পুলিশ সদস্যদের সাফল্যের শিখরে পৌঁছার ‘মন্ত্র’ শেখালেন আইজিপি

প্রকাশিতঃ 7:08 pm | July 26, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:

পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা, শৃঙ্খলাবোধ, সততা এবং নৈতিকতা- এই শব্দগুলোতেই বেশি জোর দিলেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার)। পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা আর কঠোর পরিশ্রমের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে সাফল্যের মন্ত্র।

এসবের যুগপৎ সম্মিলনে অনায়েসেই পৌঁছে যাওয়া যায় সাফল্যের স্বর্ণশিখরে-জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন হাইতিগামী পুলিশ সদস্যদের প্রি-ডেপ্লয়মেন্ট ব্রিফিংয়ে যেন এমন বার্তাই দিলেন পুলিশ প্রধান।

তিনি স্মরণ করিয়ে দিলেন, সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বিশ্ব পরিমন্ডলেও দেশের গৌরব ও মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে প্রতিটি পুলিশ সদস্যকে সহায়ক ও কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে।

কোন অবস্থাতেই দেশের মর্যাদাহানি ঘটে এমন কাজ থেকে বিরত থাকারও কঠোর নির্দেশ দেন পুলিশ মহাপরিদর্শক।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই) সকালে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সম্মেলন কক্ষে ব্রিফিংকালে আইজিপি বলেন, পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার জন্য শান্তিরক্ষা মিশনগামী পুলিশ দস্যদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা’র কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৈশ্বিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের মর্যাদা ও গৌরব অক্ষুন্ন রাখার জন্য পুলিশ সদস্যদেরকে দায়িত্ব পালনে অত্যন্ত নিষ্ঠাবান থাকতে হবে। দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে। কোন অবস্থাতেই দেশের মর্যাদা হানিকর কাজ করা যাবে না।

শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে শৃঙ্খলাবোধ ও নৈতিকতাকেই সঙ্গী করতে হবে এমনটি জানিয়ে আইজিপি বলেন, কোনভাবেই শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা যাবে না। জাতিসংঘের ম্যান্ডেট অনুযায়ী মিশন এলাকার জনগণের সামাজিক মূল্যবোধ, জীবনাচার এবং সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের প্রতি সম্মান জানাতে হবে।’

একই সঙ্গে পারস্পরিক সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ব এবং সহমর্মিতা বজায় রেখে দায়িত্ব পালনের জন্যও পুলিশ সদস্যদেরকে নির্দেশ প্রদান করেন পুলিশ প্রধান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৮৯ সালে নামিবিয়া মিশনের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের পদযাত্রা সূচিত হয়। বাংলাদেশ পুলিশ গত প্রায় ৩০ বছর ধরে বিশ্বের যুদ্ধবিধ্বস্ত ও সংঘাতপূর্ণ বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত সুনাম ও পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করছে।

বাংলাদেশ পুলিশের ১৮ হাজার ১০২ জন সদস্য ইতোমধ্যে শান্তিরক্ষা মিশন শেষ করেছেন। মিশনে দায়িত্ব পালনকালে এ পর্যন্ত ২০ জন নির্ভীক পুলিশ সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।

‘বাংলাদেশ পুলিশ একটি পরিবার’
আইজিপি ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী দেশপ্রেমিক পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে এক সুতোয় গাঁথতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সেই কথাই উচ্চারণ করে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ লাইন্স সিভিক সেন্টারে বিশেষ কল্যাণ ও আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ হচ্ছে একটি পরিবার। এই পরিবারের সকল পুলিশ সদস্যকে একে অপরের বিপদে পাশে দাঁড়াতে হবে।

তিনি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সহ সকল কর্মকর্তাকে নিজ নিজ এলাকার পুলিশ সদস্যদের সব ধরণের যৌক্তিক সমস্যা সমাধানে আইনগত সহায়তা প্রদানেও আন্তরিক হওয়ার নির্দেশ দেন।

বাংলাদেশ পুলিশ শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে কখনো আপোস করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবেনা এমনটি জানিয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, ‘যে কোন ধরণের অনিয়ম থেকে বিরত থাকতে সকলকে কঠোর থাকতে হবে।

একগুচ্ছ সুসংবাদ দিলেন আইজিপি
পুলিশ বাহিনীকে এগিয়ে নিতে সরকারের নানামুখী তৎপরতা ও আন্তরিকতার কথাও গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেন আইজিপি। একগুচ্ছ সুসংবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যদের ঝুঁকি ভাতা প্রদানে সরকার আন্তরিক রয়েছে। উপ-পরিদর্শক (এসআই) পর্যন্ত ঝুঁকি ভাতা ইতোমধ্যে মঞ্জুর হয়েছে।

খুব শিগগিরই পুলিশ পরিদর্শক থেকে ওপরের অফিসারদেরও ঝুঁকি ভাতা প্রদানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে পুলিশ সদস্যদের বেতন থেকে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে কর্তণের প্রক্রিয়া যথাসম্ভব হ্রাস করা হয়েছে। কল্যাণ ফান্ড থেকে পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ যোগান দেয়া হচ্ছে।

দায়িত্ব কর্তব্য পালন করতে গিয়ে নিহত পুলিশ সদস্যদের নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সে প্রেরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ প্রয়োজনে মৃতদেহ সংরক্ষণ করার জন্য মরচুয়ারী স্থাপন করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের মেধাবী সন্তানদের উৎসাহিত করার জন্য মেধাবৃত্তি চালু করা হয়েছে।

অবসরকালিন রেশন প্রদানের বিষয়টি সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে। ডিউটি’র জন্য বিভিন্ন যানবাহন ও মোটরসাইকেল বরাদ্দ করার বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সুপার নিউমারারী পদে পুলিশ কর্মকতা’দের পদায়ন করার বিষয়টি সরকারের নজরে আনা হয়েছে। সকল র‌্যাংক হতে পদোন্নতি প্রাপ্তির প্রক্রিয়া যুগোপযোগী ও সহজতর করা হয়েছে’ বলেন আইজিপি।

কালের আলো/ওএইচ/এএ

** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে কালের আলো’র ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: KalerAlo/Facebook