করোনার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে ফায়ার সার্ভিস, পরিচ্ছন্ন দেশ গড়তে চান অগ্নিসেনারা (ভিডিও)
প্রকাশিতঃ 6:56 pm | March 31, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। নামটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গেই চোখে ভেসে আসে অগ্নিসেনাদের কোন ভবন বা বহুতল ভবনে জীবনবাজি রেখে ফায়ার ফাইটিং’র দৃশ্য। দেশের যে কোন দুর্যোগ ও দুর্ঘটনায় জীবন ও সম্পদ রক্ষার মাধ্যমে নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তোলার মন্ত্রে উজ্জীবিত এই অধিদপ্তর জরুরি পরিস্থিতিতে নেমেছে অন্য রকম এক অভিযানে।
গোটা বিশ্বে ত্রাস সৃষ্টি করা নভেল করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অন্যান্য বাহিনীর মতো নিজেদেরও শামিল করেছেন তারা। দেশজুড়ে তারা শুরু করেছেন জীবাণুর বিরুদ্ধে অ্যাকশন। আক্ষরিক অর্থেই এ অ্যাকশন চলছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রুখে দিতে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিজেরা জীবাণুনাশক ছিটিয়ে কখনও নিরাপদ করছেন সড়ক বা রেলওয়ে স্টেশন। বিরামহীন গতিতে দেশব্যাপী চলমান এ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে সরকারি বিভিন্ন দফতর, বিভিন্ন বাগান, ফুটপাত, নর্দমা ও জরুরি ভিত্তিতে চলাচল করা যানবাহনে অগ্নিনির্বাপনে ব্যবহৃত গাড়ি দিয়ে স্যানিটাইজার বা জীবাণুনাশক ওষুধ ছিটিয়ে যাচ্ছেন।
অতীতে সাধারণত অগ্নিকান্ড মোকাবেলাতেই ফায়ার সার্ভিসের ভূমিকা মুখ্য হয়ে উঠলেও এমন ব্যতিক্রমী কর্মপ্রবাহের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন কালের আলোকে বলেন, ‘দেশের সংকটময় এই মুহুর্তে পরিচ্ছন্ন দেশ গড়ার কার্যক্রমে অংশীদার হয়েছে ফায়ার সার্ভিস।’

তিনি বলেন, ‘সরকার ঘোষিত ছুটির দিনগুলোতে রাজধানীর সচিবালয়, সংসদ ভবন, গণভবনসহ বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি পুরো দেশজুড়েই পরিচ্ছন্নতা অভিযানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র সংযুক্ত গাড়ি, ওয়াটার ক্যান দিয়ে স্যানিটাইজার বা জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে।
অধিদপ্তরটির সব ফায়ার স্টেশনকেই দিনে কমপক্ষে দু’বার করে স্যানিটাইজার ছিটানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলমান থাকবে’ যোগ করেন উন্নত বিশ্বের আদলে সাজানো এ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো.হাবিবুর রহমান কালের আলোকে জানান, দেশবাসীর সুরক্ষায় সারা দেশে একযোগে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কর্মীরা। ইতোমধ্যেই অপরিহার্য প্রয়োজন ছাড়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

তিনি জানান, কোনো সদস্য অপারেশনাল কাজ অথবা জরুরি দাফতরিক প্রয়োজন ব্যতীত দফতর বা স্টেশনের বাইরে যেতে পারবেন না। প্রয়োজনে গেলেও নির্ধারিত রেজিস্টারে নাম ও বাইরে যাওয়ার কারণ লিপিবদ্ধ করতে হবে। নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বহিরাগত প্রবেশাধিকার।
অগ্নিকাণ্ড ছাড়াও দেশে যেকোনো দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে ‘ত্রাণকর্তার’ ভূমিকা পালন করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। দেশে নগরায়ন ও শিল্পায়ন বৃদ্ধি পাওয়া অগ্নিঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রতিটি অগ্নিকান্ডেই সর্বোচ্চ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিসেনারা।
দুর্যোগ মোকাবেলায় সারা বিশ্বে প্রশংসিত বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরকে দেশের সার্বিক উন্নয়নে আরও আধুনিকায়ন করতে চায় সরকার। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিতে গড়ে তোলা হচ্ছে অধিদপ্তরটিকে।

অগ্নিকান্ডে বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের সাধারণ মানুষের ভরসার সেবাধর্মী এই প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের এই কঠিন সময়ে হাতগুটিয়ে বসে নেই। সরকারের নির্দেশে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে তারা সর্বাত্নক সহযোগিতা দিচ্ছেন।
দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার এই মুহুর্তে রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই পরিচ্ছন্নতা অভিযানে বিশেষ তৎপরতা চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বুধবার (২৫ মার্চ) করোনাভাইরাস প্রতিরোধে পরিচ্ছন্নতা অভিযান উদ্বোধন করেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন। এরপর বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) অধিদফতরের বিভিন্ন ইউনিটের পরিচালক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে রাজধানীবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি দেশের প্রতিটি জেলাতেই একযোগে পরিচ্ছন্নতা অভিযানের সূত্রপাত হয়।

চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও চাঁদপুরের তিনজন ফায়ার সার্ভিস কর্মী কালের আলোকে বলেন, ‘সরকারি ছুটির সময়েও আমাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এ নিয়ে কোন আক্ষেপ নেই আমাদের। সব সময় আমরা দেশের জন্য পরিবারের মায়া ত্যাগ করেই কাজ করি।
আমরা গর্বিত আবারও পরিচ্ছন্ন দেশগড়ার লড়াইয়ে অংশ নিতে পেরেছি। এর মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হয়েছে যে কোন দুর্যোগে সবার আগে সবার পাশে ফায়ার সার্ভিসই থাকে।’
আমাদের বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত :
চট্টগ্রাম নগরীর সব সড়কে জীবাণুনাশক ছিটানোর কার্যক্রম চালিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। নগরীর সিনেমা প্যালেস থেকে এ পানি ছিটানোর কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। পর্যায়ক্রমে পুরো শহরে ব্লিচিং পাউডারের পানি ছিটানোর কাজ চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নন্দনকানন ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আব্দুল মান্নান।

শহরকে নিরাপদ ও জীবাণুমুক্ত রাখতে করোনা ঝুঁকি মোকাবেলায় মৌলভীবাজার শহরজুড়ে জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটিয়ে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) থেকে শহরের পৌরসভার সামনে থেকে মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে এ অভিযান চালায় ফায়ার সার্ভিস ইউনিটের কর্মীরা।
মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমান জানান, সারা দেশে পৌরসভার সাথে ফায়ার সার্ভিসের সমন্বয়ের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমরা তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেন, শহরের সবগুলো সড়কে পর্যায়ক্রমে ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে প্রতিদিন এই কার্যক্রম চলছে।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে সুনামগঞ্জ শহরে ৩ হাজার ৫’শ লিটার ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত পানি শহরের বিভিন্ন সড়কের যানবাহনে ছিটানো হচ্ছে। এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত। এতে ফায়ার সার্ভিসের দু’টি ইউনিট শহরজুড়ে ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত পানি ছিটানো কাজ পরিচালনা করছে।

রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জীবাণু নাশক স্প্রে ছিটিয়েছে রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিস। শহরের বনরুপা থেকে এ কার্যাক্রম শুরু হয়েছে। স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক রতন কুমার নাথ জানান, আমরা পর্যায়ক্রমে পুরো শহরে এই কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস ও পৌরসভার যৌথ উদ্যোগে পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার সফিকুল ইসলাম জানান, এই দুর্যোগকালীন সময়ে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গেই কাজ করে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে চাঁদপুরে বিভিন্ন সড়কে জীবাণুনাশক ঔষধ স্প্রে করা হয়েছে। স্থানীয় পৌরসভার উদ্যোগে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা গাড়িযোগে এ ঔষধ স্প্রে করেন।

চাঁদপুর উত্তর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে চাঁদপুর পৌরসভায় সহায়তায় আমরা বিভিন্ন সড়ক ও এলাকায় জীবাণুনাশক ঔষধ স্প্রে কার্যক্রম শুরু করেছি।’
গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন করোনা প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় গোপালগঞ্জ বড়বাজার, পাচুড়িয়া মধুমতি মার্কেট শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও এর আশপাশের ভবন, গাছপালা এবং হাসপাতাল এলাকা জীবাণুনাশক ওষুধ স্প্রে করেছে।
ফরিদপুরের পৌরসভার বিভিন্ন সড়ক, বাজার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা জীবাণুমুক্ত করতে কাজ শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস। মোংলা পোর্ট পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস এমনটি জানিয়েছেন
স্থানীয় পৌর মেয়র মো. জুলফিকার আলী।

বাগেরহাট পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জীবাণুনাশক পানি ছিটানো হচ্ছে। শনিবার (২৮ মার্চ) সকালে বাগেরহাট শহররক্ষা বাঁধ সড়ক এলাকায় জীবাণুনাশক পানি ছিটিয়ে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বাগেরহাট অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) মো. কামরুল ইসলাম। এ সময় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের বাগেরহাট উপ-পরিচালক গোলাম ছরোয়ারসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
সিলেটে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের পর জনসাধারণকে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিতে এবার মাঠে নেমেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কর্মীরা। সংশ্লিষ্ট নগরীর চৌহাট্টা, আম্বরখানা, জিন্দাবাজার, বন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে তাদের নিজস্ব যানবাহন দিয়ে জীবাণুনাশক স্প্রে করেছেন।
সিলেট ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ইফতেখার হোসেন জানান, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিরাপত্তা পোশাক গায়ে দিয়ে পানির গাড়ি দিয়ে জীবাণুনাশক ওষুধ স্প্রে করেন। নগরীর প্রতিটি স্থানে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।’
কালের আলো/এমএএএমকে