মহানায়কের জন্মশতবার্ষিকীতে সেনাপ্রধান; বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তাবাদের মূর্ত প্রতীক
প্রকাশিতঃ 9:13 pm | March 17, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
বাঙালি জাতির ইতিহাসে অনন্য এক মাইলফলক ‘মুজিববর্ষ’। ইতিহাসের খরস্রোতায় ১৯২০ সালের সেদিনের মতো শত বছর পর আজকের দিনটিও মঙ্গলবার। আজ আনন্দে পুলকিত হয়েছে গোটা বাঙালি জাতি। আবারও বাঙালির প্রতিটি ঘর হয়ে উঠেছে মুজিবময়।
মহিয়সী নারী সায়রা খাতুনের কোলজুড়ে নেমে আসা সেই আলোকবর্তিকা, ধন্য সেই পুরুষের জন্মশতবার্ষিকী নানা উদ্যোগে, বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে পালিত হচ্ছে। ‘খোকা’ ডাকনামের শিশুটি পরবর্তীতে হয়ে উঠেছিলেন বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারী। পিতা মুজিবের জন্মশতবার্ষিকীকে ঘিরে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করেছে দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীও।
ঐতিহাসিক এই মুহুর্তকে শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসায় স্মরণীয় করে রাখতে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ দেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। সেখানে প্রকাশিত হয়েছে দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের বাণীও।
স্বাধীনতা ও শান্তির প্রতীক, প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে প্রোজ্জ্বলিত হওয়া ইতিহাসের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এক বাণীতে জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, ‘আজ থেকে শত বছর পূর্বে বাংলার মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এক অকুতোভয় বাঙালি, যিনি স্বল্প সময়ের মধ্যেই পৃথিবীর ইতিহাস বদলে দেয়া এক অবিসংবাদিত নায়ক-এ পরিণত হয়েছিলেন।
হিমালয়সম ব্যক্তিত্বের অধিকারী শেখ মুজিবুর রহমান যাকে বাঙালিরা ভালোবেসে নাম দিয়েছিলেন ‘বঙ্গবন্ধু’, সেই মহান নেতা আজ শুধু স্বাধীন বাংলাদেশেরই নয় বরং বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের প্রেরণার উৎস। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ আজ একটি অভিন্ন সত্তা। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে এই মহানায়কের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করতে পেরে আমরা সত্যিই গর্বিত।’
বাঙালি জাতীয়তাবাদের এক মূর্ত প্রতীক বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাঙালি জাতীয়তাবাদের এক মূর্ত প্রতীক। বাঙালি জাতির চরম দু:সময়ে তিনি আলোকবর্তিকা হয়ে লক্ষ কোটি মানুষের স্বপ্নের দ্বার উন্মুক্ত করেছিলেন।
নিষ্পেষিত এই জনপদের মুক্তির সংগ্রামে তিনি ছিলেন আমাদের প্রেরণা এবং আস্থার প্রতীক। বঙ্গবন্ধু তার সংগ্রাম জীবন ও নেতৃত্বের গুণাবলির মাধ্যমে পরিণত হয়েছিলেন বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে।
বঙ্গবন্ধু তাই শুধু একজন মহান নেতাই নন, তিনি একটি প্রতিষ্ঠান। বঙ্গবন্ধু মানেই সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুর অসম সাহসিকতা, যাদুকরী নেতৃত্ব, প্রজ্ঞা এবং সর্বোপরি দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা উদ্ধুদ্ধ করেছিল এ দেশের শত কোটি মানুষকে, যার ফলশ্রুতিতেই আমাদের আজন্ম লালিত স্বপ্ন ‘স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ’ বাস্তবায়িত হয়।
অবিসংবাদিত এই নেতার কারণেই বহু সংগ্রাম, ত্যাগ, তিতিক্ষা ও নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’

বঙ্গবন্ধু আমাদের শিখিয়েছেন সততা, দেশপ্রেম
জেনারেল আজিজ আহমেদ আরও বলেন, ‘১৯৭১ সনে রণাঙ্গনেই অভ্যুদয় হয়েছিল আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর বাঙালি সদস্যগণ এ দেশের আপামর জনসাধারণের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করেছিলেন। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই।
বঙ্গবন্ধু আমাদের শিখিয়েছেন যে, সততা, দেশপ্রেম, সাহসিকতা, ত্যাগ এবং পরিপূর্ণ বিশ্বাস হলো যোগ্য নেতৃত্বের মূল ভিত্তি। বঙ্গবন্ধুর যাদুকরী ভাষণ, পর্বত প্রমাণ ব্যক্তিত্ব এবং অতুলনীয় প্রজ্ঞা, তৎকালীন সশস্ত্র বাহিনীর বাঙালি সদস্যদের পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পরিত্যাগ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে অনুপ্রাণিত করেছিল।’
আধুনিক সেনাবাহিনী গড়ে তোলার ওপর জোর দেন বঙ্গবন্ধু
স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলার কঠিন সংগ্রামের মধ্যেও দেশের জন্য একটি আধুনিক সেনাবাহিনী গড়ে তোলার ওপর জোর দেন বলে মন্তব্য করেন সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, ‘একটি স্বাধীন দেশের সশস্ত্র বাহিনী কোন মূল্যবোধকে ধারণ করে গড়ে উঠবে সে ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুর সেই নির্দেশনাসমূহ সঠিকভাবে অনুধাবন করা এবং সে অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনীকে গড়ে তোলা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এ প্রসঙ্গে আমি সশস্ত্র বাহিনীর সকল সদস্যকে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির প্রথম ব্যাচের পাসিং আউট প্যারেড এ প্রদত্ত ভাষণকে যথাযথভাবে অনুসরণের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনী আজ শক্তিশালী
জাতির পিতার নির্দেশনায় প্রণীত হয় প্রতিরক্ষা নীতি ১৯৭৪ এবং পরবর্তীতে এই নীতির ওপর ভিত্তি করেই ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ ও ‘জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি ২০১৮’ প্রণীত হয়েছে, নিজের বাণীতে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান।
জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথ ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী আজ একটি শক্তিশালী ও সক্ষম বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও জনগণের আস্থা অর্জনের পাশাপাশি জাতীয় প্রয়োজনে যেকোন দায়িত্ব পালনে সক্ষমতা অর্জন করেছে।

প্রশিক্ষণ, আধুনিক সরঞ্জাম এবং দৃঢ় সাংগঠনিক ভিত্তিতে বলীয়ান বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ২১ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আজ সম্পূর্ণ প্রস্তুত। জাতির জনকের আকাঙ্খা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অনুকরণীয় উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা মেনেই সেনাবাহিনীর অভিযান পরিকল্পনায় জনগণকে সম্পৃক্ত করার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে যা আমাদের সমরনীতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।’
জাতির পিতা ছিলেন সর্বতোভাবে প্রকৃত বাঙালি
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ছিলেন সর্বতোভাবে একজন প্রকৃত বাঙালি, এমন মূল্যায়ন দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে উৎসবমুখর পরিবেশে ২০২০ সনকে ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে উদযাপন করা হচ্ছে।
আমাদের মনে রাখতে হবে যে, বঙ্গবন্ধু কেবল স্বপ্নদ্রষ্টাই নন, স্বপ্ন বাস্তবায়নেও তাঁর দক্ষতা দৃষ্টান্তমূলক। তাই আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, কেবল কথা নয় বরং মহান এই নেতার দিকনির্দেশনাসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই তার প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন করা সম্ভব।’
নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের অনুপ্রেরণা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকীর এই ঐতিহাসিক মুহুর্তে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ দৈনিক পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করতে যাচ্ছে জেনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত, বলেন সেনাপ্রধান। তার ভাষ্য হচ্ছে- ‘আমি এই মহতী উদ্যোগকে স্বাগত জানাই এবং এই প্রকাশনার সাথে সম্পৃক্ত সকলকে জানাই আমার আন্তরিক অভিনন্দন।
আমাদের নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের অনুপ্রেরণা হিসেবে এই প্রকাশনা প্রভূত অবদান রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। পরম করুনাময় আল্লাহতায়ালা আমাদের সহায় হউন। আমিন।’
কালের আলো/এমএএএমকে