বৃত্তের মাধ্যমে দূরত্ব চিহ্নিত; সেনাবাহিনীর কর্মযজ্ঞে দেশজুড়ে স্বস্তির সুবাতাস (ভিডিও)

প্রকাশিতঃ 2:57 pm | March 27, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

জরুরি সেবা সার্ভিসের গাড়ি ছাড়া সড়কে নেই কোন গণপরিবহন। স্বভাবতই সড়কগুলো ফাঁকা, জনমানবশুন্য। নেই চিরচেনা যানজট বা কর্মচাঞ্চল্য। কী রাজধানী বা দেশের মফস্বল এলাকার কোন শহর, অদ্ভুত নীরবতাই চারদিকে।

আরও পড়ুন: পথে পথে সেনাবাহিনীর জীবাণু নাশক স্প্রে কার্যক্রম (ভিডিও)

সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রাণঘাতী করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জিততে নিজেদের ঘরে আটকে রাখতেই হচ্ছে মানুষজনকে।

আর হবেই বা না কেন? প্রতি মুহুর্তে জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে টহল দিচ্ছেন সেনাবাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। প্ল্যাকার্ড ও মাইক হাতে সেনা সদস্যরা বিরামহীন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। একজনের সঙ্গে আরেকজনের নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে জানাচ্ছেন আহ্বান।

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত; করোনাভাইরাস মোকাবেলায় মাঠে সেনাবাহিনী

অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হলেই কড়াকড়ির মুখে পড়তে হচ্ছে। কখনও বুঝিয়ে ঘরে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তবে তেড়েমেড়ে নিয়ম মানতে বাধ্য করানোর মতো কোন দৃশ্য দেশের ৬১ জেলায় সেনাবাহিনীর তৎপরতায় দেখা যায়নি।

নিত্যপণ্য আর ওষুধের দোকান ছাড়া সব দোকান বন্ধ রয়েছে। ফলে বাজার আর নিত্যপণ্যের দোকানগুলোতেই কেবল মানুষের খানিকটা আনাগোনা রয়েছে।

ফলে কাঁচাবাজার ও ওষুধের দোকানগুলোতে মানুষের উপস্থিতির বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই এসব দোকানে কেনাবেচার ক্ষেত্রে কীভাবে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে সেই পদ্ধতিও বাতলে দিচ্ছেন সেনা সদস্যরা।

আরও পড়ুন: করোনা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর কর্মপরিকল্পনা, ডিসিরা রিকুইজিশন দিলে হবে ‘ক্যাম্প’ স্থাপন

আর এ ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লা জেলা শহরে। বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) এই জেলার প্রধান প্রধান সড়কে মাইকিং’র পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন কাঁচাবাজার ও ওষুধের দোকানের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে সেনাবাহিনী।

এ সময় সেনা সদস্যরা রঙ তুলির আচড়ে প্রতিটি দোকানের সামনের সড়ক বা ফুটপাতে সাদা বৃত্ত আঁকেন।

ক্রেতার সঙ্গে বিক্রেতার এবং ক্রেতা টু ক্রেতার দূরত্ব নিরূপণ করে আঁকা এক একটি বৃত্তের মাধ্যমে দূরত্ব চিহ্নিত করে দেওয়া হয়। এমন কর্মযজ্ঞের নেতৃত্ব দেন সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহাবুব আলম ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শুভাশীষ ঘোষ।

মূলত এর মাধ্যমে একজনের সঙ্গে আরেকজনের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার পদ্ধতি শেখানো হয় সবাইকে।

আরও পড়ুন: পথে পথে সেনাবাহিনীর জীবাণু নাশক স্প্রে কার্যক্রম (ভিডিও)

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেনাবাহিনীর ওই টহল দলটি কুমিল্লা শহরের রাজগঞ্জ, চকবাজার, নিউ মার্কেট, কাঁসারিপট্টি চৌমুহনী, তেলিকোনা, ছাতিপট্টি, কান্দিরপাড় এলাকায় জরুরি প্রয়োজনে খোলা দোকানপাট, কাঁচাবাজার, ওষুধের দোকানের সামনে এমন রঙ দিয়ে বৃত্ত এঁকে দেন।

পরবর্তী সময়ে এই নিয়ম অনুসরণ করা না হলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সতর্ক সংকেতও দেওয়া হয় ক্রেতা-বিক্রেতাদের।

করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে রীতিমতো থমকে দাঁড়িয়েছে ষোল কোটির বাংলাদেশ। এই লড়াইয়ে সরকারের নির্দেশে দেশের সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে তারা জেলায় জেলায় হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।

প্রায় প্রতিটি জেলায় সাধারণ মানুষকে ঘরে থাকা হ্যান্ড মাইকে আহ্বান জানাচ্ছেন সেনা সদস্যরা। কোথাও হাম কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন ফলমূল। দেশজুড়ে সেনাবাহিনীর এমন কর্মযজ্ঞে স্বস্তির সুবাতাস বইয়ে চলেছে। সেনা সদস্যদের নানামুখী ইতিবাচক পদক্ষেপে দেশের সাধারণ মানুষের কন্ঠেও বিশ্বাসের প্রতিধ্বনি।

সবাই একবাক্যে বলছেন, কেবল বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বেই করোনাভাইরাস এখন মহাআতঙ্কের আরেক নাম। ফলে বিচ্ছিন্নতার চর্চাই যে একমাত্র সমাধানের পথ।

নিয়মতান্ত্রিক ওপায়ে নিজেদের এই দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করে সেনা সদস্যরা সাধারণ মানুষের ভেতর বহমান আতঙ্ক, ভয়-ভীতি একেবারেই উবে দিয়েছেন। নিজেদের ঘরবন্দি রেখে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতির সত্যিকার অর্থেই এ যেন অন্য রকম এক লড়াই।

আমাদের বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত  

রাঙ্গামাটিতে বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) সকাল থেকে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার তদারকি করছেন। এছাড়া সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।

হাট-বাজার থেকে শুরু সব জায়গায় যাতে একের অধিক মানুষ এক সঙ্গে যেন থাকতে না পারে সে বিষয়ে কাজ করছে প্রশাসন।

শরীয়তপুরে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন মাঠে। জেলার নড়িয়া উজেলায় ইতালী প্রবাসীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় সেখানে দেওয়া হচ্ছে বাড়তি গুরুত্ব। কুড়িগ্রামেও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে মাঠে কাজ করছে সেনাবাহিনী।

বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) সকাল থেকে শহরের পৌর বাজার, শহিদ মিনার চত্বর, জিয়া বাজার, পুরাতন পোস্ট অফিস পাড়াসহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় হ্যান্ড মাইকে জনগণকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয় তাদের পক্ষ থেকে।

শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে তিন-চার জনকে একসঙ্গে জড়ো হতে দেখলে তাদের সরিয়ে দিয়েছেন তারা। পুলিশ সদস্যরাও তাদের সঙ্গে ছিলেন।

ঝালকাঠিতে বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনীর টহল শুরু হয়। সকালে পটুয়াখালীর লেবুখালী শেখ হাসিনা সেনানিবাস থেকে দু’টি গাড়িতে করে ঝালকাঠিতে পৌঁছায় সেনাবাহিনীর একটি দল। জেলা শহরের বাজার রোড, লঞ্চঘাট, ব্যাকমোড়, কলেজ মোড়, সাধনের মোড়, চাঁদকাঠী মোড়সহ জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে টহল দেন সেনা সদস্যরা।

এছাড়া রাজশাহী, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, নওগাঁ, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কুষ্টিয়া, নড়াইল, মাগুরা, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জসহ অন্যান্য জেলাগুলোতেও একই রকম তৎপরতা চালিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

কালের আলো/এমএএএমকে