রিজেন্টের সাহেদের সঙ্গে ছবি, মুখ খুলেছেন স্বাচিপ সভাপতি আর্সনাল
প্রকাশিতঃ 9:32 am | July 08, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. ইকবাল আর্সনাল। করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের ব্যর্থতা নিয়ে রাখঢাক না করেই কথা বলছেন।
বেসরকারি সব হাসপাতালের টালবাহানা নিয়েও তিনি সমালোচনায় মুখর।
দীর্ঘদিনের চিরায়ত প্রথা ভেঙে প্রশাসন ক্যাডারের একজন অতিরিক্ত সচিবকে দেশের কেন্দ্রীয় ঔষাধাগারের (সিএমএসডি) পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ যেমন করেছেন।
তেমনি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) পদে একইভাবে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাকে নিয়োগ তৎপরতার বিষয়টি ‘আগাম’ স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তিনিই সামনে এনেছেন।
তবে এবার ‘নেতিবাচক’ এক সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছে প্রাজ্ঞ এ চিকিৎসক নেতাকে।
ভুয়া পরীক্ষার মাধ্যমে করোনার সার্টিফিকেটসহ নানা অনিয়মে র্যাবের কঠোর অ্যাকশনের মুখে পড়া রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো.সাহেদের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি আবুল কালাম আজাদের কক্ষে ইকবাল আর্সনালসহ অন্যদের একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
এ ছবির বিষয়ে কালের আলো’র কাছে মুখ খুলেছেন করোনাভাইরাস নিয়ে জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য ও স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ইকবাল আর্সনাল।
মঙ্গলবার (০৭ জুলাই) রাত পৌনে ১২ টার দিকে মুঠোফোনে তিনি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে ভাইরাল হওয়ার ছবিটির আদ্যোপান্ত তুলে ধরেন।
ছবিটি সম্ভবত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের এমনটি জানিয়ে অধ্যাপক ডা: ইকবাল আর্সনাল বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে রিজেন্ট হাসপাতালের কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার চুক্তির প্রায় ৫ থেকে ৭ দিন পর ডিজি আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন মো.সাহেদ। ওই সময় আমি এবং জামাল চৌধুরী ওই কক্ষে বসা ছিলাম।
ডিজি এবং সাহেদ হাসপাতালের ব্যাপারে কথা বলেছেন। ওই সময় আমি ল্যাবরেটরী এক্সপেনশনের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে সব রকমের সহযোগিতা করে আসছিলাম। ফলে ওই সময় নিয়মিতই আমাকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যেতে হতো।’
‘করোনা টেস্টের জন্য ল্যাবরেটরীর সংখ্যা বাড়ানোর দাবি উঠেছিল। আমি ল্যাবরেটরী বেশ ভালো বুঝি’ বলছিলেন ইকবাল আর্সনাল। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ল্যাবরেটরীর বিষয়ে আমার কাছে সহযোগিতা চায়।
আমি তাদের ল্যাবরেটরী সেটআপের বিষয়ে যাবতীয় সহযোগিতা করেছি। ল্যাবরেটরী তৈরির কাজ শেষ। এরপর আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আমি যাইনি।’
তিনি বলেন, ‘সেদিন রিজেন্টের চেয়ারম্যান মো.সাহেদ হাসপাতাল, হোটেলসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ডিজি’র সঙ্গে কথা বলেন। আমরা আগে থেকেই নিজেদের কাজে ডিজি’র সামনে বসা ছিলাম।
আমার সঙ্গে রিজেন্টের মালিকের ব্যক্তিগত কোন আলাপ হয়নি। তার সঙ্গে আমার কোন সখ্যতাও নেই।’
অনির্ধারিত দেখা-সাক্ষাতের এ ছবিটি ছড়িয়ে পড়ায় আপনি ক্ষুব্ধ কীনা এমন প্রশ্নের জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠনের এ শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমার কোন ক্ষোভ নেই।
দিনশেষে জানি আমি কী? আমাকে যারা চিনেন তারাও আমার সম্পর্কে জানেন। এসব ছবি নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা নেই।’
সূত্র মতে, দেশে করোনা সংক্রণের পর থেকেই নানা কারণেই আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি আবুল কালাম আজাদ। জেকেজি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতি ও অনিয়মের পর একই রকম অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র্যাব।
র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমও অভিযানকালেই বলেছেন, ‘রিজেন্ট হাসপাতালের লাইসেন্স ২০১৪ সালে শেষ হয়ে গেছে। এরপর আর লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। কীভাবে সরকার এমন একটি হাসপাতালের সঙ্গে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা চুক্তিতে গেল, তার খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’
একই সূত্র জানায়, রিজেন্টের মো.সাহেদের সঙ্গে দহরম সম্পর্ক ছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজির। মন্ত্রীর সঙ্গেও সম্পর্কের খবরও চাউর হয়ে উঠেছে।
রিজেন্টের প্রতারণা সামনে আসার সপ্তাহ কয়েক আগে জেকেজি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও পরীক্ষা না করে করোনা সার্টিফিকেট দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম কর্নধার আরিফুল চৌধুরীকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
তবে তাঁর স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জেকেজির কার্যক্রম দেখতে গেছেন, সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল মুখে সাবরিনা আরিফ চৌধুরী এমন একটি ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে চরম অস্বস্তিতে পড়েন স্বাস্থ্যের ডিজি।
কালের আলো/এমএইচ/এএ