ট্রাফিক জটমুক্ত লালমনিরহাটের আকাশ; আনন্দমুখরতায় উদ্বোধন আর্মি এভিয়েশন স্কুলের (ভিডিও)
প্রকাশিতঃ 7:06 pm | March 02, 2020
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো, লালমনিরহাট থেকে :
মাথার ওপর গনগনে সূর্য। তাঁতানো গরমের ভেতরেও উচ্ছ্বাস-আনন্দে ভরপুর এক পরিবেশ। সোমবার (০২ মার্চ) দুপুর ১২ টার দিকে উল্লাসমুখর এমন আবহেই দেশের উত্তরে অবস্থিত সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটে এক সুইচে আর্মি এভিয়েশন স্কুলের নতুন ভবন, আর্মি অফিসার্স মেস, এসএম ব্যারাক-এর ভিত্তি প্রস্তর, লালমনিরহাট মিলিটারি ফার্মের জন্য একটি অত্যাধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় মিল্কি পার্লারের উদ্বোধন করলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
আরও পড়ুন: স্বপ্ন অ্যাটাক হেলিকপ্টার; নতুন সংযোজন হচ্ছে ৬ হেলিকপ্টার : সেনাপ্রধান (ভিডিও)
সঙ্গে সঙ্গেই মুহুমুর্হু করতালি। সেনাপ্রধান সুইচ বাটন চাপার পর পরই সবার চোখ পশ্চিমের আকাশে। প্রায় একশ’ ফুট উঁচুতে আকাশে উড়ছে দু’টি এয়ারবাস ডৌফিন হেলিকপ্টার। তাদের এখান থেকে নেমে এসেছে পুষ্পবৃষ্টি! খানিক সময় নিয়েই একইভাবে ফ্লাইপাস করে যাচ্ছে তিনটি ডায়মন্ড বিমান।
এবার সব চোখ যেন লাল-সবুজের নিশান উড়িয়ে আসা তিনটি ছেচনা ১৫২ বিমানের দিকে। স্বাধীনতার মাসে উদিত সূর্যে রক্তের রঙ সবুজ বাংলায় মিশে যেন তৈরি হলো বাংলার লাল সবুজ পতাকা। এমন দৃশ্যকাব্য রচনা করেই জাতীয় পতাকার রঙ লাল-সবুজ ধোঁয়া ছিটিয়ে চলতে থাকলো ছেচনা বিমানগুলো।
এভাবেই বিনম্র অভিবাদন জানানো হলো দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক এই বাহিনীটির প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এভিয়েশন গ্রুপের পরিচালনায় এই স্কুলটিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সব বৈমানিক, প্রকৌশলী এবং বিমান ক্রুদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিমান চালানোয় দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
একই সূত্র জানায়, এই স্কুলে ১৪টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের সৈনিকরা। আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সৈনিকদের দক্ষতা বাড়াতে সেনাবাহিনীর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে আর্মি এভিয়েশন স্কুলটি ট্রাফিক যটমুক্ত আকাশের লালমনিরহাট বিমানবন্দরে স্থানান্তর করা হয় বলে জানান সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
লালমনিরহাট বিমানবন্দরে এই স্কুল স্থানান্তরের মাধ্যমে সেনাবাহিনী এভিয়েশনে সক্ষমতা আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে এমন মন্তব্য করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান বলেন। এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপে নোয়াখালীর স্বর্ণদ্বীপের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের স্বর্ণদ্বীপের এক্সারসাইজে গিয়েছিলেন।
সেখানে আপনারা দেখেছেন যে যুদ্ধকালীন সময়ে, আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের কত দায়িত্ব থাকতে পারে, কত ধরণের সাপোর্টিং রোলে তাদের আসতে হয়। সেই প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে আমরা দেখেছি যে, ঢাকাতে আমাদের এই এভিয়েশন স্কুলটা তেজগাঁও থেকে কাজ করতো।
তেজঁগাও এখন এয়ার ফোর্স, সিভিল এভিয়েশন ও সিভিল এয়ার লাইনার ব্যবহার করে। এত কনজেশন হয়ে গেছে সেখানে এত প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব না। সার্বিক বিবেচনা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম লালমনিরহাটে আমাদের এভিয়েশন স্কুলটি স্থানান্তরিত করার। তারই ফলশ্রুতিতে এখানে আর্মি এভিয়েশন স্কুলের উদ্বোধন করা হলো।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু কিছু প্রশিক্ষণ আগে ঈশ্বরদীতে হতো। সেখানে আমাদের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্রজেক্ট চলে আসছে। যখন সেটি অ্যাক্টিভেট করা হবে তখন ঈশ্বরদী এয়ার ফিল্ড চলে আসবে নো ফ্লায়িং জোনের ভেতরে।’
এ সময় সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. সামছুল হক, এভিয়েশন গ্রুপ কমান্ডার মেজর জেনারেল আলমগীর হোসেন, মাস্টার জেনারেল অব অর্ডন্যন্স মেজর জেনারেল মো. আবু সাঈদ সিদ্দিক, রংপুর সেনানিবাসের ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম, লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু জাফর, জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আবিদা সুলতানা ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরে সেনাপ্রধান বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত লালমনিরহাটের ডেইরি ফার্মে মিল্কিং পার্লার পরিদর্শন করেন সেনাপ্রধান। এই ফার্মে ২ হাজার ২শটি গরুর মধ্যে ৬শটি দুগ্ধজাত গাভি রয়েছে।
এসব গাভি থেকে দৈনিক সাড়ে ৬ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন করা সক্ষম। মিল্কিং পার্লারের মধ্য দিয়ে লালমনিরহাট মিলিটারি ফার্মটি দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে আরও এক ধাপ এগিয়েছে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে একটি বিশেষ হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে সকাল ১১টায় লালমনিরহাট বিমানবন্দরে অবতরণ করেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। এরপর আর্মি এভিয়েশন স্কুল, মিল্কিং পার্লার উদ্বোধন করে সেনাবাহিনী পরিচালিত লালমনিরহাটের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করে দুপুরে একই হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় ফিরেন তিনি।
কালের আলো/এমএএএমকে