ঈদযাত্রায় ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনা: নিহত ৪০৫, আহত ১২৭৪

প্রকাশিতঃ 12:39 pm | June 29, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:

ঈদুল ফিতরে দেশের ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ৩৩৯ জন এবং ১ হাজার ২৬৫ জন আহত হয়েছে। এছাড়া সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সম্মিলিতভাবে ৩৩৫টি দুর্ঘটনায় ৪০৫ জন নিহত এবং ১ হাজার ২৭৪ জন আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এসব তথ্য জানিয়েছে।

শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০১৮তে এসব তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর ঈদ কেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদ যাত্রায় সড়ক, রেল ও নৌ পথে দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানীর বিষয়টি গত চার বছর যাবত পর্যবেক্ষণ করে আসছে।

এবার ঈদের আগে যাত্রাপথে সকল তদারকি সংস্থার সক্রিয় অবস্থানের কারণে ঈদযাত্রা খানিকটা স্বস্তিদায়ক হলেও ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরার পথে তদারকি না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনা, প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে বলে জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ২৩ জুন দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় সারাদেশে ১৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫২ জন নিহত এবং ১৫০ জন আহতের খবর সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হলে তা পরদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ঈদ যাত্রা শুরুর দিন ১১ জুন থেকে ঈদ শেষে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফেরা ২৩ জুন পর্যন্ত বিগত ১৩ দিনে ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৯ জন নিহত এবং ১২৬৫ জন আহত হয়েছেন। একই সময়ে নৌ-পথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত, ৫৫ জন নিখোঁজ ও ৯ জন আহত হয়েছেন। রেল পথে ট্রেনে কাটা পড়ে ৩৫ জন, ট্রেনের ধাক্কায় ৪ জন ও ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ২ জনসহ মোট ৪১ জন নিহত হয়েছেন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে বলে জানানো হয়।

এসব দুর্ঘটনার যানবাহন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৮.৮৯ শতাংশ বাস, ১৬.৩৯ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ১২.২২ শতাংশ নছিমন-করিমন, ১৩.০৬ শতাংশ ব্যাটারি চালিদ রিকশা ও ইজিবাইক, ৬.৬৭ শতাংশ অটোরিকশা, ৮.৩৩ শতাংশ কার-মাইক্রো ও ১৫.২৮ শতাংশ মোটরসাইকেল, ৯.১৬ শতাংশ অনান্য যানবাহন দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।

মোট দুর্ঘটনার ৩৪.০২ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৩২.৭২ শতাংশ পথচারীকে গাড়ী চাপা দেয়ার ঘটনা, ১৩.২৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনা, ১.১০ শতাংশ চলন্ত গাড়ি থেকে পড়ে, ০.৭৩ শতাংশ চাকায় উড়না পেছিয়ে ও ১৮.২০ শতাংশ অনান্য অজ্ঞাত কারণে দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী বহন, বিরতিহীন বা বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালানো, অদক্ষ চালক ও হেলপার দ্বারা যানবাহন চালানো, মহাসড়কে অটোরিকশা, ব্যাটারি চালিত রিকশা, নসিমন-করিমন ও মোটরসাইকেল অবাধে চলাচল, মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকা, বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো, সড়ক-মহাসড়কে ফুটপাত না থাকা ও সড়ক-মহাসড়কে বেহাল দশা এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশ
সংগঠনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলকে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা। প্রশিক্ষিত চালক গড়ে তোলা জন্য জাতীয় পর্যায়ে সরকারিভাবে ‘চালক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ গড়ে তোলা। নিয়মিত রাস্তার রোড সেফটি অডিট করা। ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ করা। ওভারলোড নিয়ন্ত্রণে মানসম্মত পর্যাপ্ত গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা।

মহাসড়কে ধীরগতির যান ও দ্রুত গতির যানের জন্য আলাদা লেইনের ব্যবস্থা করা। মহাসড়কে নছিমন-করিমন, ব্যাটারি চালিত রিকশা, অটোরিকশা বন্ধে সরকারের গৃহিত সিদ্ধান্ত শত ভাগ বাস্তবায়ন। ভাঙাছোড়া রাস্তাঘাট মেরামত করা। ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চলাচল বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া। জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ফুটপাত, আন্ডারপাস, ওভারপাস তৈরি করে পথচারীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, বিআরটিএর সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বাহারানে সুলতান বাহার, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট জোতিৎময় বড়ুয়া, মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/ওএইচ