প্রয়াসের শিশু-কিশোরদের ডিসপ্লেতে বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাস, মুগ্ধ দিলশাদ নাহার আজিজ
প্রকাশিতঃ 11:31 pm | February 24, 2020
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
সবার চোখের সামনে বাঙালির আবহমান ইতিহাস। ৫২’র ভাষা আন্দোলনের চেতনা যেন রক্তে টগবগ করে ফুটে উঠলো। রক্তগোধূলীর সেই বিকেলে ভাষার জন্য জীবন দিলেন রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার ও শফিউররা। বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের এই প্রথম সোপান পরবর্তী সব আন্দোলনের অনুপ্রেরণা ও প্রাণশক্তি।
আরও পড়ুন: ঢাকা প্রয়াসে দুই দিনের ছুটি; ১২ লাখ টাকা প্রদানের ঘোষণা
ঐতিহাসিক ৭ মার্চে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে গণসূর্যের মঞ্চ কাপিয়ে ইতিহাসের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শোনালেন তাঁর অমর কবিতাখানি- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।’
৫২ সালে অর্জিত বাঙালির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে বিজয়ের যে চেতনা ধারণের পালা শুরু ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এলো পরিপূর্ণতা। বাঙালি পেলো চির কাঙ্খিত স্বাধীনতার স্বাদ।
মনোমুগ্ধকর ধারাবাহিক ডিসপ্লের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাস, ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ২৫ মার্চ কালো রাতের ভয়াবহতা এবং ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বতার খন্ড খন্ড উপাখ্যান মঞ্চস্থ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত প্রয়াস বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
এক সময় যারা ছিল অবহেলিত সেই শারীরিক, বুদ্ধি, বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরেরা প্রয়াসের অসামান্য প্রয়াসে নিজেদের মানসিক বিকাশে অভূতপূর্ব উন্নতি যেমন সাধন করেছে তেমনি নিজেদের অনন্য উপস্থাপনায় ফুটিয়ে তুলেছে দেশের পুরো জন্ম-ইতিহাস।
আরও পড়ুন: বিশেষ শিশু জিহাদুলের আঁকা; বজ্রকন্ঠে আকাশমুখী আঙ্গুলের বঙ্গবন্ধুর সেই ছবি
শুধু কী তাই? মুজিববর্ষে জাতির জনকের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ঘটনাপ্রবাহের প্রতীকী মঞ্চায়ন করে এই বিশেষ শিশুরা। বঙ্গবন্ধুর ২৪ বছরের সংগ্রামের পর দেশ স্বাধীন করার মাধ্যমে যে বিজয়ের আলোকবর্তিকা দিয়েছেন তা ধারণ করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টাও অপূর্ব ভঙ্গিমায়, নতুন সাজে-উপাদানে তুলে আনা হয়।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল থেকে সন্ধ্যা প্রয়াস বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিশেষ শিশুদের বাঙালির বীরত্বব্যঞ্জক আন্দোলন-সংগ্রামের নানা দিক, আত্মদানের মহৎ কীর্তির অসামান্য উপস্থাপনে রীতিমতো মুগ্ধতা প্রকাশ করেন প্রয়াসের পৃষ্ঠপোষক ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের জীবনসঙ্গী দিলশাদ নাহার আজিজ।
ধাপে ধাপে সাজানো জাতির স্বাধীনতাসংগ্রামের চির দীপ্তিমান অধ্যায়ের দীপ্তমান ও চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনের পাশাপাশি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এসব শিক্ষার্থীরা তাদের সীমাবদ্ধতাকে কাটিয়ে স্পেশাল অলিম্পিকসহ আন্তজার্তিক ও জাতীয় পর্যায়ে ক্রীড়াঙ্গনে স্বর্ণ,রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক অর্জনের কৃতিত্বে সবাইকে অভিনন্দন জানান প্রয়াসের এই পৃষ্ঠপোষক।
তিনি বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানে শিশুদের উচ্ছ্বাস ও নৈপুণ্য উপস্থিত সকলকে আনন্দিত ও মুগ্ধ করেছে। উপযুক্ত পরিবেশ ও সহায়তা পেলে বিশেষ শিশুরাও তাদের মেধাকে বিকশিত করে অন্য সকল শিশুর ন্যায় সবার কাজে নৈপূণ্যের সাথে অংশ নিতে পারে। আজকের এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তারা তারই যথার্থ প্রমাণ করেছে।
এ সময় কেন্দ্রীয় প্রয়াসের ভাইস প্যাট্টন রোকসানা শফিক, প্রয়াস পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসানুল কবীর, অধ্যক্ষ কর্নেল মাহাবুবুল আলম সিদ্দিকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
২০০৬ সালের ১৮ জুলাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে ‘সেনা সহায়ক স্কুল’ নামে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। পরে ২০১০ সালের ২ এপ্রিল স্কুলটির নাম পরিবর্তন করে প্রয়াস করা হয়। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে ৮৯৩ জন শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে।
বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন শিশুরাই জাতির ভবিষ্যত
প্রয়াসের এই বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সমাপনী অনুষ্ঠানে ৭৪ টি ইভেন্টে ২২২ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কার প্রদানসহ সকল শিক্ষার্থীকে সান্ত¦না পুরস্কার দেওয়া হয়। সমাপনী দিবসের অনুষ্ঠানে বিশেষ ও অন্যান্য শিক্ষার্থীরা খেলার ইভেন্টের সঙ্গে সঙ্গে ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রয়াসের পৃষ্ঠপোষক দিলশাদ নাহার আজিজ ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। এরপর তিনি ৫০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতা, ব্লকে ছাপ দিয়ে দৌড় ও কালার ম্যাচিং প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারী শিশুদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
এরপর তিনি সোজা চলে যান অনুষ্ঠান মঞ্চে। সেখানে নিজের বক্তব্যের শুরুতেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের স্ত্রী দিলশাদ নাহার আজিজ গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
তিনি বলেন, ‘আমরা মুজিববর্ষের সন্ধিক্ষণে অপেক্ষমান। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন আজকের শিশুরাই জাতির ভবিষ্যত। বঙ্গবন্ধু সুখী, সমৃদ্ধশালী সেই সোনার বাংলা গড়তে তারই সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তিদের স্বাভাবিক জীবনে আনার লক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এবং নিরন্তর কাজ করে চলেছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এবং প্রয়াসের চিকিৎসা, থেরাপি ও সেবায় উন্নত করে চলেছে। আমি খুবই আনন্দিত যে আজ প্রয়াস একযোগে ১১ টি সেনানিবাসে তাদের কার্যক্রম সফলভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে প্রয়াস থেকে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় বিশেষ শিশু ও পরিবার এই সেবা ও সুবিধা নিয়ে উপকৃত হচ্ছে।’
বিশেষ শিশুরা বয়ে এনেছে সুনাম
প্রয়াসের পৃষ্ঠপোষক ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের জীবনসঙ্গী দিলশাদ নাহার আজিজ বলেন, ‘বিশেষ শিশুরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে খেলাধুলায় সাফল্য অর্জন করে দেশের সুনাম অর্জন করেছে।
শুধুমাত্র খেলাধুলায় নয় শিক্ষা ও আইসিটিতেও তাদের সাফল্য প্রশংসনীয়। তাদের এ সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্য প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অভিভাবকবৃন্দকেও যথেষ্ট সচেতন, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা প্রদান করতে হবে। মনে রাখতে হবে বিশেষ শিশুরা আমাদের সমাজ ও পরিবারেরই অংশ।’
কালের আলো/এমএএএমকে