বাংলাদেশেই তৈরি হয় বিশ্বের সবচেয়ে দামি আতর

প্রকাশিতঃ 5:31 pm | August 29, 2020

ফিচার ডেস্ক, কালের আলো:

সুগন্ধি আভিজাত্যের প্রতীক। সুরুচি ব্যক্তিত্ব প্রকাশের অন্যতম উপাদানও এটি। বিশ্বের সব মানুষ সুগন্ধির ভক্ত। পুরো বিশ্বজুড়ে গোলাপ ফুলসহ নানা বস্তু থেকে উৎপন্ন হয় সুগন্ধি। তবে উৎপাদিত সব সুগন্ধিকে ছাড়িয়ে বিশ্ব বাজারে মহামূল্যবান বাংলাদেশে উৎপাদিত আগর গাছের আতর। যার চড়া মূল্য শুনলে আগর গাছ চাষ বা ব্যবসায় জড়ানোর আকাঙ্ক্ষা সামলানো যেকোনো বুদ্ধিমান লোকের জন্য কষ্টকর। আগর গাছ থেকে আতর তথা সুগন্ধি উৎপাদন প্রক্রিয়া যথেষ্ট সহজ। আর মুনাফা শুনলে তো চোখ কপালে উঠবেই।

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত মৌলভীবাজারের বড়লেখার সুজানগর গ্রামে আগর গাছ থেকে উৎপন্ন হয় বিশ্বের সবচেয়ে দামি আতর তথা সুগন্ধি। আগর গাছের শুষ্ক কাঠ থেকে তৈরি হয় লাখ লাখ টাকার আতর। সুজানগরের সব মানুষ আতর শিল্পের সঙ্গে জড়িত। ওই গ্রামের আঙ্গিনা থেকে শুরু করে সব জায়গা রয়েছে সারি সারি আতর গাছ।

আতরের কাঁচামাল হিসেবে আগর গাছের কাণ্ড, ডাল, পাতা সরাসরি ব্যবহৃত হয় না। তবে আগর গাছের পচা অংশ থেকেই উৎপন্ন হয় উৎকৃষ্টমানের আতর।

যেভাবে আগর থেকে তৈরি হয় আতর

আগর গাছ রোপনের ছয় থেকে সাত বছর পর আতর উৎপাদন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রথমে পুরো গাছে এক ইঞ্চি ফাঁক রেখে লোহার পেরেক মারা হয়। গাছ থেকে কষ বের হয়ে পেরেকের গোড়ায় জমাট বাঁধে। সেই কষে ছত্রাক আক্রান্ত হয়ে কালো রঙ ধারণ করে। এভাবেই পাঁচ থেকে সাত বছর রাখার পর গাছ কেটে কান্ডকে ফালি করে পেরেক খোলা হয়।

পেরেক খোলার পর আতর গাছের কাঠে দুটি রঙ দেখা যাবে। কাঠে সাদা ও কালো রঙ মিলবে। কালো রঙের অংশ দিয়ে উৎপন্ন হয় উৎকৃষ্টমানের আতর বা সুগন্ধি। আর সাদা অংশ দিয়ে তৈরি হয় সাধারণ মানের আতর।

এক থেকে দেড় মাস ড্রামের পানিতে আগর গাছের চিপের কালো বা সাদা অংশ ভিজিয়ে রাখতে হয়। এক মাসের অধিক সময় আগরের পাতলা চিপগুলো ড্রামের ভিজিয়ে রাখা হয়। পরে পাত্রতে ঢেলে টানা দশদিন জ্বাল দিতে হয়। জ্বালের ফলে পাত্রের সামনে থাকা ছোট পাত্রে বাষ্প হয়ে আতর জমা হয়। পরে হাত দিয়ে আতর কাঁচের পাত্রে রাখা হয়। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর সংগ্রহ করা আতর হয় অতুলনীয়।

যেসব দেশে আগর আতরের বেশি কদর

বলা হয়, জান্নাতে উদ বা আগর কাঠ প্রজ্জ্বলন করে সুগন্ধি ধোঁয়া উৎপন্ন করা হবে। তাই মুসলিম বিশ্বে আগর গাছের কাঠ থেকে তৈরি আতরের কদর সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, কাতার, ওমান, আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশের লোকেরা আগর আতর বেশি ব্যবহার করে থাকে। তাই বাংলাদেশের আগর আতর সবচেয়ে বেশি রফতানি হয় মধ্যপ্রাচ্যে। মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ আতর রফতানি হয়।

আগর গাছের কাঠ বা আতরের মূল্য

আগর গাছের কাঠ বা আতরের মূল্য চোখ কপালে উঠার মতো। প্রতি লিটার ‘আগর আতরে’র দাম চার থেকে ১২ লাখ টাকা। স্থানীয়রা জানান, তোলা প্রতি আগর আতরের দাম ৩৩ হাজার টাকা।

আতরের পাশাপাশি আগর গাছের ব্যবহৃত চিপগুলোও মহামূল্যবান। চিপগুলো সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যে রফতানি হয়। প্রতি কেজি আগর গাছের চিপ দুই লাখ টাকায় বিক্রি হয়। মধ্যপ্রাচ্যে আতর কাঠ জ্বালিয়ে সুগন্ধি উৎপন্ন করা হয়।

কালের আলো/একে/ওএইচ