‘নায়ক’ থেকে ঘৃণ্য ‘খলনায়ক’ চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর ‘চিত্রনাট্য’
প্রকাশিতঃ 8:51 am | July 19, 2020
মাহাবুব আলম, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, কালের আলো :
চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে অনেকের মতো আমিও চিনেছি সাভারের রানা প্লাজা ধ্বসের পর উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি হিসেবেই।
আরও পড়ুন: সেনানিবাসে ‘অবাঞ্চিত’ হওয়ার ‘তথ্য গোপন’; নাটকের অবতারণা চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী’র!
সেই সময় অলৌকিকভাবে ‘রেশমা’ নামের এক পোশাককর্মীকে ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৭ দিন পর জীবিত উদ্ধারের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলেন।
বেশ বাহ্বাও পেয়েছিলেন। আমি তখন একটি অনলাইন নিউজপোর্টালে কাজ করি। প্রশ্নাতীত সততা আর শুদ্ধতার বয়ান দেওয়া ওই সেনা কর্মকর্তার ধুরন্ধর মস্তিষ্কের তেলেসমাতি ধরতে অবশ্য সময় লাগেনি খুব বেশি।
আরও পড়ুন: র্যাবকে জড়িয়ে হাসান সারওয়ার্দী চক্রের ‘অপপ্রচার’, নেতৃত্বে ড.কামালের জামাতা!
রেশমা ইস্যুতে ওই সময় সরকারকে চরমভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে। এসব পুরনো ধারাপাত।
রানা প্লাজা কাহিনীতে বারবার নিজেকে ‘নায়ক’ ভেবে আসছিলেন চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী। তবে চরম নাটকীয়তায় ভরপুর জীবনে সম্ভবত ‘মুন্নি বদনাম’ এর উদ্দামতায় খেঁই হারিয়ে ফেলেন!
রোমান্সের পাশাপাশি রগরগে যৌনতায় খাবি খেতে শুরু করেন। এসব অঘটনের জেরে প্রথম স্ত্রী ফারজানা নিগারের সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদ।
আরও পড়ুন: এবার নিজেই ‘ফাউল’ খেলছেন সেই চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী!
এরপর সেনা পোশাক পড়ে ঘটা করে ধুমধামের সঙ্গে এমন একজনের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধলেন তাঁর অতীত নিয়েও মুখরোচক আলোচনার কমতি নেই মোটেও। তার ছিল একাধিক স্বামী, অর্থাৎ বহু ঘাট পেরিয়ে এসেছেন!
অত:পর উত্তম সূচিত্রার প্লেটোনিক প্রেম আর আবেগের তরীর পরিবর্তে তাদের ধামাকা প্রেমময় চলচ্চিত্র সবার সামনে উদ্ভাসিত হলো বলিউডের প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বা উর্বশীর খোলামেলা পোশাকের মতোই।
আরও পড়ুন: সিনহার টোপেই ‘ফ্রন্টলাইনে’ সারওয়ার্দী, ভেস্তে গেছে সরকার উৎখাত ষড়যন্ত্রের ‘ছক’!
ওই নারীর আগে-পরে আরও অনেক রমণীর উষ্ণ সান্নিধ্যে নিজেকে ঝালিয়ে নিয়েছেন সারওয়ার্দী। নষ্ট প্রেমের হাতছানিতে জলাঞ্জলি দিয়েছেন নিজের উজ্জ্বল ক্যারিয়ার! এ নেশাটাই তাঁর দুর্ভাগ্য ডেকে এনেছে। খাদের কিনারায় নিয়ে গেছে নিজেকে।
উর্ধ্বতন সাবেক সেনা কর্মকর্তা হয়েও নিজ চরিত্রে কলঙ্ক কালিমা লেপ্টে দিয়েছে পিএনজি অর্থাৎ, দেশের প্রতিটি সেনানিবাসে ‘অবাঞ্চিত’ হওয়ার বিষয়টি। নিজ জীবনের নারীপ্রীতি সিনেমার পান্ডুলিপিতে কখন যেন ‘খলনায়ক’ বনে গেছেন।
কিন্তু নিজের জন্য চরম লজ্জার কারণেই কীনা এ সত্যকেই মিথ্যার আবরণে মাটিচাপা দিয়েছেন। বর্তমান বা অবসরপ্রাপ্ত সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের মাঝেও মি: সারওয়ার্দীর ‘নারীখেকো’ এমন মানসিকতার ব্যাপারটি একেবারেই ‘ওপেন সিক্রেট’।
বহু বিয়ের পিড়িতে বসা এক উপস্থাপিকাকে বিয়ের পর লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গিয়েছিলেন বহুমাত্রিক চরিত্রের রহস্যময় এ মানুষ। সেজেছিলেন অদৃশ্য মানব!
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক টাকার নেশা আবারও ব্যাকুল করে তুলেছে তাকে। ফলে নির্জলা মিথ্যাচারকেই এখন নিজের হাতিয়ার করেছেন।
বিকৃতি ও মিথ্যাচারের বদৌলতে নিজেকে বড় করে উপস্থাপনের সারওয়ার্দীর কথিত সেই টকশোটি আমি নিজেও গভীর মনোযোগ দিয়েই দেখিছি।
ফলে সাম্প্রতিক সময়ে সমালোচিত-বিতর্কিত অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মি: সারওয়ার্দীর জীবনের পড়ন্ত বেলায় পাকিস্তানি ধারার রাজনীতির খোয়াবের বিষয়টি অন্যান্যদের মতোন আমারও নজরে এসেছে।
কার ইশারা বা সংকেতে ষড়যন্ত্রের পথে পা বাড়িয়েছেন এবং এর নেপথ্যে কোন ধরণের সুযোগ-সুবিধা তিনি পেয়েছেন এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে ৬২ মিনিটের সেই কথপোকথনে কান পাতলেই হবে।
শুরু থেকেই শেষ পর্যন্ত হাসান সারওয়ার্দী রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার পলাতক আসামির উপস্থাপনায় কথিত অনলাইন টকশোতে সরকার ও সেনাবাহিনীকে নিয়ে চরম অপপ্রচার ও মিথ্যাচারের তুবড়ি ছুটিয়েছেন।
মিথ্যা বানোয়াট গালগপ্পের মাধ্যমে চরম বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়ার নীতি গ্রহণ করে উল্টো এখন নিজেই সাইজ হচ্ছেন! দেশপ্রেমিক বাহিনীকে নিয়ে চরম মিথ্যাচারের আশ্রয় নেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে তুলোধুনো করছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তারা।
পুরো কথিত টকশোজুড়েই সারওয়ার্দী প্রধানমন্ত্রী, সেনাবাহিনী, সেনাপ্রধান ও গোয়েন্দা সংস্থা, আইন-আদালত নিয়ে চরম বিষোদাগার করেছেন।
তাকে ক্যান্টনমেন্টে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না, সিএমএইচে চিকিৎসা নিতে দেওয়া হচ্ছে না এমন সব কথাবার্তা বললেও বেমালুম চেপে গেছেন তাকে আরও দেড় বছর আগেই এসব স্থানে ‘অবাঞ্চিত’ করার বিষয়টি।
উর্ধ্বতন সাবেক একজন সেনা কর্মকর্তা হিসেবে তিনি জানেন, অবাঞ্চিত কোন ব্যক্তি ক্যান্টনমেন্টে প্রবেশ করতে পারবেন না। প্রবেশ করতে চাইলে দায়িত্বরত এমপি তাকে ঘাড় ধাক্কা দেবেন!
নিজের ‘অবাঞ্চিত’ হওয়ার বিষয়টি জনসম্মুখে প্রকাশ করলে তাঁর নারী লোভী মানসিকতা বা ব্যক্তি চরিত্রের চরম অধ:পতনের ব্যাপারটিও পরিস্কার হয়ে যাবে এমন শঙ্কা থেকেই আবোল-তাবোল বকছেন!
নিজের মনগড়া ক্যামেরা, লাইট, অ্যাকশনের মাধ্যমে বিদেশীদের নজর কেড়ে বাদ বাকী জীবনটি আরাম-আয়েশে বিদেশে কাটিয়ে দিতেই গরম কথাবার্তায় হইচই ফেলে দিতে চাচ্ছেন। কিন্তু এসব গল্পের প্লট সাজাতে গিয়েই থলের বিড়াল বের করেছেন নিজেই।
এসব বিষয়ে কালের আলোর একাধিক প্রতিবেদনে বিস্তারিত সব তথ্য উঠে এসেছে। হালের জনপ্রিয়
এই গণমাধ্যম সাবেক সেনা কর্মকর্তা চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর ভন্ডামির ‘মুখোশ’ খুলে দিয়েছে।
তবে তাঁর শত মিথ্যার উচ্চারণ কোন কোন ক্ষেত্রে আবার স্ববিরোধীতায় ভরপুর।
যেমন : মি: সারওয়ার্দীকে যখন উপস্থাপক রেশমার বিষয়ে প্রশ্ন করেন তখন প্রথমেই তিনি বলেন, ‘আমি এ প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।’ আবার মনের মাধুরী মিশিয়ে অনেক গল্পের অবতারণা করেন।
ওই সময় রেশমার লেখা দরখাস্তের খাতাও তিনি সেখানে প্রদর্শন করেন। নিজেই বলছেন, প্রস্তুত নন আবার রেশমার চিঠিও নিজের সামনেই রেখেছেন।
আদতে চিত্রনাট্যের মাধ্যমে অসত্যকে সত্য বলে চালিয়ে দেওয়ার প্রবণতায় যেন একেবারেই প্রাজ্ঞ এই সারওয়ার্দী!
রানা প্লাজা ধ্বসের রেশমা ইস্যুর বিষয়ে আগে ‘নাটক’ শব্দটি মানতে না চাইলেও অবসরে গিয়ে এখন ‘নাটক’ ‘নাটক’ বলেই গলাবাজি করছেন। একবার তিনি বললেন, মসজিদে নামাজ শেষে তিনি শুয়ে পড়েন। হঠাৎ অসুস্থতা অনুভব করেন, এমন কথাবার্তা।
আবার প্রধানমন্ত্রীর ফোনে মাত্র আধা ঘন্টার মধ্যেই তিনি না কী ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান? সেনাপ্রধান হতে না পারার অপ্রাপ্তির মনোকষ্ট থেকেই যে পাগলের মতোন প্রলাপ বকছেন হাসান সারওয়ার্দী।
ষড়যন্ত্রের খলনায়কের মতোন লোভের লকলকে ফণা বের করছেন প্রকাশ্যে।
লাজ লজ্জাহীন বেহায়া লোভীদের মতোন দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারী চক্রের সঙ্গে গোপন সমঝোতায় পৌঁছেছেন বলেই কীনা প্রবল ঘৃণায় সাবেক দেশপ্রেমিক সামরিক কর্মকর্তারাই তাকে বলছেন, ‘তুমি লোভের চোরাবালিতে হারিয়ে যাওয়া সেই জেনারেল সারওয়ার্দী!
এতো মিথ্যাচারের পর আর কবে আত্মগ্লানি অনুশোচনা হবে তোমার?’
কালের আলো/এমএ/এমএইচ