বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গণকে ডোপিংমুক্ত করতে সম্মিলিত লড়াই চান সেনাপ্রধান

প্রকাশিতঃ 8:58 am | February 17, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

ক্রীড়া অন্ত:প্রাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের ক্রীড়াঙ্গণের প্রতি তার অগাধ মমত্ববোধ। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গণের সব অর্জনে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা উচ্চারণের পাশাপাশি ক্রীড়াবিশ্বকে ডোপিংয়ের কালো থাবা থেকে রক্ষা করতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জরুরি বলেই মনে করেন বাংলাদেশ সেনবাাহিনী প্রধান এবং বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের (বিওএ) সভাপতি জেনারেল আজিজ আহমেদ।

রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিন্টোলে ঢাকায় সাউথ এশিয়া রিজিওন্যাল এন্টি ডোপিং (এসএরাডো) অর্গানাইজেশনের বোর্ড মিটিং এবং ম্যানেজমেন্ট প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে এমনটিই বলেন তিনি। 

বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গণে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে মুক্ত করতে সম্মিলিতভাবে লড়াই করতে চান বিওএ’র এ সভাপতি। তার ভাষ্য হচ্ছে- ‘ক্রীড়া জগতে ডোপিং স্টেকহোল্ডারদেরকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। ডোপিংয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সব স্টেকহোল্ডারের সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য নিশ্চিত করতে হবে একটি ডোপিংমুক্ত সুন্দর ক্রীড়া পরিবেশ।

বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) তত্ত্বাবধানে এবং বিওএ’র মেডিক্যাল এবং এ্যান্টি ডোপিং কমিটির সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এদিন ওই হোটেলে ঢাকায় সাউথ এশিয়া রিজিওন্যাল এন্টি ডোপিং (এসএরাডো) অর্গানাইজেশনের বোর্ড সভা এবং ম্যানেজমেন্ট প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

এই বোর্ড সভা এবং প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ এবং বাংলাদেশ থেকে পাঁচ বোর্ড সদস্য, বিশ্ব ডোপিংবিরোধী সংস্থার (ওয়াডা) দুই প্রতিনিধি, রিজিওন্যাাল এন্টি ডোপিং অর্গানাইজেশনের দুই প্রতিনিধি, সাউথ এশিয়া রিজিওন্যাল এন্টি ডোপিং (এসএরাডো) মহাপরিচালক এবং ম্যানেজারসহ আরও পাঁচ বিদেশী প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন।

সাউথ এশিয়া রিজিওন্যাল এন্টি ডোপিং (এসএরাডো) সংস্থার বোর্ড সভা পরিচালনা করার সুযোগ পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের সভাপতি ও সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। কারণ, এই বছরটিকেই বাঙালি জাতি উদযাপন করছে মুজিববর্ষ হিসেবে।

নিজের বক্তব্যের শুরুতেই তিনি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি ক্রীড়াক্ষেত্রেও দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রীর বদৌলতেই। প্রধানমন্ত্রী সব সময় খেলাধূলার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন এবং প্রায়ই তিনি নিজ নিজ অঙ্গণে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখা ক্রীড়াবীদদের অনুপ্রাণিত করেন।

দেশের ক্রীড়াঙ্গণের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর তীব্র অনুরাগ সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গণে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। আমাদের যুবারা সম্প্রতি বিশ্বকাপ জিতেছে। দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে রেকর্ড সংখ্যক স্বর্ণপদকও অর্জন করেছি আমরা।’

ডোপিং খেলাধুলার বিশ্বে একটি সংক্রামক রোগে পরিণত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা সকলেই সংক্রামকের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। ডোপিং কেবল স্বাস্থ্যের সাথেই নয়, খেলাধুলার চেতনাকেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।

ডোপিংয়েরর প্রবণতা রোধ করতে আমাদের আরও চৌকস হয়ে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে সব স্টেকহোল্ডারকে আরও সংবেদনশীল হতে হবে।’

ডোপিংয়ের বিরুদ্ধে প্রচারণায় কেবল খেলোয়াড় বা অ্যাথলেটিদের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না বলেও মনে করেন বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের এ সভাপতি।

তিনি বলেন, ‘এই প্রচারণায় ক্রীড়া সংগঠকদেরও যুক্ত করতে হবে। মাদক উৎপাদনকারী, পরিবেশক এবং ভোক্তাদেরকেও নজরদারির আওতায় আনতে হবে।

একই সাথে ক্রীড়াবিশ্বকে ডোপিংয়ের কালো থাবা থেকে রক্ষা করতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জরুরি। এজন্য একটি যথাযথ আইন এবং বিধি দ্বারা সমর্থিত একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন।’  

ডোপিংয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালানোর জন্য শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার মত দেন জেনারেল আজিজ।

তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে অ্যান্টি ডোপিং সম্পর্কিত এই বোর্ড সভা এবং পরিচালনা প্রশিক্ষণ আমাদের খেলাধুলায় ডোপিংয়ের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ে এগিয়ে যাওয়ার মানসিক শক্তি জোগাবে। আমরা বেশিরভাগ অ্যাথলেটকে এ ডোপিংয়ের কবল থেকে রক্ষা করতে চাই।’

বাংলাদেশের মেডিকেল এবং অ্যান্টি ডোপিং কমিটি অবিচ্ছিন্নভাবে ডোপিংয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে জানিয়ে বিওএ সভাপতি বলেন, ‘ডোপিং প্রতিরোধের জন্য পরীক্ষাগার সুবিধা, প্রযুক্তি, বুদ্ধিমত্তা এবং আইনি কাঠামোর মতো সংস্থাসমূহেরও সহযোগিতা প্রয়োজন।

যখন আমরা ডোপিং সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক বিধি ও বিধি মেনে চলার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি, আমরা অনুভব করেছি যে আমাদের অংশীদার সংস্থাগুলোকে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে আরও শিখতে হবে।

আমরা অ্যান্টি-ডোপিং শিক্ষা এবং ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। খেলাধুলায় ডোপিংয়ের বিরুদ্ধে ওয়ার্ল্ড অ্যান্টি ডোপিং কোড এবং ইউনেস্কোর সম্মেলন মেনে চলার জন্য আমরা ইতিমধ্যে এনওসি থেকে একটি অ্যান্টি-ডোপিং ইউনিট গঠন করেছি।’

ডোপিংয়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন এবং সরকারের কঠোর অবস্থানে রয়েছে জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ সরকার ক্রীড়াঙ্গনে ডোপিংয়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। আমরা এটি দমনে নিরলস কাজ করে চলেছি।

তিনি বলেন, সরকার সবসময় ক্লিন স্পোর্টসের ব্যাপারে মনোযোগী এবং স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন খেলাকে উৎসাহ দিয়ে আসছে। বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনও ভবিষ্যতেও এক্ষেত্রে সর্বাত্নক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর। ইতোমধ্যেই এই বিষয়ে আমরা একটি গোয়েন্দা ও তদন্ত কমিটি গঠন করেছি।

কালের আলো/এমএএএমকে