করোনা সঙ্কট : ৫’শ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে আনসার-ভিডিপি ব্যাংক

প্রকাশিতঃ 8:12 am | June 22, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

অদেখা মরণঘাতী ভাইরাস করোনার ভয়াল থাবায় পেশাভেদে বিভিন্ন হারে কমেছে আয়। প্রায় সব পেশার মানুষই ফাঁদে পড়েছেন করোনার। বড় রকমের আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে পড়েছেন বিশাল আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরাও।

আরও পড়ুন: বিহাইন্ড দ্যা সিন; বুক চিতিয়েই লড়ছে আনসার ও ভিডিপি

বিশাল এ বাহিনীর বেশিরভাগ সদস্যই নারী হওয়ায় দীর্ঘ সময় হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হয়েছে তাদের। ফলে আয় রোজগারহীন হয়ে অজানা আতঙ্কের মধ্যেই দিন কাটাতে হচ্ছে।

অবশ্য চরম অনিশ্চয়তার মাঝেই তাদের জন্য পরম আনন্দেরই এক সুসংবাদ এনে দিয়েছেন আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ।

করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় সুশৃঙ্খল এ বাহিনীর অতফসিল আনসার-ভিডিপির উন্নয়ন ব্যাংকটিকে আবেদনের ফলশ্রুতিতে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগ কৃষি ও ক্ষুদ্র ঋণ খাতে আনসার-ভিডিপি ব্যাংককে এ ঋণ মঞ্জুর করে।

৬১ লাখ সদস্যের সুসংগঠিত এ বাহিনীটির সঙ্গে সম্পৃক্ত পরিবারের সদস্যরাও ঋণ সুবিধার আওতায় পড়বেন। প্রতি পরিবারে চারজনের হিসেবে এ সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ।

মূলত করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই বিশাল এ জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন আনসার ও ভিডিপি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ।

কয়েক দফা আবেদন-নিবেদনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তিনি এ ঋণের বন্দোবস্ত করেছেন। এ ঋণের মাধ্যমে বাহিনীটির সঙ্গে সম্পৃক্ত সদস্যরা নতুন উদ্যম ও প্রাণশক্তিতে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন বুনেছেন।

শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে তৃণমূলের এ বাহিনীর সদস্যদের ভবিষ্যতে সঙ্কট ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা থেকেও মুক্তি মিলবে। সম্ভাব্য অর্থনীতির ভয়াবহ সঙ্কটের চ্যালেঞ্জও তারা মোকাবেলা করতে সক্ষম হবেন বলেই মনে করছেন অনেকেই।

আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগের দেওয়া ঋণ মঞ্জুরীর চিঠিতে বলা হয়েছে, মঞ্জুরীকৃত ঋণের মধ্যে কৃষি খাতে ৩’শ ও ক্ষুদ্র ঋণ খাতে ২’শ কোটি টাকা রয়েছে। তিন বছর মেয়াদী এ ঋণের সুদ হার ২ শতাংশ।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের ৩৯ তম সমাবেশে ব্যাংক পরিচালিত  স্টলে ডিভিডেন্ড চেক গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুদসহ আসল পরিশোধে ব্যর্থ হলে অতিরিক্ত ৫% হারে অনাদায়ী ঋণের ওপর সুদ আরোপ করা হবে। অবশ্য আনসার ও ভিডিপি ব্যাংক গ্রাহক পর্যায়ে কৃষি খাতে ৫% ও ক্ষুদ্র ঋণ খাতে সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ৮%।

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও বিত্তহীন সদস্যরা এ ঋণের মাধ্যমে আয় উৎসারী কর্মকান্ড চলমান রাখার মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন ও অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করবেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানা যায়, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করা ও তাঁদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালের ১০ জানুয়ারি বিশেষায়িত আনসার ও ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়।

আনসার-ভিডিপি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকিং সেবা প্রদানের মাধ্যমে এ ব্যাংক আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

ব্যাংকের অনুমোদিত প্রারম্ভিক মূলধন ১’শ কোটি টাকা থেকে ধাপে ধাপে বেড়ে এক হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

একই সূত্র জানায়, ব্যাংকের ইস্যুকৃত মূলধন ৪’শ কোটি টাকা। এর ২৫% অর্থাৎ ১০০ কোটি টাকা সরকারের এবং বাদ বাকী ৭৫% অর্থাৎ ৩০০ কোটি টাকা আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর।

দেশজুড়ে ব্যাংকটির ২৫৯ টি শাখা রয়েছে। বাহিনীটির সদস্যরা নূন্যতম ১০০ টাকা মূল্যের একটি শেয়ার কেনার মাধ্যমে ব্যাংকটির সদস্য হয়ে ঋণ গ্রহণের যোগ্য হন।

আনসার ও ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসাদ্দেক উল আলম কালের আলোকে বলেন, ‘করোনায় আনসার ও ভিডিপির সদস্যদের কৃষি ও দুগ্ধ উৎপাদন, একটি বাড়ি একটি খামার সমন্বিত কৃষি ঋণ, এসএমইসহ কৃষি ও পল্লী ঋণের আয় উৎসারী কর্মকান্ড ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুনির্দিষ্ট এসব কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য ঋণ সুবিধা অপরিহার্য হয়ে পড়ে।’

তিনি বলেন, ‘প্রান্তিক বিশাল জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করা বাহিনীটির সদস্যদের অর্থনৈতিক সঙ্কটের বিষয়টি মাথায় রেখেই ব্যাংকটির মাননীয় চেয়ারম্যান ও বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ’র বিচক্ষণ ও যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে ৫’শ কোটি টাকা ঋণের আবেদন জানানো হয়। ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ আবেদন মঞ্জুরও করেছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মো.হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ধান, গম, শাক সবজি, ডাল ও মসলাজাতীয়সহ প্রভৃতি শস্য ও ফসল উৎপাদনে কৃষি খাতে ঋণ সুবিধা নিতে পারবেন আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা।

এছাড়া ফুল, ফল, মাছ চাষ, পোল্ট্রি খামার, আমার বাড়ি আমার খামার অথবা একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজতকরণ ও বিপণনের জন্যও ঋণ নিতে পারবেন সদস্যরা।

সৌর বিদ্যুৎ স্থাপন, বায়োগ্যাস প্ল্যান্টসহ উৎপাদনশীল, কর্মসৃজনমূলক ও পরিবেশবান্ধব খাতেও ক্ষুদ্র ঋণ সুবিধা গ্রহণ করা যাবে, জানিয়েছে একই সূত্র।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণের শর্তে বলা হয়েছে, একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকা ঋণ নিতে পারবেন। গ্রুপভিত্তিক ঋণেরর পরিমাণ হবে সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা।

তবে একই গ্রাহক বা গ্রুপ একাধিক প্রকল্পে ঋণ প্রাপ্তির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণকৃত ঋণ আদায়ের সকল দায়িত্ব আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের।

কালের আলো/এসআর/আরআই