টাকায় মিলছে তারেকের সবুজ সংকেত: মোস্তফাই পটুয়াখালী-৩ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী!
প্রকাশিতঃ 1:07 pm | June 18, 2018
বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার কথা প্রচার করলেও ভেতরে ভেতরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সংসদের বাইরে থাকা অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। দুর্নীতির রায়ে দন্ডিত হয়ে দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলেও সম্ভাব্য আসনসমূহে দলটি প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
লন্ডনে পলাতক দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ধানের শীষের মনোনয়ন দেওয়ার অঙ্গীকার করছেন বলেও খবর বেরিয়েছে। এক্ষেত্রে তারেক পুরোদমে কাজে লাগাচ্ছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে।
সম্প্রতি লন্ডন সফরকালে টাকা দেয়া প্রার্থীদের একটি তালিকা তারেকের কাছে তিনি হস্তান্তর করেছেন বলেও জোর গুঞ্জণ চলছে। আর এ বিষয়টি মূলত ফাঁস হয়েছে পটুয়াখালী-৩ (দশমিনা-গলাচিপা) আসনে জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফা’র নির্বাচনী প্রস্তুতির মধ্যে দিয়ে।
লন্ডন সফরের আগে দলীয় মহাসচিবের মাধ্যমে অর্থনৈতিক দৈন্যদশায় থাকা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে নিজের মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন বলে অনুসারী-অনুগামীদের ম্যাসেজ দিয়েছেন। আর এ বিষয়টি এখন দলীয় নেতা-কর্মীদের মুখে মুখেও ছড়িয়ে পড়েছে। দলটির জ্যেষ্ঠ একজন নেতাও কালের আলো এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমনটিই নিশ্চিত হয়ে গেছে গত সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি। ফলে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের আন্দোলন থেকে সরে এসেছে দলটি।
দলটির নীতি নির্ধারকরা মনে করেন, ক্ষমতায় যেতে না পারলেও অন্তত বিরোধী দলের সম্মান নিয়ে রাজনীতিতে নিজেদের নুন্যতম অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব। এতে করে অন্তত সরকারের অ্যাকশন থেকে গাঁ বাঁচানো সম্ভব হবে।
সূত্র মতে, দলটির হাইকমান্ডের এমন সিদ্ধান্তের পর পরই আসন্ন সংসদ নির্বাচনে গোপনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের কাজে হাত দেয় বিএনপি। একই সঙ্গে নির্বাচনী ফান্ড সংগ্রহের কাজেও মনোনিবেশ করেন তারা। তবে টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন দেওয়ার মতো বুমেরাং থিউরি নিয়ে দলের অন্দরে-বাইরে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
সম্প্রতি লন্ডন সফরকালে মনোনয়নের প্রতিশ্রুতি বাবদ দলটির নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অর্থ তারেক রহমানের কাছে হস্তান্তর করেছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সূত্র মতে, লন্ডনে তারেকের সঙ্গে দেখা করার আগে মির্জা ফখরুল দেশের বিভিন্ন আসনে দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে একাধিকবার গোপন বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে বিএনপি’র মনোনয়ন পাওয়ার জন্য একটি রেইট নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এসব বৈঠকে তারেকের হাতের অবস্থা ভালো নয় বলেও বার বার তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেন ফখরুল।
সূত্র জানায়, মনোনয়ন দেওয়ার শর্তে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছ থেকে সংগ্রহকৃত মোটা দাগের অর্থ দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেকের কাছে হস্তান্তর করেন ফখরুল। এর ফলে তারেকের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের দূরত্বেরও অবসান হয়েছে। তারেকের নির্দেশনা সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাঁর আস্থা ও বিশ্বাস বেশ ভালোভাবেই অর্জন করেছেন মহাসচিব।
একাধিক সূত্র কালের আলোকে জানিয়েছে, ঢাকায় মির্জা ফখরুলের সঙ্গে মনোনয়ন ইস্যুতে বৈঠক করা প্রত্যাশীদের একজন হচ্ছেন পটুয়াখালী জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফা। তিনি দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলা নিয়ে গঠিত পটুয়াখালী-৩ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন চাইছেন।
মোটা অংকের টাকা লেনদেনের পর মির্জা ফখরুল তাকে ধানের শীষের মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন। তবে মনোনয়ন ফসকে গেলে ক্ষমা করে দেওয়ার বিশেষ অনুরোধও করেছেন।
দলীয় একাধিক সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন লন্ডনে পলাতক থাকায় তারেক অর্থনৈতিক দৈন্যতার মুখে পড়েছেন। এ অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে তুলতে তিনি নির্বাচনী ফান্ড সংগ্রহের নামে দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুলের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে নিজেকে চাঙ্গা করার নতুন মিশন নিয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠেছেন।
সূত্র জানায়, মির্জা ফখরুল মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাফ জানিয়েছেন, দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের হাতের অবস্থা খারাপ থাকায় এই সময় তাঁর পাশে যে দাঁড়াবেন সেই পরবর্তীতে মূল্যায়িত হবেন। দলীয় টিকিট নামের সোনার হরিণ জেতার পাশাপাশি ক্ষমতায় গেলে মন্ত্রীত্বও পাবেন।
জানা গেছে, মির্জা ফখরুলের মাধ্যমে তারেকের সবুজ সংকেত পেয়ে নির্বাচনী এলাকায় বিরামহীন জনসংযোগ করে বেড়াচ্ছেন বিএনপি নেতা গোলাম মোস্তফা। রমজানে নিয়মিত ইফতার মাহফিল ও ঈদে জনসংযোগ করেছেন। তবে দল নিয়ে তার এমন দাপাদাপিতে অসন্তুষ্ট দলটির ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মীরা।
নাম প্রকাশে তীব্র আপত্তি জানিয়ে দলটির একাধিক নেতা বলছেন, পটুয়াখালী-৩ আসনে গোলাম মোস্তফার চেয়েও গ্রহণযোগ্য একাধিক প্রার্থী বিএনপিতে রয়েছেন।
কিন্তু টাকার বিনিময়ে দল যদি তাকে মনোনয়ন দেয় তবে ভরাডুবি নিশ্চিত। দলের বেশিরভাগ নেতা-কর্মীই এমন হঠকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিদ্রোহ করতে পারেন। ফলে আসনটিতে নৌকার প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল।
ক্ষোভ নিয়ে দলটির একাধিক নেতা-কর্মী বলছেন, দলের দু:সময়ে গোলাম মোস্তফার মতো নেতা-কর্মীদের মাঠে পাওয়া যায় না। কর্মীদের আপদে-বিপদেও পাশে দাঁড়াতে দেখা যায় না। কিন্তু এরাই দলীয় মনোনয়ন পেলে হাইকমান্ডের ওপর আস্থা হারাবে ত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা।
এই বক্তব্যের সঙ্গে যোগ করে দলটির আরেক নেতা বলেন, বিএনপিতে সবই সম্ভব। হয়তো টাকার বিনিময়ে গোলাম মোস্তফার মতো আনাড়ি নেতাদেরও পেছনের দরজা দিয়ে মনোনয়ন সম্ভব।
কালের আলো/এএ