মুজিববর্ষে পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগী সেনাবাহিনী, রোপণের টার্গেট তিন লক্ষাধিক বৃক্ষ (ভিডিও)
প্রকাশিতঃ 5:24 pm | June 30, 2020
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
ইতিহাসের মহাকাব্যের মহামানব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই…’ বিখ্যাত এ গানের আকুতির মতোই বঙ্গবন্ধু মারা না গেলে এ বছর শতবর্ষী হতেন।
আদর্শ ও অনুপ্রেরণায় বাঙালির মননে গেঁথে আছে পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তির মহান পথপ্রদর্শক ও অবিসংবাদিত এ নেতার নাম।
জাতির চির আরাধ্য পুরুষের জন্মশতবর্ষে দেশের বনজ সম্পদ বৃদ্ধি ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় উদ্যোগী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
দেশবাসীকে গাছ লাগানোর প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দেওয়ার পাশাপাশি মুজিববর্ষে পরিবেশ রক্ষায় সারা দেশে তিন লক্ষাধিক বৃক্ষ রোপণের টার্গেট নিয়েছে দেশপ্রেমিক এ বাহিনীটি।
মঙ্গলবার (৩০ জুন) ঢাকা সেনানিবাসের ‘আল্লাহু মসজিদ’ প্রাঙ্গণে একটি কাঠগোলাপ গাছের চারা রোপণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্মারক বিশেষ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
পরে নিজেই পরিচর্যার অংশ হিসেবে নতুন বৃক্ষে মাটি ও পানি দেন।
চলতি বছর বৃক্ষরোপণ অভিযানের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘সবুজ বৃক্ষ-নির্মল পরিবেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। পাশাপাশি একই সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সকল সেনানিবাসে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিরও তিনি উদ্বোধন করেন।
শুধু গাছ লাগানোতেই সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না, পরিপূর্ণভাবে গাছের যত্নও নিতে হবে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের এমন নির্দেশনাও দিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
তিনি মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সহজ মাধ্যম হচ্ছে বৃক্ষরোপণ। এ বৃক্ষরোপণ অভিযানে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, সেনাবাহিনী বৃক্ষরোপণ অভিযানে ফলজ, বনজ ও ঔষধি প্রজাতির বৃক্ষসহ সৌন্দর্য্যবর্ধক বিভিন্ন প্রকারের প্রায় তিন লক্ষাধিক গাছের চারা রোপন করবে।
সকল সেনানিবাস, স্বর্ণদ্বীপসহ সকল প্রশিক্ষণ এলাকা ও ফায়ারিং রেঞ্জ, সকল ডিওএইচএস এবং জলসিঁড়ি আবাসন প্রকল্পে মাসব্যাপী এ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।
সূত্র জানায়, দেশের সংগ্রামশীল জাতিসত্ত্বার দু:সময়ের সাথী হয়ে ত্যাগ ও বিশ্বস্ততার দৃষ্টান্ত স্থাপনের পাশাপাশি যে কোন দুর্যোগ মোকাবেলা, দেশের আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান অব্যাহত রেখেছে জেনারেল আজিজ আহমেদের নেতৃত্বাধীন গৌরবদীপ্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
চলমান করোনা দু:সময়ে নানামুখী কর্মকান্ডের মাধ্যমে তারা মানবিকতার অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। দেশের ক্রান্তিকালে তাদের অবদান ইতিহাসে অমর, অব্যয় হয়েই ঠাঁই নিয়েছে।
সূত্র মতে, জাতীয় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ২০১৯ সালের রোববার (১৪ জুলাই) ঢাকা সেনানিবাসের ‘বোট ক্লাব’ শহীদ মোস্তফা কামাল লাইন এলাকায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
ওই বছর তাঁর নির্দেশে দেশের প্রতিটি সেনানিবাসে প্রায় দু’লক্ষাধিক বৃক্ষ রোপণ করা হয়।
সেদিন সেনাপ্রধান নিজ হাতে ছাতিম গাছের চারা রোপণ করেন। এ সময় সবাইকে বনজ ও ফলজ গাছ লাগানোরও অনুরোধ করেন তিনি।
এর আগের বছর নির্ঝর আবাসিক এলাকায় সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ‘রাধাচূড়া’ গাছের চারা রোপণ করেছিলেন।
মুজিববর্ষে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘এবারের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির একটি বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে।
ইতিহাসের মহানায়ক, মহান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে পরিবেশের উন্নয়নে বৃক্ষরোপণকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি।’
বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে এ দেশকে অবারিত সবুজে পরিণত করার মাধ্যমে নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য দেশ গড়ে তোলা, পরিবেশের ভারসাম্য এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা থেকে রক্ষায় বৃক্ষরোপণ গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করেন সেনাপ্রধান।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস থেকে সবাইকে রক্ষা করতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কার্যকর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন জেনারেল আজিজ আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কবে যাবে, ভ্যাকসিন কবে আসবে এটা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না।
বেসামরিক প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সেনাবাহিনী সারা দেশে করোনাভাইরাস থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষিত করতে ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
এ ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হবে।’
এ সময় সেনাবাহিনীর কোয়ার্টারমাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. শামসুল হকসহ ঢাকা সেনানিবাসের উর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/এসআর/আরআই