয়ে প্রতিটি কেন্দ্রে জীবনবাজি রেখেছে এই বাহিনীর সদস্যরা। আর এসবের নেপথ্যে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনসার বাহিনী পুনর্গঠনে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
সেই গতিধারায় গত ১০ বছরে আনসার বাহিনীর আধুনিকায়ন হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহে। ফলে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ ও জনসম্পৃক্ত একটি বৃহৎ শৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে তিনিই প্রথম আনসার বাহিনীর হাতে সর্বোচ্চ সম্মান জাতীয় পতাকা তুলে দেন।
আরও পড়ুন: সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূলেও আনসার সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে : প্রধানমন্ত্রী
রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত এই বাহিনীর প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই বাহিনীর সদস্যদের সততা, আন্তরিকতা এবং সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের যেমন ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ঠিক তেমনি আহ্বান জানিয়েছেন জনগণের সুরক্ষা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনেরও।
প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত স্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ বজায় রাখা এবং এই পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রে আনসার সদস্যরাও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একাডেমি, সফিপুরে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি’র ৪০ তম জাতীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করেন।
এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় নানা কর্মপরিকল্পনা ও কৌশল বাস্তবায়ন করেন। নিজের নেতৃত্বগুণ, বিচক্ষণতা ও ধৈর্যশীলতার মাধ্যমে বাহিনীকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করাতে উদ্যোগী হন তিনি।
প্রায় সময়েই তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী নির্দেশনায় দেশের জাতীয় সংকটময় ও জরুরি মুহুর্তে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মতৎপরতা এই বাহিনীকে সরকারের এক নির্ভরযোগ্য অংশে পরিনত করেছে। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রে এই বাহিনীর সদস্যরা সবসময়ই কর্মদক্ষতা ও সফলতার পরিচয় দিয়ে আসছেন।
আনসার বাহিনীর ভূয়সী প্রশংসায় প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে দেশের সর্ববৃহৎ বাহিনী হিসেবে অভিহিত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই বাহিনীর কার্যক্রম তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত এবং এর সদস্য সংখ্যা প্রায় ৬১ লাখ।
দেশের প্রতিটি গ্রামে বা মহল্লায় এই বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। কাজেই সরকারের যে কোন সচেতনতামূলক কার্যক্রম আনসার-ভিডিপি’র সদস্যদের মাধ্যমে খুব সহজেই তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে।
দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সম্পৃক্ত করতে সরকারের পরিকল্পনার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আনসার ও ভিডিপি বাহিনীকে উন্নয়ন কাজে আরও সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। আপনারা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাবেন, আমি সে আশাই করছি।’
আনসার ও ভিডিপি’র প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাহসিকতা ও কর্মদক্ষতা বর্তমানে সর্বজন স্বীকৃত। জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনে দায়িত্ব পালনসহ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ ও মৌলবাদ নির্মূলে আনসার বাহিনী বিশেষ ভুমিকা রেখে যাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাহিনীর প্রায় ৫০ হাজার অঙ্গীভূত আনসার সদস্য সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বিধান করে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অনন্য ভূমিকা পালন করছে।
বিমান বন্দরের নিরাপত্তায় এ বাহিনীর সদস্যরা ‘এভসেক’ (এভিয়েশন সিকিউরিটি) এর অংশ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। দেশ ও জনপদকে নিরাপদ রাখতে ২টি মহিলা ব্যাটালিয়নসহ এ বাহিনীতে ৪২টি আনসার ব্যাটালিয়ন রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পার্বত্য এলাকায় এ বাহিনীর ১৬টি ব্যাটালিয়ন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে অপারেশনাল ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে। এছাড়া নব গঠিত আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা কূটনৈতিক এলাকা, কূটনৈতিক ব্যক্তি এবং দেশের বিশিষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’
খেলাধুলায় আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের সফলতা
খেলাধুলায় আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের সফলতার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এ বাহিনীর সদস্যগণ খেলাধুলা ও দেশীয় সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুনাম বৃদ্ধি করেছে। সদ্য সমাপ্ত এসএ গেমস্- এ বাংলাদেশের অর্জিত ১৪২টি পদকের মধ্যে ৬৮টি পদক অর্জন করেছে এ বাহিনীর খেলোয়াড়ররা।
প্রধানমন্ত্রীর যতো পদক্ষেপ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আনসার বাহিনীকে ১৯৯৮ সালে সর্বোচ্চ সম্মান জাতীয় পতাকা প্রদান ছাড়াও ক্রীড়া ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য স্বাধীনতা পদক প্রদান করা হয়েছে।’
‘আনসার ব্যাটালিয়ন আইন’ প্রণয়ন করার কার্যক্রম সরকার হাতে নিয়েছে এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স ও আ¤্রকানন এর নিরাপত্তার জন্য ২টি আনসার ব্যাটালিয়ন গঠনের কার্যক্রম প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
একটি গার্ড ব্যাটালিয়নসহ ৪টি আনসার ব্যাটালিয়ন গঠন, ব্যাটালিয়নের সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন করে জনবল বৃদ্ধি, আনসার ও ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, ঝুঁকি ভাতা বৃদ্ধিসহ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের ও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
পাশাপাশি বিগত বছরে বাহিনীর কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পদবীর ৯৬৬ জন আনসার সদস্য পদোন্নতি পেয়েছেন বলেও তিনি জানান।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ হাসান রাসেল, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, বাংলাদেশ নৌ বাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল শামসুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/এনএল/এমএইচ