কারা ‘খুন’ করতে চায় এমপি বাবেল গোলন্দাজকে?
প্রকাশিতঃ 11:30 am | June 02, 2018
পলিটিক্যাল এডিটর, কালের আলো :
অনেক ছক কষেই হত্যা করা হয়েছিল গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে। একইভাবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেলকেও হত্যা করতে ভয়াবহ পরিকল্পনা নিয়েই অগ্রসর হচ্ছিল রাজধানী ঢাকার পেশাদার একটি কিলার গ্রুপ।
মিশন সফল করতে খোদ নিজ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী এক নেতাই কিলার গ্রুপটি’র সঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন করেছেন। এ চক্রের সঙ্গে আবার হাত মিলেয়েছেন দলীয় সাবেক এক সংসদ সদস্য এবং দলীয় পদধারী এক নেতা।
সূত্র মতে, দলীয় সংসদ সদস্য বাবেলের সঙ্গে তারা চিরতরে সরিয়ে দিতে চান তাঁর ঘনিষ্ঠ স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা তিন নেতাকেও। এই তিন নেতাই এলাকায় অবস্থানরত সময়ে এ সংসদ সদস্যের সার্বক্ষণিক ‘ছায়া সঙ্গী’ হয়ে থাকেন।
একই সূত্র জানিয়েছে, কিলার গ্রুপের তিনটি টিমের মধ্যে কোটি টাকার ভাগভাটোয়ারা’র দ্বন্দ্বে ফাঁস হয়ে গেছে স্থানীয় সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেলকে হত্যা’র ভয়ানক পরিকল্পনা। আপাতত এ পরিকল্পনা ভেস্তে গেলেও ভেতরে ভেতরে আরো ঠান্ডা মাথায় নতুন পরিকল্পনা এঁটে অগ্রসর হচ্ছে ওই চক্রটি। দৈনিক কালের আলো’র অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ভয়াবহ এসব তথ্য।
দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রয়াত কিংবদন্তি রাজনীতিক, বার বার নির্বাচিত আমৃত্যু সংসদ সদস্য আলতাফ হোসেন গোলন্দাজের রক্তের উত্তরাধিকার ও সাবেক ডাকসাইটে ছাত্রলীগ নেতা ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল রেকর্ড ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এ সময় তাঁর কাছে মনোনয়ন যুদ্ধে পরাস্ত হন ‘পিস্তল এমপি’ হিসেবে পরিচিত ক্যাপ্টেন (অব:) গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ওবায়দুল্লাহ আনোয়ার বুলবুলসহ আরো কয়েক নেতা। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই উন্নয়ন আর জনকল্যাণ নিশ্চিত করতে সক্ষম হওয়ায় স্থানীয় নির্বাচনী রাজনীতিতে বাবেল গোলন্দাজের পক্ষে একাট্টা স্থানীয় জনসাধারণ।
দলটির নেতা-কর্মীরা বলছেন, ফাহমি গোলন্দাজ বাবেলের ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বের দৌলতেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, ১৫ টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়মাল্য পড়েছেন। দেশের অনেক এলাকায় যেখানে এমপিদের কারণে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ‘নৌকা’ ডুবেছে সেখানে ব্যতিক্রমী এক দৃষ্টান্তই স্থাপন করেছেন বাবেল গোলন্দাজ। এমনকি জেলা পরিষদ নির্বাচনেও উপজেলার ২৪৪ টি ভোটের মধ্যে ২৪৩ টি ভোট পেয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী।
স্থানীয় জনসাধারণের এ সংসদ সদস্যের প্রতি আকুন্ঠ সমর্থনের কারণে মূলত ‘মাথাব্যাথা’ তৈরি হয়েছে তাঁর সঙ্গে কুলিয়ে ওঠতে না পারা মনোনয়ন প্রতিদ্বন্দ্বীদের। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আবারো ‘নৌকার কান্ডারী’ হিসেবে বাবেল গোলন্দাজই বহাল থাকবেন এমনটি আঁচ করতে পেরে ওই চক্রটি এবার পরিকল্পনা নিয়েছে তাকে দুনিয়া থেকেই চিরতরে সরিয়ে দেয়ার!
সূত্র জানায়, দলীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে এ হত্যা পরিকল্পনার তালিকায় রয়েছে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান সানিল, উপজেলা যুবলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহবায়ক আবু কাওসার ও পৌর যুবলীগের আহবায়ক মাহমুদ হাসান সজীবের নাম।
এমনকি পর পর দুইবার ওই পেশাদার কিলার গ্রুপ তাদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছে। এ ঘটনায় গফরগাঁও থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
কারা খুন করতে চায় এমপি বাবেলকে এমন প্রশ্নের জবাবে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান সানিল কালের আলোকে বলেন, ‘ধনাঢ্য রাজাকারের সন্তান ওবায়দুল্লাহ আনোয়ার বুলবুল এ ভয়ানক হত্যার ষড়যন্ত্র করছেন।
ভোটের মাঠে এমপি বাবেলের সঙ্গে মনোনয়ন প্রতিযোগীরা অনেকটাই নি:সঙ্গ থাকায় তারা এবার পেছনের দরজা দিয়ে হত্যাকান্ড ঘটিয়ে দলীয় মনোনয়ন ও এমপিত্ব দুটিই পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেছেন। কিন্তু গফরগাঁওয়ের সর্বস্তরের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবে।’
উপজেলা যুবলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহবায়ক আবু কাওসার কালের আলোকে বলেন, ‘এ চক্রটিই পর পর দুইবার আমাদের ওপরও হামলা করে হত্যার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। এরা নতুন ছক কষে অগ্রসর হচ্ছে। তবে ওরা যেসব খুনিদের কোটি টাকার কন্ট্রাক্ট দিয়েছিল তারাই নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ্বে সব তথ্য ফাঁস করে দিয়েছে।’
স্থানীয় পৌর যুবলীগের আহবায়ক মাহমুদ হাসান সজীব কালের আলোকে বলেন, ‘এমপি হবার খায়েসে রাজাকারের সন্তান বুলবুল ও জনরোষের শিকার হয়ে গফরগাঁও ছাড়া হওয়া ‘পিস্তল এমপি’ গিয়াস এ হত্যা ষড়যন্ত্রের মূল নায়ক। তাদের শেল্টার দিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের পদধারী এক নেতা। কিন্তু স্থানীয় জনসাধারণ জীবন দিয়ে হলেও ওদের প্রতিহত করবে। ওদের সব ষড়যন্ত্র নসাৎ করে দেবে।’
এ বিষয়ে গফরগাঁও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন বাদল কালের আলোকে বলেন, ‘স্থানীয় সংসদ সদস্যের জনপ্রিয়তার সঙ্গে যারা পেরে উঠছেন না তারা কত রকম ষড়যন্ত্রই করছেন। কিন্তু গফরগাঁও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাঁর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। কোন ষড়যন্ত্রই হালে পানি পাবে না।’
গফরগাঁও পৌরসভার মেয়র ইকবাল হোসেন সুমন বলেন, ‘গফরগাঁও আওয়ামী লীগের দুর্ভেদ্য ঘাাঁটি। এ ঘাঁটিতে কোন রাজাকারের সন্তান বা তার দোসররা থাকতে পারবে না। জনপ্রিয় এমপি বাবেল গোলন্দাজকে যারা হত্যার পরিকল্পনা করছেন তাদের জনগণই দাঁতভাঙা জবাব দেবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল কালের আলোকে বলেন, ‘টাকার ভাগাভাগি নিয়ে কিলারদের মধ্যে গন্ডগোলে আমাকেসহ আরো ৩ জনকে হত্যার পরিকল্পনার খবর ফাঁস হয়ে গেছে।
তিনটি টিম বেশ কয়েকবার গফরগাঁওয়ে রেকি করেছে বলেও আমাদের কাছে তথ্য আছে। তাদের স্থানীয়ভাবে সব রকমের সহযোগিতা করছে মোখলেছ ডাকাত। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক হত্যা মামলা রয়েছে। হত্যা পরিকল্পনার পুরো এ বিষয়টি আমি এসপি এবং স্থানীয় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) জানিয়েছি।’
এ ব্যাপারে গফরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আহাদ কালের আলোকে বলেন, ‘স্থানীয় সংসদ সদস্যকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছে এমন তথ্য পাওয়ার পর আমরা কাজ শুরু করেছি। কারা এর সঙ্গে জড়িত, মাস্টার মাইন্ড কে এসব বিষয় সম্পর্কেও খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে।’
কালের আলো/এএ/ওএইচ
** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে কালের আলো’র ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: KalerAlo/Facebook