মন্ত্রীর অনুরোধেই চুক্তির ফটোসেশনে সচিব হেলালুদ্দীন ও মোস্তফা কামাল!

প্রকাশিতঃ 9:54 pm | July 14, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির আন্ত:মন্ত্রণালয়ের একটি বৈঠক ছিল সেদিন। বৈঠক শেষে ওয়াশরুম ব্যবহারের জন্যই রাজধানীর মহাখালীতে সেই বৈঠক শেষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) কক্ষে গিয়েছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ও জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন। ঘটনাটি গত ২১ মার্চের।

কিন্তু ওয়াশরুমে থেকে বের হয়েই তারা দেখেন সোফায় বসে আছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। পরে মন্ত্রীর অনুরোধেই তারা চা-নাশতা খান। এরপর কক্ষ থেকে বের হয়ে বিদায় নেওয়ার সময় মন্ত্রী তাদের অনুরোধ করেন রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ফটোসেশনে অংশগ্রহণ করার জন্য।

কাকতালীয় সেই ফটোসেশনে অংশগ্রহণই যেন এখন রীতিমতো ‘কাল’ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রশাসন ক্যাডারে দক্ষ ও পরিশ্রমী হিসেবেই স্বনামে খ্যাত দু’সচিবের জন্য। চুক্তি স্বাক্ষরের সেই ছবিটিই এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হচ্ছে।

ছবিতে দেখা গেছে, সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করছেন রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম। তাঁর পাশে বসা স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ।

পেছনে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখা যায় সাবেক স্বাস্থ্যসচিব আসাদুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ও জননিরাপত্তা সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিনকে।

আরও জানা গেছে, অনেকেই বুঝে না বুঝে রিজেন্ট কেলেঙ্কারীর সঙ্গে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ দু’মন্ত্রণালয়ের সচিবকে জড়ানোর চেষ্টা করছেন। পুরো বিষয়টি তাদের জন্য চরম বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করছে। সামাজিকভাবেও তাদের হেয় করা হচ্ছে।

ইতোমধ্যেই এ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ও জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ কথা বলেন কালের আলো’র সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে করোনাসংক্রান্ত আন্ত:মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর মন্ত্রী মহোদয়ের অনুরোধেই ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। এর আগে মো.সাহেদকে কখনও দেখিনি বা ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সঙ্গে আমার কোন পরিচয়ও নেই।’

একই ব্যাপারে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীনও। তিনি বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আন্ত:মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর মন্ত্রী আমাদের চা খাওয়ালেন। এরপর বললেন, ‘আপনারা যেহেতু উপস্থিত আছেন, আপনারাও দাঁড়ান।’

সূত্র মতে, সব দলের অংশগ্রহণে রক্তপাতহীন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সামগ্রিক দায়িত্ব পালন করে দেশজুড়েই প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।

ওই সময় তিনি নির্বাচন কমিশনের সচিব ছিলেন। বরাবরই বিএনপি-জামায়াতের অপরাজনীতির টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। স্বাধীনতা বিরোধী চক্রই এখন কাকতালীয় ফটোসেশনে অংশ নেওয়া ছবিটি নিয়েই ‘খিস্তিখেউর’ করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

একইভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীনও দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দক্ষ হাতেই সামাল দিচ্ছেন। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে সুচারুরূপে কাজ করে যাচ্ছেন।

ফলশ্রুতিতে তাকে হেনস্থা করতেও নানামুখী অপকৌশল চালিয়ে যাচ্ছে চিহ্নিত একটি চক্র।

প্রসঙ্গত, রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুরের শাখাকে নানা অনিয়মের অভিযোগে সিলগালা করে দিয়েছে র‌্যাব। নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা না করেই ভূয়া সার্টিফিকেট দিতো এ হাসপাতালটি। এ ঘটনায় হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এ ঘটনায় অপকর্মের মূল হোতা সাহেদকে গ্রেফতারে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে র‌্যাব।

এদিকে, গত শনিবার (১১ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে।

পরদিন মন্ত্রণালয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়ে এর ব্যাখ্যা চায়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তা জানতে চেয়েছে মন্ত্রণালয়। এ ঘটনায় মন্ত্রণালয় বনাম অধিদপ্তরের মুখোমুখি অবস্থান স্পষ্ট হচ্ছে। যদিও স্বাস্থ্য মন্ত্রী দাবি করেছেন, অধিদপ্তরের সঙ্গে তাদের কোন সমস্যা নেই।

এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি’র কক্ষে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো.সাহেদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. ইকবাল আর্সনাল ও মহাসচিব ডা: এম.এ.আজিজের একটি ছবি ভাইরাল হয়।

এ বিষয়ে স্বাচিপ সভাপতি ডা.ইকবাল আর্সনাল কালের আলোকে জানিয়েছিলেন, ‘সেদিন রিজেন্টের চেয়ারম্যান মো.সাহেদ হাসপাতাল, হোটেলসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ডিজি’র সঙ্গে তার কক্ষে কথা বলেন। আমরা আগে থেকেই নিজেদের কাজে ডিজি’র সামনে বসা ছিলাম। আমার সঙ্গে রিজেন্টের মালিকের ব্যক্তিগত কোন আলাপ হয়নি। তার সঙ্গে আমার কোন সখ্যতাও নেই।’

কালের আলো/এসআর/আরআর