শায়খ রহমান থেকে আব্দুল্লাহ; জঙ্গি দমনে অভূতপূর্ব সাফল্য র‌্যাবের

প্রকাশিতঃ 3:44 pm | July 01, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জঙ্গি দমনে সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। শুধু জঙ্গি দমনই নয়, দেশের অভ্যন্তরে যেকোনো অপরাধ ‘মূলোৎপাটনে’ অগ্রণী দায়িত্ব পালন করে চলেছে এলিট ফোর্স র‌্যাব।

আরও পড়ুনঃ জঙ্গিবাদ দমনে সফলতা ধরে রাখতে হবে: র‌্যাব ডিজি

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মোজাহেদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আব্দুর রহমানকে গ্রেফতারের মধ্যে দিয়ে ২০০৬ সালের ২ মার্চ সাফল্যমন্ডিত অ্যাকশন শুরু। এরপর ২০০৭ সালের ৩০ মার্চ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে এ শীর্ষ জঙ্গি গুরুর মৃত্যুদন্ড নিশ্চিত হয়।

এরপর জেএমবির হাল ধরেন নজরুল ইসলাম। তিনি পরিচিত ছিলেন ‘ডাক্তার নজরুল’ নামেই। কিন্তু তার হাতে নেতৃত্বের পর দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে জঙ্গি সংগঠনটি। কারাবন্দি মাওলানা সাঈদুর রহমানের গ্রুপকে জেএমবি ভেতরের গ্রুপ আর আবদুর রহমান ওরফে সারওয়ার জাহান মানিক ও ডা. নজরুল ইসলামের গ্রুপকে বাইরের গ্রুপ হিসেবে নিজেদের মধ্যকার বিভক্তি প্রকাশ্যে আসে।

আরও পড়ুনঃ করোনার মধ্যেও জঙ্গিরা ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে : ডিএমপি কমিশনার

কঠিন এ দ্বন্দ্বের জেরেই ঠান্ডা মাথায় খুন করে দৃশ্যপট থেকে ডা: নজরুলকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পালাক্রমে আবু ইউসুফ ও সারোয়ার জাহান মানিক জেএমবি’র আমিরের দায়িত্ব পালন করেন। মানিক ছিলেন শায়খ রহমানের পুরনো লোক। সারোয়ারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কানাডা থেকে ফিরে আসেন তামিম চৌধুরী।

এ সময় জঙ্গি সংগঠনটিতে রাইসুল ইসলাম খান ওরফে ফারদিন, মামুনুর রশিদ রিপন, নুরুল ইসলাম মারজান ও শফিক-শুরা সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তামিম-সারোয়ারের যৌথ নেতৃত্বে ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার মধ্য দিয়ে পুনরায় নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেয়।

পরবর্তীতে আশুলিয়ায় র‌্যাবের অভিযানে জেএমবির প্রধান সারোয়ার জাহান পালাতে গিয়ে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে মারা যায়। মৃতপ্রায় জঙ্গি সংগঠনটিকে গুছানোর চেষ্টা করেন কবুতর ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশ নেওয়া আব্দুল্লাহ। র‌্যাবের অভিযানে আব্দুল্লাহও মারা গেলে একেবারেই কোণঠাসা হয়ে পড়ে এ জঙ্গি সংগঠনটি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জঙ্গি দমনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে এলিট ফোর্স র‌্যাব। ২০০১ সালের পর নানা সময় অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত ২ হাজার ১৮৯ জন জঙ্গিকে আটক করেছেন ফোর্সটির সদস্যরা।

র‌্যাব সূত্র জানায়, র‌্যাবের এসব অভিযনে আটক হয় জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই, আব্দুর রহমানের ভাই আতাউর রহমান সানি, জামাতা আবদুল আউয়াল, ইফতেখার হোসেন মামুন ও খালেদ সাইফুল্লাহ ওরফে ফারুক।

আদালতের আদেশে ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ তাদের ফাঁসি কার্যকর হয়। এরপর ঘাপটি মেরে যায় নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন ও তাদের নেতারা। তবে ২০১৬ সালে হলি আর্টিজান হামলার মাধ্যমে পুনরায় জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব ফুটে ওঠে।

হলি আর্টিজান হামলা
২০১৬ সালের ১ জুলাই, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা সংগঠিত হয়। বিপথগামী জঙ্গিরা জিম্মির পর বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে। জঙ্গি দমনে অভিযান চালাতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তাও।

র‌্যাব সূত্র জানায়, জঙ্গি দমনে বিগত সময়ের অভিজ্ঞতায় হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় প্রাথমিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয় র‌্যাব। ঘটনার পরপরই হোটেল ও তার আশেপাশের এলাকায় অবস্থান নিতে শুরু করেন র‌্যাব সদস্যরা। এর মাধ্যমেই মূল অভিযান তৈরির ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়।

র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, অভিযানে র‌্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছেই জান-মালের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সকল বাহিনীর সমন্বয়ে মূল অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্র তৈরি করেন তৎকালীন র‌্যাব মহাপরিচালক ও বর্তমান আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার)।

শুধু তাই নয়, হলি আর্টিজান হামলার পর দেশজুড়ে জঙ্গিদের ধরতে সক্রিয় থাকে র‌্যাব। সূত্র জানায়, ওই ঘটনার পর বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে জঙ্গি সংগঠনের আমিরসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়।

এসব অভিযানে জেএমবির কেন্দ্রীয় দাওয়াতী শাখা প্রধান, সূরা ও শরিয়া বোর্ড সদস্য, মহিলা শাখার নেতৃবৃন্দ এবং বেশ কয়েক জন অতি গুরুত্বপূর্ণ আইটি বিশেষজ্ঞকে গ্রেফতারের মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনকে দুর্বল করে দেয় র‌্যাব।

এভাবে র‌্যাবের সময়োচিত পদক্ষেপ ও তীক্ষ্ণ গোয়েন্দা নজরদারি, অঙ্কুরেই নসাৎ করে দেয় জঙ্গি হামলা এবং হামলার সকল পরিকল্পনা।

র‌্যাব সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ০৮ অক্টোবর রাজধানীর আশুলিয়ায় র‌্যাবের একটি অভিযানে জেএমবির প্রধান সারোয়ার জাহান পালাতে গিয়ে ছাঁদ থেকে লাফিয়ে পড়ে মারা যায়। সে ছিল হলি আর্টিজান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী। এছাড়া ২০১৯ সালের ২০ জানুয়ারি গ্রেফতার হয় জেএমবির শুরা সদস্য মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন। এই জঙ্গি নেতা হলি আর্টিজান ঘটনার পরিকল্পনা, অর্থায়ন, অস্ত্র ও বিষ্ফোরক সরবরাহ করেছিল।

একই বছরের ২৬ জানুয়ারি চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে গ্রেফতার হয় হলি আর্টিজান মামলার চার্জশিটভুক্ত অপর আসামি জেএমবি শীর্ষ নেতা শরিফুল ইসলাম ওরফে খালিদ। জঙ্গি খালিদ হলি আর্টিজানে হামলায় অর্থ সরবরাহসহ প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ পরবর্তী হামলাকারীদের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। এছাড়া সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি।

র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, হালি আর্টিজান হামলার পর র‌্যাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ফলে র‌্যাবের তৎপরতায় এখন পর্যন্ত ১ হাজার ১৬ জঙ্গি সদস্য আটক হয় এবং বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয় ২৫ জঙ্গি।

র‌্যাবের জঙ্গিবিরোধী সফল অভিযান
জঙ্গিদমনে দেশজুড়ে নানা অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব। এসব অভিযানে জঙ্গি আস্তানা গুঁড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি জঙ্গিদের আটক করে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

শোলাকিয়া অভিযান
হলি আর্টিজানের পরপরই জঙ্গিদের টার্গেট ছিল কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদগাহ ময়দান। ২০১৬ সালের ০৭ জুলাই ঈদগাহ মাঠে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দেয় র‌্যাব। ঘটনাস্থল থেকে পলায়নরত এক জঙ্গিকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়।

আশুলিয়া, টাঙ্গাইল এবং হাড়িনাল অভিযান
২০১৬ সালের ০৮ অক্টোবর একই দিনে পৃথক তিন জায়গায় জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালায় র‌্যাব। এর মধ্যে আশুলিয়ার একটি বাড়িতে বিভক্ত জেএমবির একটি গ্রুপের প্রধান সারোয়ার জাহান ওরফে আব্দুর রহমান ওরফে শাইখ আসীম আজোয়াদ ওরফে শাইখ আবু ইব্রাহীম আল হানিফের খোঁজে অভিযান চালানো হয়।

র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ভবন থেকে পালাতে যেয়ে লাফিয়ে পড়ে সে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এসময় বাসায় তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয় জঙ্গি কর্মকান্ডের বিপুল পরিমাণ গোপন নথি, বিস্ফোরক এবং প্রায় ত্রিশ লাখ টাকা।

আর টাঙ্গাইলে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হয় জেএমবি এর গ্রুপের দুই সদস্য। উদ্ধার হয় অস্ত্রগুলিসহ নগদ টাকা।এছাড়া একই দিন গাজীপুরের হারিনালে র‌্যাবের অভিযানে নিহত হয় জেএমবির দুই সদস্য। সেখান থেকে উদ্ধার হয় রাইফেলসহ বিভিন্ন অস্ত্র। উদ্ধার হওয়া একই রকম রাইফেল গুলশানের জঙ্গি হামলায় ব্যবহার করে জঙ্গিরা।

দারুস সালামের কমল প্রভায় জঙ্গি অভিযান
বিভিন্ন জঙ্গি হামলা অন্যতম মদদদাতা, পরামর্শদাতা, আশ্রয়দাতা ও প্রথম সারির জঙ্গি নেতাদের গুরু হিসেবে খ্যাত জঙ্গি আব্দুল্লাহর আস্তানার সন্ধান পায় র‌্যাব। এরই আলোকে ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর মধ্য রাতে মিরপুর দারুস সালাম এলাকায় ওই জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। আত্মসমর্পণের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে শীর্ষ এই জঙ্গি কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেসহ ৭ জঙ্গি নিহত হয়। অভিযানে উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও দেশীয় অস্ত্র।

জানা যায়, সাধারণ মানুষের বেশে প্রায় ১০/১২ বছর কবুতর ও ফ্রিজ ব্যবসার অন্তরালে ‘কমলপ্রভা’ নামে ওই বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতো ওই জঙ্গি নেতা। এই আস্তানায় জেএমবি জঙ্গিদের আমির সারোয়ার, অন্যতম শীর্ষ নেতা তামীমসহ প্রায় ৩৫ জন জঙ্গি নেতাদের আসা যাওয়া ছিল। যাদের অধিকাংশ ইতোমধ্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়েছে।

দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে অভিযান
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে জঙ্গিদের কয়েকটি ঘাঁটি ছিল ঝিনাইদহে। ঝিনাইদহের পোড়াহাটি এলাকা হতে জেএমবি’র ২ সক্রিয় সদস্য গ্রেফতার করে র‌্যাব। একই সঙ্গে উদ্ধার হয় মাটির নিচে লুকানো সুইসাইডাল বেল্ট, নিওজেল ও বিস্ফোরক।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে অভিযান
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অব্যাহত জঙ্গিবিরোধী অভিযানের কারণে ২০১৭ সাল এর শেষের দিকে জঙ্গিরা শহর হতে দুর্গম চরাঞ্চলের আস্তানা তৈরির পরিকল্পনা করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোদাগাড়ীর চর আলাতুলিতে জঙ্গিদের এরকম একটি আস্তানায় র‌্যাবের অভিযানের সময় ৩ জঙ্গি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মহুতি দেয়। উদ্ধার করা হয় অস্ত্র, পাওয়ার জেল ও আইইডি।

সাভারে র‌্যাবের অভিযান
র‌্যাবের সশস্ত্র অভিযানে সাভারের নয়ার হাট জঙ্গি আস্তানা হতে ৪ জঙ্গি জীবিত অবস্থায় আটক হয়।

সিলেটের আতিয়া মহলে অভিযান
২০১৭ সালের ২৪ মার্চ সিলেটের আতিয়া মহলের অভিযান পরবর্তী বিস্ফোরক মুক্ত ও অন্যান্য উদ্ধার কার্যক্রম জীবনের মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে অত্যন্ত সাহসিকতা, পেশাদার মনোভাব ও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেছিল র‌্যাব।

নাখালপাড়ার রুবি ভিলায় অভিযান
২০১৮ সালের ১২ জানুয়ারি রাজধানীর তেজগাঁয়ের নাখাল পাড়া এলাকার ‘রুবি ভিলায়’ র‌্যাব জঙ্গি বিরোধী অভিযান চালায়। যেখানে জঙ্গিরা একটি মেসে সাধারণ মানুষদের সাথে ছদ্মবেশে অবস্থান করছিল। গভীর রাতে বাড়িটি ঘিরে ফেলে র‌্যাব।

আত্মসমর্পণের আহ্বান প্রত্যাখান করে প্রতিরোধ করে জঙ্গিরা। ঝুঁকির্পূণ এ অভিযানে দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের সঙ্গে গুলি বিনিময়ে নিহত হয় ৩ জঙ্গি। উদ্ধার করা হয় অস্ত্র ও বিস্ফোরক।

জোড়ারগঞ্জ এলাকায় অভিযান
২০১৮ সালের ০৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের মিরসরাইরে একটি জঙ্গি আস্তানায় র‌্যাবের অভিযানে ০২ জন জঙ্গি নিহত হয়। উদ্ধার করা হয় একে ২২ রাইফেলসহ অন্যান্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ।

বসিলায় অভিযান
২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল রাজধানীর বসিলায় র‌্যাবের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে ০২ জন জঙ্গি নিহত হয়।

জঙ্গিবিরোধী প্রচারণা ও সচেতনমূলক অনুষ্ঠান
সূত্র জানায়, শুধু অভিযানই নয়, এসব হেয় কর্মকান্ডের সঙ্গে যারা জড়িত এবং এর পেছনে অর্থের মদদদাতাদেরও আইনের আওতায় এনেছে র‌্যাব। পাশাপাশি জঙ্গি প্রতিরোধে বিভিন্ন ধরনের জনসচেতনতামূলক কর্মকান্ডও হাতে নেওয়া হয়।

এর মধ্যে প্রচারণা, সুধী সমাবেশের আয়োজন করে র‌্যাব। জঙ্গিবিরোধী প্রচারণায় ‘ঘৃণায় নয়, বাঁচো ভালোবাসায়’ শিরোনামে টিভিসিও নির্মাণ করা হয়েছে।

দেশজুড়ে স্থাপন করা হয় বিলবোর্ড ও স্টিকার। এছাড়া ডিজি র‌্যাব ফোর্সেসসহ অন্যন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে সভা ও সেমিনার এবং বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে টকশো এর মাধ্যমে জঙ্গিবিরোধী প্রচারণা চালিয়েছেন।

আত্মসমর্পণ ও পুনর্বাসন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সক্রিয় অংশগ্রহণে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের ব্যবস্থা করে র‌্যাব। মূলত তখন থেকেই শুরু হয় বিপথগামী জঙ্গি সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে র‌্যাবের তৎপরতা। র‌্যাবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বগুড়া, রংপুর, কুষ্টিয়াতে আত্মসমর্পন করে সাতজন বিপথগামী তরুণ। পুনর্বাসনের জন্য তাদের প্রত্যেককেই ৫ লাখ টাকা করে অনুদান দেয় র‌্যাব।

‘রিপোর্ট টু র‌্যাব’ চালু
জঙ্গিসহ অন্যান্য অপরাধবিরোধী কর্মকান্ডে জনগণকে আরও সম্পৃক্ত করতে হলি আর্টিজান হামলার ১০ দিনের মধ্যেই ‘রিপোর্ট টু র‌্যাব’ নামের একটি মোবাইল অ্যাপস চালু করা হয়।

সাইবার অপরাধ দমন
র‌্যাবের নবগঠিত ‘র‌্যাব সাইবার মনিটরিং সেল’ অনলাইনে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

কী বলছেন র‌্যাবের হাইকমান্ড?
বুধবার (০১ জুলাই) সকাল ৯টার দিকে গুলশানে হলি আর্টিসান হামলার ঘটনাস্থলে এসে ফুল দিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার।

র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দেশে জঙ্গি কার্যক্রম যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এরপরেও আমরা কিন্তু আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যে সফলতা অর্জন করেছি সেই সফলতাকে ধরে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল ইউনিট কাজ করছি।

আমরা এক ধাপ এগিয়ে আছি, জঙ্গিরা যখনই কোনো পরিকল্পনা করছে আমরা তখনই গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী কাজ করছি এবং তাদের আটক করতে সক্ষম হচ্ছি।’

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার বলেন, ‘জঙ্গি দমনের ম্যানডেট নিয়েই র‌্যাব গঠিত হয়েছে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানকে চার সময়কাল অনুসারে ভাগ করা যায়। আর তা হচ্ছে হুজি, জেএমবি, হিজবুত তাহেরি এবং বিভক্ত জেএমবি ও এবিটি/আনসার আল ইসলাম।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি জঙ্গিগোষ্ঠী দমনে র‌্যাব অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়েছে। পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা জঙ্গিবাদ দমনে বহুমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমরা আমাদের ক্রমাগত গোয়েন্দা ও অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধি করে বোরাস্ট অপারেশন পরিচালনা করছি। জনগণকে সম্পৃক্ত করে জঙ্গিবাদে অর্তভুক্তি প্রতিহত করছি। এ বিষয়ে আমরা ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছি।’

জঙ্গিদের পুনর্বাসনের কথা উল্লেখ করে কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার আরও বলেন, ‘জঙ্গিরা যাতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে আমরা সেজন্য আত্মসমর্পন ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছি। এভাবে ব্যাপক সাফল্যের মাধ্যমে দেশবাসীর অকুন্ঠ সমর্থন ও ভালোবাসা অর্জন করেছি।’

কালের আলো/এসআর/আরআর