স্বাস্থ্যের ডিজির দু:খ প্রকাশ; গণমাধ্যমের প্রতি ইতিবাচক মনোভাবেরই বহি:প্রকাশ

প্রকাশিতঃ 11:26 am | August 25, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

পাঁচ বছর ধরে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। এ নিয়ে অনেক জল ঘোলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ভগ্ন স্বাস্থ্যখাতকে টেনে তোলছেন, চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগোচ্ছেন স্বাস্থ্যের ডিজি খুরশীদ

কিন্তু নিজেদের নেতিবাচক সিদ্ধান্ত থেকে কখনও সরে আসেনি সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

অবশ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা.আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম রামেক হাসপাতাল পরিদর্শনে আসার পর এ বিষয়টি অবগত হয়েছেন।  

ক্ষোভের অনলে পুড়তে থাকা স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের ‘পালস’ বুঝেই সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) কেবল সতর্কই করেননি।

একই সঙ্গে সরকারের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন তুলে ধরতে গণমাধ্যমের অপরিহার্যতার বিষয়টিও তিনি মোটা দাগেই উপস্থাপন করেছেন।

শক্তিশালী গণমাধ্যমকে দূরে রেখে কোন কাজ বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খোলনলচে পাল্টে দেওয়ার মিশনে নেতৃত্ব দেওয়া অধ্যাপক ডা.আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

এ ঘটনায় স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে আলাপে তিনি দু:খ প্রকাশ করেছেন এবং ক্ষমাও চেয়েছেন।

সরকারকে উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে গণমাধ্যম সব সময় সহায়ক ভূমিকা পালন করে এ বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি এ বি এম খুরশীদ আলম অনুধাবন করেছেন।

মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যমের পক্ষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) কঠোর অবস্থান ও সময়োপযোগী বক্তব্যকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবেই দেখছেন স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী ও সাংবাদিক নেতারা।

তারা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) এমন দু:খ প্রকাশ প্রকারান্তরে দেশের স্বাধীন ও শক্তিশালী গণমাধ্যমের প্রতি তাঁর ইতিবাচক মনোভাবেরই বহি:প্রকাশ। বিষয়টি নি:সন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।

জানা যায়, করোনাকালীন সময়ে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের জেরে চরমভাবে বিতর্কিত হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আগের ডিজি ডা.আবুল কালাম আজাদ এ বিতর্কের জেরেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়েই তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম।

সৎ ও দক্ষ এ চিকিৎসককেই করোনা মহামারি সামাল দিতে বেছে নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সূত্র মতে, করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ শুরু করা এ মহাপরিচালক চলমান মহামারিতে সাংবাদিকদের ‘ইতিবাচক মনোভাব’ নিয়ে সরকারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।  

প্রায় এক মাস আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের চেয়ারে বসার আগেই শনিবার (২৫ জুলাই) রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে আলাপে এমন আহ্বানই জানিয়েছিলেন অধিদপ্তরের এ নতুন ডিজি।  

সেদিন তিনি গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, ‘সরকারের সমালোচনা অবশ্যই করবেন, ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেবেন। পাশাপাশি আমি বলবো, আমরা যদি কোন ভালো কাজ করি সেটাও গণমাধ্যমে তুলে আনবেন।’

গণমাধ্যমের সহযোগিতামূলক মনোভাবের প্রত্যাশী এ মহাপরিচালক নিজের প্রথম দিনের বক্তব্যেই গণতন্ত্র, সুশাসন ও উন্নয়নের সঙ্গে গণমাধ্যমের নিবিড় সম্পর্কের বিষয়টিই সামনে এনেছিলেন।

পরবর্তী সময়েও তিনি নিজের এই ‘মিডিয়া বান্ধব’ নীতির ধারাবাহিকতাও বজায় রেখেছেন।

সূত্র মতে, চলমান করোনা মহামারি সামাল দিতে অতীতের কর্মপরিকল্পনা ও চিকিৎসা পদ্ধতি পরিবর্তন করতেই একাধিক বাস্তবধর্মী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ নতুন মহাপরিচালক।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ থেকে বেরিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরকারি হাসপাতালসমূহে করোনা চিকিৎসা কেমন চলছে, এ বিষয়টি নিজের চোখে দেখতেই এসব হাসপাতাল পরিদর্শন ও দায়িত্বশীলদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছেন।  

সূত্র মতে, নিজের এ ‘রুটিন ওয়ার্ক’র অংশ হিসেবেই রোববার (২৩ আগস্ট) রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা.আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: গোপেন্দ্র নাথ আচার্য্য কালের আলোকে বলেন, ‘একই দিনে ডিজি মহোদয় রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পুটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও তারাপুর কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শন করেন।

এ সময় তিনি স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের নিজ নিজ দায়িত্ব সুচারূভাবে পালনের নির্দেশ প্রদান করেন।’

জানা যায়, স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে আলাপে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক করোনা চিকিৎসায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, ‘রামেক হাসপাতাল করোনা রোগের চিকিৎসায় ভালো কাজ করছে।

ঢাকার অনেক হাসপাতালের চেয়ে এখানকার ব্যবস্থাপনা ভালো। অন্যান্য রোগের চিকিৎসা এবং অপারেশন আগের চেয়ে একটু কমলেও বেশ ভালো হচ্ছে।’

স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে (ডিজি) কাছে পেয়ে গণমাধ্যমের প্রতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নেতিবাচক অবস্থানের বিষয়টি তাঁর সামনে তুলে ধরেন।  

এ ঘটনায় বিস্মিত ও হতবাক হয়ে ডিজি খুরশীদ আলম দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘রামেক হাসপাতালে গত পাঁচ বছর ধরে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হয় না।

এ অভিযোগ শুনলাম। এজন্য যদি আমরা দায়ী হয়ে থাকি- তাহলে আপনাদের (সাংবাদিকদের) কাছে আমি দু:খিত ও ক্ষমা চাই।’

তিনি বলেন, ‘মিডিয়াকে দূরে রেখে কোনো কাজ সম্পন্ন করা যাবে না। এখন দেশের মিডিয়া অনেক শক্তিশালী। সাংবাদিকরা সরকারের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন তুলে না ধরলে জনগণ জানবে না। আমরা যতই তুলে ধরি না কেন, তা জনগণ বিশ্বাস করবে না।

আমি রামেক হাসপাতালের পরিচালককে অনুরোধ করবো, আপনি মিডিয়ার সঙ্গে থাকেন। তাদের কাজ করতে সহযোগিতা করেন। আপনাকে অনুরোধ করে গেলাম, পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।’

দেশের স্বাস্থ্যখাতের অভিভাবক সংস্থার প্রধানের এমন বক্তব্যে আশান্বিত হয়েছেন রাজশাহীর বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি ও স্থানীয় সাংবাদিক নেতারা।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) নির্দেশনার পরও সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখনও প্রয়োজনীয় কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী ও সাংবাদিক নেতারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ২৪ ঘন্টার জনপ্রিয় নিউজ চ্যানেল ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক মাইনুল হাসান জনি কালের আলোকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বক্তব্যে আমরা আশাবাদী হয়েছি।

আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিবে। তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।’  

একই বিষয়ে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক যুগান্তরের ব্যুরো প্রধান তানজিমুল হক কালের আলোকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান ব্যক্তি রামেক হাসপাতাল পরিচালককে মিডিয়ার সঙ্গে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

আমরা দেখেছি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজির বক্তব্য অবশ্যই ইতিবাচক। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিরাজমান এ সমস্যা সমাধানে এখনও কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।’

কালের আলো/আরআই/এমকে