বিশেষ শিশু জিহাদুলের আঁকা; বজ্রকন্ঠে আকাশমুখী আঙ্গুলের বঙ্গবন্ধুর সেই ছবি

প্রকাশিতঃ 4:07 pm | February 25, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তদানীন্তন রেসকোর্স ময়দান) বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু। বুকে বাঙালি, চোখ জুড়ে স্বপ্ন কথন। শোষিত মানুষের মুক্তিদ্রষ্টার আকাশমুখী আঙ্গুল। মাত্র ১৯ মিনিটে তুলে ধরলেন ইতিহাসের পুরো ক্যানভাস।

আরও পড়ুন: প্রয়াসের শিশু-কিশোরদের ডিসপ্লেতে বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাস, মুগ্ধ দিলশাদ নাহার আজিজ

লাখ লাখ মুক্তিকামী মানুষের উপস্থিতিতে জাতির মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বজ্রকন্ঠে ঘোষণা করলেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধুর বজ্রনিনাদে মহামুক্তির আনন্দে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে বাঙালি জাতি।

ঐতিহাসিক ৭ মার্চে সেদিনের রেসকোর্স ময়দানে উত্তাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে অনবদ্য এক মহাকাব্যের কবির ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তার ঐতিহাসিক উচ্চারণের সময়কার সেই দৃশ্যপট নিয়ে অসাধারণ এক ছবি একেছেন প্রয়াস বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী জিহাদুল।

নিজের আঁকা এই ছবিই আবার নিজের পাঠশালা প্রয়াসের পৃষ্ঠপোষক ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের স্ত্রী দিলশাদ নাহার আজিজের হাতে তুলে দিতে পেরে অন্যরকম এক আনন্দ বয়ে যাচ্ছে শিশু জিহাদুলের কোমল মনে। নিজের সন্তানের আঁকা ছবির এমন মূল্যায়নে খুশি অভিভাবকও।

ছবি- সাব্বির আহমেদ খান, কালের আলো : প্রয়াস বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী জিহাদুলের হাতে আঁকা ৭ মার্চে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক সেই ভাষণের ছবি।

অনুষ্ঠান শেষে জিহাদুল কালের আলো’র সঙ্গে আলাপে বলছিল, ‘আমি অনেক খুশি। বড় ম্যাডামকে বঙ্গবন্ধুর ছবি গিফট দিয়েছি। তিনি আমাকে আদর করেছেন। আমার অনেক ভালো লেগেছে।’

আরও পড়ুন: ঢাকা প্রয়াসে দুই দিনের ছুটি; ১২ লাখ টাকা প্রদানের ঘোষণা

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল থেকে সন্ধ্যা প্রয়াস বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রয়াস পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসানুল কবীর ছবির কারিগর জিহাদুলকে সঙ্গে নিয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি দিলশাদ নাহার আজিজের হাতে তুলে দেন।

শিশু জিহাদুলের মতোই বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের আঁকার হাত দারুণ। মুগ্ধ না হয়ে ওপায় নেই যেন! বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিভিন্ন দিবসে নিজের শুভেচ্ছা কার্ডে স্থান দিয়েছেন এসব বিশেষ শিশুদের আঁকা ছবি।

ছবি- সাব্বির আহমেদ খান, কালের আলো : দর্শক সারিতে বসে বিশেষ শিশুদের মনোমুগ্ধকর ডিসপ্লে উপভোগ করছেন প্রয়াসের প্রধান পৃষ্ঠপোষক দিলশাদ নাহার আজিজ। পাশেই উপস্থিত ছিলেন ভাইস প্যাট্টন রোকসানা শফিক।

বলা হয়, বিশেষ শিশুরা বরাবরই প্রধানমন্ত্রীর স্নেহভাজন। নানাভাবেই তিনি এসব শিশুদের উৎসাহ দেন। বেশ গুরুত্ব দিয়েই বলে থাকেন ‘অটিজম আক্রান্তদের মধ্যে অনেক সুপ্ত ট্যালেন্ট থাকে, সেগুলো আমাদের কাজে লাগানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা কার্ডে স্থান পাওয়া বিশেষ শিশুদের ৮ জনই প্রয়াসের কৃতি শিক্ষার্থী। বিশেষ শিশুদের পথচলাকে আরও সাবলীল করতে আন্তরিকভাবেই কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

দেশপ্রেমিক এই বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এখন গর্ব করেন তাদের অভিভাবকরা।

প্রয়াস বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রয়াস প্রাঙ্গণের মাঠের পাশেই বসানো হয়েছিল বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের পৃথক পৃথক বিশালাকার ছবি। সেনাপ্রধানের সেই ছবিতে তাঁর একটি হৃদয়ছোঁয়া বক্তব্য রয়েছে।

ছবি- সাব্বির আহমেদ খান, কালের আলো :মাঠের পাশেই সুশোভিত ছিল দেশপ্রেমিক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের গুরুত্বপূর্ণ উক্তি।

যেখানে তিনি বলেছেন, ‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করার মধ্যে যেমন স্বর্গসুখের অনুভূতি রয়েছে তেমনি রয়েছে হৃদয়ের আর্তনাদ।’

বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এসব শিশুদের তিনি বোঝা নয় সম্পদ মনে করেন। তাদের বিশেষ প্রতিভার মূল্যায়ন করেই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রয়াসকে আরও এগিয়ে নিতে প্রতিনিয়তই দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন, এমনটিই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।  

বিশেস চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের মূলধারায় নিয়ে এসে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে প্রয়াস।

তাদের জীবনমুখী শিক্ষা দৈনন্দিন জীবনের কার্যাবলি, খেলাধুলা ও শরীরচর্যা, স্নায়ু ও মানসিক সঞ্চালন, সর্বোপরি সুশৃঙ্খল এক সামাজিক নাগরিক গড়ে তুলতে কাজ করছে। ক্রীড়া, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই গৌরব বয়ে আনছে প্রয়াসের শিক্ষার্থীরা।

ছবি- সাব্বির আহমেদ খান, কালের আলো : প্রয়াসের বিশেষ শিশুদের হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন সেনাপ্রধানের স্ত্রী দিলশাদ নাহার আজিজ।

প্রয়াস কীভাবে একজন বিশেষ শিশুর জীবন বদলে দিতে পারে তাঁর ছোট্ট একটি উদাহরণ সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী জুনায়েদের জবানীতে। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠানে মধ্যমাঠে হুইল চেয়ারে বসে মাইক হাতে নিজের জীবনের পরিবর্তনের গল্প বলছিলো এভাবে- ‘এক সময় আমি খুশি ছিলাম না।

আমার পৃথিবীটি ছিল আমার ছোট্ট বাড়ি। আমার বাইরে যেতে খুব ইচ্ছা করতো। মাকে জোর করলেই বকতেন। আমার খুব রাগ লাগতো। জিনিসপত্র ভাঙতাম….।’

সবার চোখই যেন ছলছল করছে। জুনায়েদ এবার বলছে- ‘আমার বাবা-মা আমাকে প্রয়াসে নিয়ে এসেছেন। এখানে এসে পেয়েছি অনেক অনেক নতুন বন্ধু, শিক্ষক।

যাদের আদরে বেড়ে উঠছি, পড়ালেখা করছি, গান করছি। আমরা সবাই গুডবয়, গুড গার্ল। বড় হয়ে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। নতুন কিছু আবিস্কার করতে চাই। আমাদের স্বপ্ন আকাশছোঁয়া।’

ছবি- সাব্বির আহমেদ খান, কালের আলো : প্রয়াসের বিশেষ শিশুদের অর্জন ঘুরে ঘুরে দেখছেন প্রয়াসের প্রধান পৃষ্ঠপোষক দিলশাদ নাহার আজিজ।

শারীরিক, বুদ্ধি, বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোররা নিজেদের মনোমুগ্ধকর ধারাবাহিক ডিসপ্লের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিকথা, ৫২ থেকে ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে উপাখ্যান রচনা করে অসামান্য দক্ষতায়।

কয়েক ধাপে সাজানো জাতির স্বাধীনতাসংগ্রামের চির দীপ্তিমান অধ্যায়ের অনন্য উপস্থাপনে মুগ্ধ হয়েই যেন বারবার প্রয়াসের শিক্ষার্থীদের প্রশংসা করছিলেন পৃষ্ঠপোষক দিলশাদ নাহার আজিজ।

ঢাকা প্রয়াসের দুইদিন ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি ১২ লাখ টাকা প্রদানেরও ঘোষণা দিয়ে নিজের বক্তব্যে বলছিলেন, ‘আজকে তোমাদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা, খেলাধুলা, ডিসপ্লে দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। আমি তোমাদের সাফল্যময় ভবিষ্যৎ সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

বিশেষ শিশুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে প্রয়াসের সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন এজন্য তাদের সাধুবাদ জানাই।

ছবি: সাব্বির আহমেদ খান, কালের আলো : একটি আনন্দঘন দিন কাটলো প্রয়াসের শিশু-কিশোরদের। শিশু-কিশোরদের সাথে ফটোসেশনে অংশ নেন সবাই।

কালের আলো/এমএএএমকে